সিটিনিউজবিডি : পরিচিত বিত্তশালীদের টার্গেট করে সুন্দরী মেয়েদের মাধ্যমে প্রেমের ফাঁদে ফেলে জোরপূর্বক মুক্তিপণ আদায় করত চক্রটি। বিভক্ত হয়ে চক্রটি নগরীর বিভিন্ন জায়গায় এ ধরণের কর্মকাণ্ড চালাতো। হাত-পা বেঁধে চালানো হতো নির্যাতন এবং করা হতো সুন্দরী মেয়েদের সঙ্গে ফটোসেশন। মুক্তিপণ হিসেবে পরিবারের কাছে দাবি করা হতো মোটা অংকের টাকা। টাকা দিলে অপহৃতদের ছেড়ে দেওয়া হতো এবং ঘটনা জানাজানি হলে ওই ছবি অনলাইনে ছেড়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হতো ভুক্তভোগীদের।
অপহরণের এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে গ্রেফতার হওয়া অপহরণকারী চক্রের ছয় সদস্যের কাছ থেকে। নগর গোয়েন্দা পুলিশ মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) ভোররাতে পাঁচলাইশ থানার বেবি সুপার মার্কেট এলাকার একটি বাসা থেকে ছয় অপহরণকারীকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, অপহরণ চক্রের প্রধান চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ থানার বাগপুর বেপারি বাড়ীর মৃত দুদু মিয়ার ছেলে মো. শাহাবুদ্দিন ওরফে বাচ্চু (৪৫), শাহাবুদ্দিনের স্ত্রী শেলি আক্তার (৩৪), লোহাগাড়া আজিজ নগর এলাকার শুক্কুর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রিয়া (২২), কক্সবাজার জেলা পেকুয়া উপজেলার শিলখালী এলাকার মৃত সেকান্দর মাস্টারের ছেলে মো. সেলিম (৪৮), চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানার পশ্চিম পটিয়া এলাকার বিএ সোলায়মানের বাড়ীর মৃত নাজিম উদ্দিনের ছেলে মো. ওসমান (৩৪) ও সাতকানিয়া থানার ধর্মপুর চৌধুরী বাড়ি এলাকার জসীম উদ্দিনের ছেলে মিনহাজ উদ্দিন এনাম (২৯)। সেলিম হাইকোর্টের এক আইনজীবীর মুহুরী।
তারা সবাই পাঁচলাইশ থানার বেবি সুপার মার্কেট সালাম পাড়া আদর্শ ভিলায় শাহাবুদ্দিনের বাসায় থাকত।
এসময় শাহাবুদ্দিনের বাসা থেকে হাত-পা বাধা অবস্থায় আঁখি আক্তার নামে এক পোশাক শ্রমিকসহ সাতজন মেয়ে ও বিত্তশালীদের একটি তালিকা উদ্ধার করা হয়।
নগর গোয়েন্দো পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার এস এম তানভীর আরাফাত বলেন, পরিচিত বিত্তশালীদের তালিকা তৈরি করত দালালরা। তালিকাভুক্তদের মেয়েদের মাধ্যমে ফোন করে প্রেমের ফাঁদে ফেলে তাদেরকে একটি বাসায় নিয়ে আসত চক্রটি।এদের কাছ থেকে রক্ষা পেয়ে ভুক্তভোগী পুলিশের কাছে অভিযোগ করলেও অনেকে চক্ষু লজ্জ্বায় করেনি। এ ধরণের অপহরণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় গোয়েন্দা পুলিশ তদন্তে নামে।
“শাহাবুদ্দিনের বাসায় পুরুষদের আটকে রেখে নির্যাতন করা হতো এবং ফোন করত শারমিন। আটকে রেখে তাদের কাছ থেকে ৩০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত মুক্তিপণ দাবি করা হতো এবং মুক্তিপণ দিলে আটককৃতদের ছেড়ে দিত তারা। এ চক্রের সঙ্গে ১৫-১৬ জন সদস্য নগরীর বিভিন্ন স্থানে সক্রিয় আছে। ”
গ্রেফতার হওয়া শারমিন আক্তার বলেন, ‘আনোয়ার রাজু ভালো চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে আমাকে এ পেশায় নিয়ে আসে। পরে এ পেশা থেকে বের হতে চেষ্টা করলেও রাজুর হুমকির কারণে পারিনি। এছাড়া পরিবারের আর্থিক অবস্থার কারণে বাধ্য হয়ে এ চক্রে থাকতে হয়েছে।’
গত এক বছরে প্রায় ১৫ জনকে আটকে মুক্তিপণ আদায় করা হয়েছে জানিয়ে শারমিন বলেন, ‘আমি ছাড়াও অনেক মেয়ে আমাদের এ চক্রে কাজ করে। গত এক বছরে আমার মাধ্যমে ১৫ জনের কাছ থেকে তারা টাকা আদায় করেছে। আমাকে প্রতিজনে ৫ হাজার টাকা দিতো। ’
চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান এডিসি তানভীর।
তিনি বলেন, ‘উদ্ধারকৃতদের মধ্যে আঁখি আক্তারকে গত দুই মাস আগে ইপিজেড এলাকা থেকে চক্রটি অপহরণ করে। তাকে বাধ্য করে তারা এসব কাজে ব্যবহার করত। আঁখি এ ঘটনায় অপহরণ ও নারী নির্যাতন আইনে দুইটি মামলা দায়ের করেছে। ’
অপহরণের মূলহোতা শাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানায় হত্যা মামলা রয়েছে বলে জানান এডিসি তানভীর। গ্রেফতারকৃতদের নগরীর বিভিন্ন থানায় দায়েরকৃত চারটি মামলায় আদালতে পাঠানো হয়েছে।