শ্যামল রুদ্র, রামগড় (খাগড়াছড়ি)::অন্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের ফাঁকাগুলি ছোড়ার ঘটনায় খাগড়াছড়ির রামগড়ের দুর্গম ব্রতচন্দ্রপাড়া, তোয়াইপাড়া, টিলাপাড়া, সোনাই আগা ও কালাডেবা এলাকার পাহাড়ী-বাঙালিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ওই এলাকার পাহাড়ি-বাঙালি মিলে সন্ত্রাসীদের ধাওয়া দিলে এলাকাগুলোতে উত্তেজনা দেখা দেয়। খবর পেয়ে, পুলিশ ও বিজিবি গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।
শুক্রবার (৩০ জুন) রাত ১০টার দিকে রামগড়ের দুর্গম সোনাইআগা সুইচ গেট এলাকায় সন্ত্রাসীরা ফাঁকাগুলি বর্ষণ করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এই ঘটনায় শুক্রবার গভীর রাত পর্যন্ত পাহাড়ি বাঙ্গালিদের মধ্যে উত্তেজনা, আতঙ্ক ও নানা গুজবে এলাকার পরিস্থিতি থমথমে হয়ে ওঠে।
রামগড় উপজেলা পরিষদের ভাইচ চেয়ারম্যান আবদুল কাদের জানান, শনিবার সকাল থেকে আমি ওই এলাকায় অবস্থান করে পাহাড়ী-বাঙালিদের সাথে কথা বলেছি। শুক্রবার (৩০ জুন) রাত ১০টার দিকে সন্ত্রাসীরা কয়েক রাউন্ড ফাঁকাগুলি ছুড়ে আতংক সৃষ্টি করলে স্থানীয়রা মিলিত ভাবে দুর্বৃত্তদের প্রতিরোধে এগিয়ে গেলে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ-বিজিবি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। তবে কোথাও কোন আহত বা হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল কাদের ও কালাডেবার স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর কাজী বসর সাংবাদিকদের বলেন, সোনাই আগা গ্রামসহ দুর্গম এলাকার বসবাসকারী বাঙালি ও নিরীহ পাহাড়িরা চাঁদার জন্য ইউপিডিএফ এর সন্ত্রাসীদের হাতে প্রতিনিয়ত নাজেহাল হচ্ছেন। তাঁরা বলেন, স্থায়ীভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা না হলে ওই সব এলাকায় বড় ধরনের অনাঙ্খিত ঘটনা সৃষ্টি হতে পারে।
স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার ক্যারি মারমা ও মো. হোসেন জানান, শুক্রবার রাত ১০টার দিকে গুলির শব্দে আমরা আতস্কিত হয়ে পড়ি, এর কিছুক্ষণ পর স্থানীয়দের হই-হুলোড়ে ঘর ছেড়ে পাশে অবস্থান নিই। পরে পুলিশ-বিজিবি ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এগিয়ে এলে আমরা নিরাপদবোধ করি।
কাউন্সিলর আবুল বশর জানান, ফাঁকাগুলির শব্দে সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তাৎক্ষনিক প্রশাসনকে অবহিত করা হলে পুলিশ-বিজিবি এসে সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ করেন। তিনি জানান, ঈদের পরদিন একই স্থানে সন্ত্রাসীরা ফাঁকাগুলি ছুড়েছিল, গতকালও রাতে ফের গুলি ছুড়লে স্থানীয়রা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। তবে এখন পাহাড়ী ও বাঙ্গালীরা নিজ নিজ বাড়িঘরে অবস্থান করছেন।
রামগড় থানা অফিসার ইনচার্জ মো. শরিফুল ইসলাম জানান, বাঙালিরা সন্ত্রাসীদের ধাওয়া দিলে সবার মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে কোথাও কোন হামলা বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এলাকায় পুলিশ-বিজিবির টহল রয়েছে। এখন পরিস্থিতি পুরোপুরি শান্ত।
এ দিকে, শনিবার বেলা ১২টার দিকে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এলাকায় শান্তি সমাবেশের আয়োজন করা হয়। পাহাড়ি ও বাঙ্গালী উভয় সম্প্রদায়ের লোকজন সমাবেশে যোগ দেন। ৪৩,বিজিবির উপ অধিনায়ক মেজর হুমায়ুন কবীর, রামগড় সার্কেল এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সৈয়দ মো. ফরহাদ,ওসি শরিফুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল কাদের,পৌর কাউন্সিলর আহসান উল্ল্যাহ, আওয়ামীলীগ নেতা, বিশ্বত্রিপুরা, মো, কামাল, দেবু শর্মা, লিটন দাশ, মো. শিপন পৌর কাউন্সিলর কাজী বসর ও স্থানীয় সাংবাদিকসহ এলাকাবাসী শান্তি সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা শান্তি সমাবেশে বলেন, কোন ধরনের গুজবে কান না দিয়ে পাহাড়ি-বাঙ্গালি সবাইকে একতাবদ্ধ হয়ে সন্ত্রাসীদের মোকাবেলা করতে হবে। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা চলবে না, স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখতে হবে। সন্ত্রাসীদের কোন দলীয় পরিচয় নেই, এরা সকলের শক্র।