আগ্রাবাদ এক্সেস রোড থেকে মহেশখাল দুর্ভোগ-দুর্দশা
জুবায়ের সিদ্দিকী-
আগ্রাবাদ এক্সেস রোড গোট হালিশহরের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার এক সেতুবন্ধন রচনা করেছে। অপরদিকে এ সংযোগ সড়ক ও মহেশখাল দুর্ভোগ দুর্দশার অন্যতম কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগ্রাবাদ এক্সেস রোডে বছরের বর্ষাকালজুড়ে থাকে হাটু থেকে কোমর সমান পানি। রোড়ের দুই পাশের ঘনবসতিপুর্ন এলাকা বেপারী পাড়া, ছোটপুল, সিডিএ আবাসিক এলাকা ও শান্তিভাগের মানুষ অশান্তিতে থাকছে বছরের অর্ধেক সময়। এক্সেস রোড়ের দুই পাশের নালাগুলো এত ছোট যে দ্রুত পানি সরতে পারছে না।
এসব নালার নির্মানগত ত্রুটির কারনেও পানিবন্ধী থাকতে হচ্ছে বিশাল এলাকার মানুষকে। সরেজমিনে দেখা গেছে, এক্সেস রোডের নালা একদিকে উঁচু আবার আরেকদিকে নিচুঁ। বড়পোল মোড় থেকে পুলিশলাইন পর্যন্ত উঁচু, আবার পুলিশ লাইন থেকে বেপারী পাড়া মোড় পর্যন্ত খুবই নিচুঁ। একই ভাবে হাজিপাড়া সিঙ্গাপুর মার্কেট থেকে আগ্রাবাদ লাকী প্লাজা পর্যন্ত উঁচু করে তৈরী হয়েছে নালাগুলো। যে কারনে পানিগুলো নিচের অংশে জমে থাকে দিনের পর দিন। আবার এক্সেস রোড় নির্মানের সময় তৎকালীন প্রকৌশলী, সার্ভেয়ার ও কানুনগোদের বিরুদ্ধে এ্যালাইনমেন্ট অনুযায়ী সড়ক ও নালা নির্মান না করে অবৈধ সুযোগ সুবিধা গ্রহনেরও অভিযোগ উঠেছিল।
জানা গেছে, তৎকালীন এক দায়িত্বশীল প্রকৌশলীর এক ভায়রার জায়গাকে রক্ষা করতে গিয়ে এক্সেস রোডকে উত্তরদিকে ঠেলে দেয়া হয়েছিল আট থেকে দশ ফুট! যে কারনে একশ বিশ ফুটের এক্সেস রোড কোথাও গিয়ে হয়েছে একশ পাচঁ ফুট! এই এক্সেস রোড দুই পাশের লক্ষাধীক মানুষের দুর্ভোগ দুর্দশার কারন। এ ছাড়া এক্সেস রোডের উভয় পাশের দোকান, বাসাবাড়ি ও বানিজ্যক ভবনগুলো নির্মিত হয়েছে অনেকটা নালার উপর। এসব কারনেও নালার পানি প্রবাহ বাঁধাগ্রস্থ করছে। ২০০৭ সালে এসব অবৈধভাবে নির্মিত ভবনগুলো সরাতে সিডিএ ও সিটি কর্পোরেশন অভিযান শুরু করলেও পরে রহস্যজনকভাবে নিরব হয়ে থাকে। সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞ মহলের মতে,’ এক্সেস রোডের নির্মানগত ত্রুটি দুর করে দ্রুত পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে পারলে জলাবদ্ধতা থাকবে না। অনেকে সমস্যার গভীরে না গিয়ে শুধুমাত্র দায়সারা জলাবদ্ধতার কথা তুলে ধরছে।
স্থানীয়দের অনেকের মতে,’ এক্সেস রোডের এ্যালাইনমেন্ট অনুযায়ী নালাগুলো পুর্ন: নির্মান, প্রশস্ত বৃদ্ধি করা ও সড়কটি উচুঁ করা না হলে এটি অকার্যকর সড়কে পরিনত হবে’। তাদের মতে,’ ২৪নম্বর উত্তর আগ্রাবাদ ওয়ার্ড হয়ে পাহাড়তলী থেকে আসা পানি এপছে পড়ে এক্সেস রোডের উপর। দ্রুত এসব পানি সরতে না পেরে আসপাশের মানুষের বাড়িঘরে ঢুকে পড়ে। মহেশখালের বাঁধের কারনে এই জলাবদ্ধতা দীর্ঘস্থায়ী রুপ নেয়।
দখল, দুষণ আর ভরাটে এমনিতেই মুমুর্ষ অবস্থা মহেশখালের, তার উপর আছে অস্থায়ী বাঁধ। আগ্রাবাদ সিডিএ সহ বিছু এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে এ বাঁধ দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে উল্টো এসব এলাকার লোকজনই পানিবন্দি হয়ে পড়ে। মরণ বাঁধের ফাঁঁদে পড়ে পুরো আগ্রাবাদ হালিশহর এলাকার মানুষ এখন নরক যন্ত্রনায় ভুগছেন। মহেশখালের অস্থায়ী বাঁধের কারনে পুর্ব পাশ্বের গোসাইলডাঙ্গা, সিডিএ আবাসিক এলাকা, বেপারী পাড়া, এক্সেস রোড, শান্তিবাগ সহ বিশাল এলাকার পানি নামতে পারছে না। এতে এসব এলাকার কোথাও হাটু পানি আবার কোথাও কোমর সমান পানিতে তলিয়ে গেছে। অথচ দুই বছর আগেও ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরের আগে খালটি ছিল হালিশহর, শান্তিবাগ, সিডিএ আবাসিক এলাকা, গোসাইলডাঙ্গা ও ছোটপুল এলাকার প্রাণ। জোয়ার ভাট্রা সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলত এসব এলাকার লোকজন। জোয়ারে পানি উঠত, আবার ভাটার টানে সে পানি নেমে যেত।
বাঁধ দেওয়ার পর এটির পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এখন এক্সেস রোড, বেপারী পাড়া, শান্তিবাগ, ছোটপুল ও আগ্রাবাদ এলাকায় জোয়ারের পানি না উঠলেও বৃষ্টির পানি নামে না। গত সপ্তাহে কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে পানিবন্ধী হয়ে পড়েছেন এসব এলাকার মানুষ। পানির মধ্যেই বসবাস করতে হচ্ছে তাদের। এলাকাবাসীর অভিযোগ, পাঁচদিন ধরে পানি বন্ধী থাকলেও সিটি কর্পোরেশন খালের ময়লা পরিস্কার করছে না। এতে করে বৃষ্টির পানি সহজে নামতে পারছে না। বন্দরও অস্থায়ী বাঁধ সরানোর উদ্ধেগ নিচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে এসব এলাকায় বসবাস করা দুরুহ হয়ে দাঁড়াবে। সিডিএ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা আলহাজ্ব ইব্রাহীম ভুঁইয়া বলেন,’বাঁধ দেওয়ার আগে সিডিএ তে জোয়ারের পানি উঠতো।
আবার ভাটা শুরু হলে সে পানি নেমে যেত। সবাই জোয়ার ভাটার সাথে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছিল। এখন জোয়ারের পানি উঠে না তবে বৃষ্টির পানি আর নামে না। পানি কখন নামবে সেটা কেউ জানে না। পবিত্র রমজানে এমন পরিস্থিতি হওয়াতে দুর্ভোগের মাত্রা চরম আকার ধারন করেছে। মহেশখালের ভরাট সম্পর্কে জানতে চাইলে সিটি কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তা বলেন, মেয়র মহোদয়ের সাথে বন্দর ও পানি উন্নয়ন বোর্ড়ের এক সভায় যে অস্থায়ী বাঁধ দেওয়া হয়েছিল তা দ্রুত ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বাঁধ ভাঙ্গার পরপরই কর্পোরেশন পুরো খাল খনন করবে। আর.এস জরিপ অনুযায়ী খালের জায়গা থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে। মহেশখালের মুখে স্যুইস গেইট নির্মান করবে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এদিকে মহেশখালের বাঁধের কারনে আগ্রাবাদ হালিশহর এলাকার কয়েক লাখ মানুষকে নিদারুর কষ্টে নিদারুন কষ্টে দিনযাপন করতে হচেছ জানিয়ে গনমাধ্যমকে এক বিবৃতি দিয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। তিনি বলেন, মহেশখালের বাঁধের কারনে জোয়ার ভাটার স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
সংশ্লিষ্ট শাখা খাল ও নালাগুলো পলি ও ময়লা আবর্জনায় ভরাট হয়ে যাওয়ায় এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এ কারনে ঘুর্নিঝড় পরবর্তী বৃষ্টির পানিতে আগ্রাবাদ ও হালিশহরের কয়েক হাজার পরিবারকে জলবন্দি হয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। বিবৃতিতে তিনি বলেন, তিন চারদিনের বৃষ্টিতে এ অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ অসহনীয় পর্যায়ে চলে গিয়েছে শুধুমাত্র বিশাল এলাকা ভরাটের কারনে। বিভিন্ন ধরনের ময়লা অবর্জনা, পলিথিন, প্লাষ্টিক এবং পলি গ্রাস করে ফেলেছে পুরো মহেশখাল ও এরসাথে সংযুক্ত শাখা খাল এবং নালাগুলোকে।
এ অবস্থায় সিটি কর্পোরেশন র্বজ্যগুলো পরিস্কারের উদ্যোগ গ্রহন করলেও সহযোগিতা করেনি বন্দর কর্তৃপক্ষ কিংবা সংশ্লিষ্ট কোন বিভাগ । ময়লা আবর্জনার গন্ধে এলাকার বাতাস ভারি হয়ে থাকছে প্রতিনিয়ত। বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই বাসা বাঁধছে মানুষের শরীরে।
দ্রুত খালের আবর্জনা পলি অপসারনের কার্যকর উদ্যোগের আহবান জানিয়ে খোরশেদ আলম সুজন বলেন, বেশি দুর্ভোগে পড়ছেন এসব এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে যৎসামান্য উপার্জন দিয়ে তিলেতিলে সঞ্চয়ের মাধ্যমে গড়ে তোলা তাদের ঘরের আসবাবপত্র, কাপড়চোপড় এবং অন্যান্য জিনিসপত্র। এমনকি চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদেরও অস্বাভাবিক দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। নীচতলা পানিতে ডুবে হাসপাতালের পানি বিশুদ্ধকরন প্ল্যান্টসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।