চন্দনাইশে টানা বৃষ্টিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

0

মো. দেলোয়ার হোসেন,চন্দনাইশ::গত রবিবার (১১ জুন) থেকে নিম্নচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে চন্দনাইশের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। ধোপাছড়িতে পাড়া ধ্বসে মহিলা ও শিশুসহ ৪ নিহত ও ২ জন আহত হয়। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কহ বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন সড়কের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার কারণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সে সাথে তিনদিন ধরে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাও ভেঙ্গে পড়ে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র আঘাতের পর প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিম্নচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে স্থবির হয়ে পড়েছে চন্দনাইসহ সারা দেশ। স্থলভাগে চলে আসা মৌসুমী নিম্নচাপের কারণে গত রবিবার থেকে টানা বৃষ্টির ফলে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। গতকাল ১৩ জুন ভোর রাতে ধোপাছড়িতে পাহাড় ধ্বসে মহিলা ও শিশুসহ ৪ জন নিহত ও ২ জন আহত হয়। নিহতরা হলো ধোপাছড়ি শঙ্খের মুখ এলাকার আজগর আলীর মেয়ে মাহিয়া (৩), চনবন্যা এলাকার উপজাতি মৃত সিংসাউ খেয়াং এর স্ত্রী মোকাইয়ং খেয়াং (৫০), কেলাও অং খেয়াং এর মেয়ে মেমাউ খেয়াং (১৩), তেলাও খেয়াং এর মেয়ে কেউসাং খেয়াং (১০) পাহাড় ধ্বসে মাটি চাপা পড়ে মারা যায়।

এ সময় তিনসাও খেয়াং এর কন্যা সানু খেয়াং (২১), থৈখৈ খেয়াং এর ছেলে ফেলাও কেউ খেয়াং (২৮) আহত হয়। আহতদেরকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ধোপাছড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. ইউছুপ চৌধুরী। তিনি আরও বলেন, এ তিন পরিবার ছাড়াও আরও ৭/৮টি পরিবারের ঘর পাহাড়ি ঢলে ভেঙ্গে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

অপরদিকে পাহাড়ি ঢলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চন্দনাইশের পাঠানীপুল এলাকাসহ আভ্যন্তরীন সড়কগুলোর উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়েছে। সে সাথে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ার কারণে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের সাথে প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

নিম্নচাপের প্রভাবে চন্দনাইশে গত ১১ জুন (রবিবার) থেকে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ, ধমকা হাওয়া, বজ্রপাত, প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত হালকা বৃষ্টিপাতের কারণে শঙ্খনদীর উপর দিয়ে পাহাড়ি ঢল বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শঙ্খনদীর পানি পার্শ্ববর্তী এলাকায় উপচে পড়ে উপজেলার ধোপছড়ি, দোহাজারী, বৈলতলী, বরকল, বরমা, জোয়ারা, কাঞ্চনাবাদ, হাশিমপুরের অধিকাংশ এলাকা ইতিমধ্যে পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ফলে এসব এলাকায় শাক-সবজি, ক্ষেত-খামার, আউশ বীজ ও আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সে সাথে মৎস্য চাষীদের মাছের ঘেরের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে। দোহাজারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বেগ বলেছেন, দোহাজারী সদর, জামিরজুরী, পাঠানীপুল দিয়াকুল, চাগাচর, রায়জোয়ারা এলাকায় ফসলি জমিগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। শঙ্খনদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চাগাচর এলাকায় শঙ্খনদীর ভাঙ্গন প্রতিরোধে নির্মিত প্রতিরক্ষা বাঁধটি হুমকির মুখে পড়েছে। শঙ্খনদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় শঙ্খ তীরবর্তী এলাকার সহস্রাধিক একর মৌসুমী সবজির ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার কৃষকদের মধ্যে আহমদ হোসেন, কালা মিয়া, নসিম আলী অনেকে জানালেন, মৌসুমী সবজি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় নষ্ট হয়ে যাবে। ফলে তারা ধার এবং ঋণ নিয়ে করা সবজি ক্ষেত নষ্ট হওয়ার কারণে তারা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। এমনকি অনেকেই ঈদের কাপড়-চোপড় পর্যন্ত কিনতে পারবেন না বলে জানালেন। কেনা-বেচা হয়েছে খুব কম।

গত ১১ জুন (রবিবার) থেকে বৃষ্টিপাত ও ধমকা হওয়ার কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে চন্দনাইশের বিভিন্ন এলাকায়। লাগাতর বৃষ্টি, প্রবল ঝড়োহাওয়ার কারণে বিদ্যুৎবিহীন চন্দনাইশের জনজীবনে নেমে এসেছে চরম বিপর্যয়। বিদ্যুৎ বন্ধ থাকার কারণে ঈদ মার্কেট গুলোতেও কেনা বেচা কয়েছে কম। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুৎফুর রহমান বলেছেন, টানা বৃষ্টির কারণে চন্দনাইশের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। শাক-সবজি ও ফসলি জমি ও মৎস্য ঘেরের ক্ষতি হয়েছে। পাহাড় ধ্বসে নিহতরা গভীর অরণ্যে হওয়ায় স্থানীয়রা তাদের লাশ উদ্ধার করে ধর্মীয় নীতি-নীতি অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন বলে তিনি জানান। অপরদিকে কৃষি কর্মকর্তা লোকমান হোসেন মজুমদার বলেছেন, টানা বৃষ্টির কারণে চন্দনাইশে ৩শ হেক্টর শাক সবজি, ৪৫ হেক্টর আউশ ধানের বীজতলা, ৫০ হেক্টর আমন ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চন্দনাইশের মৎস্য প্রজেক্ট ডুবে ক্ষতির শিকার হয়েছে অনেক মৎস্য চাষী। তবে পরিসংখ্যান নেয়া সম্ভব হয়নি। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, পাহাড়ি ঢল এবং টানা বৃষ্টির কারণে চন্দনাইশের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় পশুর খাবারে কিছুটা সংকট দেখা দিলেও প্রাণহানির কোন ঘটনা ঘটেনি বলে জানান।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.