ঝুকিপূর্ণ ভবন, ভয়ে ঘর ছাড়া প্রতিবেশি!

0

সাইফুল উদ্দীন, রাঙামাটি প্রতিনিধি::রাঙামাটি শহরের তবলছড়ি ষ্টেশন ক্লাব সংলগ্ন (বটতলা) তিন তলা বিশিষ্ট একটি ভবন ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। গত বেশ কিছুদিন ধরে শহরের অতি বৃষ্টি হওয়ার ফলে ভবনটির পিছনের অংশের মাটি ভেঙ্গে যায়। ভবনটি ভেঙ্গে পরার ভয়ে ঘর ছাড়া রয়েছে প্রতিবেশি পরিবার।

সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, ভবনটি মালিক শিলা দেওয়ান, তার স্বামীর নাম গৌতম সরকার। তিনি বর্তমানে সুইজারল্যান্ডে বসবাস করছে। এই জায়গাটি তিনি গত সাত-আট বছর আগে সুনতি রঞ্চন চাকমার কাছ থেকে ক্রয় করেছিলেন। সুনতি রঞ্চন চাকমা জায়গাটিতে প্রায় ১৯৮০ সালে একতলা বিশিষ্ট একটি ভবন তৈরি করেন। সেই ভবনসহ শিলা দেওয়ান’র কাছে বিক্রয় করেন। কিন্তু পরে শিলা দেওয়ান সেই একতলা বিশিষ্ট ভবনের উপরে আরো দুইতলা বৃদ্ধি করে মোট তিনতলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করেন। শিলা দেওয়ান বাংলাদেশে না থাকায় ভবনটি বর্তমানে দেখাশুনা করেন তার বড় বোন মানষি দেওয়ান, স্বামী নবজ্যাতি চাকমা।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের পিছনের অংশের প্রায় মাটি ভেঙ্গে কাপ্তাই হ্রদে বিলিন হয়ে যায়। ভবনটির পিছনের একটি গর্ত সৃষ্টি হয় যার ফলে ভবনটি ভেঙ্গে যাওয়ার আশংঙ্খা করছে প্রতিবেশিরা। এই অশংঙ্খার ফলে প্রতিবেশি দুই পরিবার ঘর ছাড়া অবস্থায় রয়েছে।

এই প্রসঙ্গে প্রতিবেশি অনসুক চাকমা ও তার স্ত্রী মোহর দেওয়ান বলেন, শিলা দেওয়ান’র ভবনটির পিছনের অংশ ভেঙ্গে গিয়েছে। যেকোন মুহুর্ত্বে ভবনটি ভেঙ্গে যেতে পারে। সেই ভয়ে আমরা ঘর ছেড়ে বাহিরে আত্মিয়ের বাসায় আশ্রয় নিয়ে আছি। তারা বলেন, ভবনটি যখন তৈরি করা হয়েছিলো তখন ছিলো একতলা বিশিষ্ট কিন্তু পরে এই জায়গাটি যখন শিলা দেওয়ান ক্রয় করেন তখন তিনি কোন নকশা ও ফাউন্ডেশন ছাড়াই একতলার উপরে আরো দুই তলা বৃদ্ধি করেন। গত বেশ কিছুদিন ধরে রাঙামাটিতে অতি বৃষ্টি হওয়ার ফলে ভবনটির পিছনের অংশের মাটি ভেঙ্গে যায় এবং ভবনটির চাপে মাটি রক্ষার জন্য দেওয়া পাশের দেওয়ালটিতেও ফাটল দেখা গিয়েছে।

এই প্রসঙ্গে ভবনটির দায়িত্বে থাকা শিলা দেওয়ান’র বোন মানষি দেওয়ানকে জানানো হলে তিনি শুধু মাত্র গাছের খুঁটি দিয়ে ভবনটি রক্ষা করার চেষ্টা করছেন। ফলে ভবনটির রক্ষা কোন উপায় তো হচ্ছে না বরং প্রতিবেশির প্রাণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছেন। তাই আমরা প্রাণ রক্ষায় এবং এই বিষয়ে প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে রাঙামাটি কোতয়ালী থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেছি।

তারা আরো বলেন, মানষি দেওয়ান যখন খুঁটি দিয়ে ভবন রক্ষার চেষ্টা করছিলেন তখন রাঙামাটি পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ার এসে পরিদর্শন করে গিয়েছিলেন। তিনি সে সময়ে এমন খুঁটি দিয়ে পাইলিং না দেওয়ার জন্য নিষেধ করে গেছেন। কিন্তু মানষি দেওয়ার সেই কথা না রেখে জোর পূর্বক ভাবে গাছের পাইলিং দিচ্ছেন।

ভবনটিতে থাকা ভাড়াটিয়েরা সরে গিয়েছে এমন তথ্য জানিয়ে তারা আরো বলেন, এই ভবনে থাকা ভাড়াটিয়েরা পিছনের মাটি ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে ভয়ে অন্য স্থানে চলে গিয়েছে।
এই দুই দম্পতি আরো বলেন, ভবনটি ভেঙ্গে যাওয়ার ভয়ে আমরা এবং আমাদের বড় ভাইয়ের পরিবার অন্য জায়গায় গিয়ে বর্তমানে আশ্রয় নিয়েছে। এমত অবস্থায় আমরা আমাদের প্রাণ রক্ষার জন্য প্রশাসনের নিকট ভবনটির বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অনুরোধ করছি বলেও জানান তারা।

অত্র এলাকার বেশকিছু প্রতিবেশির সাথে কথা বলে তারা জানান, ভবনটি ঝুঁকিতে রয়েছে। সেই ভবনে থাকা ভাড়াটিয়াদেরকে পুলিশ এসে সরে যেতে বলায় তারা অন্য স্থানে সরে গিয়েছে। এলাকার প্রায় মানুষই আশংঙ্খা করছে ভবনটি ভেঙ্গে যেতে পারে। এখন যদি প্রশাসন কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করে তবে প্রতিবেশি মানুষের প্রাণের ঝুঁকি রয়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রতিবেশি মানুষেরা।

ভবনটির মালিক শিলা দেওয়ানের পক্ষে ভবনের দায়িত্বে থাকা তার বড় বোন মানষি দেওয়ান’র সাথে কথা বলে তিনি জানান, ভবনটির পিছনের অংশের মাটি ভেঙ্গে গিয়েছে তাই তিনি ভবন রক্ষার জন্য গাছের খুঁটি ব্যবহার করে পাইলিং দিচ্ছেন।

তিনি বলেন, আমাকে রাঙামাটি পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ার ভবনের কাগজ পত্র দেখে পাইলিং করার কাজ এগিয়ে নিতে বলেছেন। আমি ইঞ্জিনিয়ার পলব চাকমার পরামর্শে এবং তার দেওয়া নির্দেশে পাইলিং করছি। এতে তো কোন অসুবিধা হওয়ার কথা না। ভবন রক্ষার জন্য তো আমাকে ব্যবস্থা নিতেই হবে।

তিনি আরো বলেন, ভবনটি তৈরি করার সময় নকশা ও ফাউন্ডেশন মেনে করা হয়েছে। প্রতিবেশিরা প্রতিহিংসা মূলক ভাবে বিরোধীতা করছে বলেন মন্তব্য করেন তিনি।
এই প্রসঙ্গে ইঞ্জিনিয়ার পলব চাকমার সাথে মোঠফোনে একাধীকবার যোগাযোগ করার চেষ্ঠা করা হলেও তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয় নি।

রাঙামাটি পৌরসভার দায়িত্বরত ইঞ্জিনিয়ার বিরল বড়–য়া বলেন, আমি ঘটনাস্থলে পরির্দশন করে কাজ বন্ধ রাখার জন্য বলেছিলাম। পরে তারা কি করছে সে বিষয়ে আমি অবগত নয়।
তিনি অনুমতি দিয়েছেন কি না ? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদেরকে আমি কোন প্রকার অনুমতি দেন নি। যদি এমন পাইলিং করার অনুমতি দিয়ে থাকি তবে অনুমতি দেওয়ার পত্র দেখাতে বলেন।

এছাড়া তিনি আরো বলেন, জেলা প্রশাসন বর্তমানে কোন প্রকার ভবন মেরামত ও নতুন ভবন নির্মাণ না করার জন্য নির্দেশ জারি করেছেন। তাই আমরা এখন কোন প্রকার অনুমতি দিচ্ছি না।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.