২৯ মাস বন্ধ থাকার পর ফের উৎপাদনে সিইউএফএল

0

জাহেদুল হক,আনোয়ারা::দীর্ঘ ২৯ মাস বন্ধ থাকার পর আবারও উৎপাদন শুরু করেছেঝ আনোয়ারায় অবস্থিত রাষ্ট্রায়ত্ব সার কারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল)।

গত মঙ্গলবার রাত সোয়া এগারটায় কারখানাটি চালু করেছে বলে নিশ্চিত করেছেন সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু তাহের ভুঁইয়া। এর আগে কারখানাটি গ্যাস পেয়ে সোমবার রাতে অ্যামোনিয়া উৎপাদন শুরু করে। দীর্ঘদিন পর কারখানাটি উৎপাদনে যাওয়ায় এ প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

কারখানা সূত্র জানায়,২০১৫ সালের ৩১ জানুয়ারি রিঅ্যাক্টর লিকেজ ও কুলিং টাওয়ার অচল হয়ে পড়ায় কারখানাটি টানা ৮৮৪ দিন বন্ধ থাকে। এরইমধ্যে বিসিআইসির মাধ্যমে ইতালিয়ান এএক্সও কোম্পানির কারিগরী সহায়তায় প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে কারখানাটির মেরামত কাজ সম্পন্ন করা হয়। পরে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি কারখানায় গ্যাস সরবরাহ দেয় কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিএরপর ১০ ফেব্রুয়ারি ফের উৎপাদন শুরুর লক্ষ্যে প্রস্তুতি সম্পন্ন করে সিইউএফএল কর্তৃপক্ষ। সার উৎপাদনের আগ মুহুর্তে গেল ১৭ ফেব্রুয়ারি আবারও দেখা দেয় রিঅ্যাক্টর লিকেজ। এ কারণে আবারও কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে একই কারিগরী প্রতিষ্ঠানটির প্রচেষ্টায় কারখানার মেরামত কাজ সম্পন্ন হয়।

এরপর গত ২৭ জুন পুনরায় গ্যাস সরবরাহ পেয়ে কারখানাটি চালু করার উদ্যোগ নেয় সিইউএফএল কর্তৃপক্ষ। গত মঙ্গলবার রাতে কারখানার উৎপাদন শুরুর সময় বিসিআইসি’র পরিচালক (কারিগরী) আলী আক্কাস,সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবু তাহের ভুঁইয়া,ডাই-অ্যামোনিয়া ফসফেট সার-কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মনিরুল ইসলাম ও ইতালিয়ান এক্সপার্টরাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উৎপাদন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেন।

সিইউএফএল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) সহ-সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল আজিম সবুজ বলেন, বর্তমানে কারখানায় সরবরাহকৃত গ্যাসের চাপ প্রায় ৪৫ এসএম সিএফটি। রাষ্ট্রায়ত্ব এ সার কারখানাকে গুরুত্ব দিয়ে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের জন্য কেজিডিসিএলের প্রতি জোর দাবি জানান তিনি।

সিইউএফএল সূত্র জানায়,১৯৮৭ সালের ২৯ অক্টোবর জাপানের কারিগরী সহায়তায় কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে আনোয়ারা উপজেলার রাঙ্গাদিয়ায় সার কারখানাটি প্রতিষ্ঠা করে সরকার। ওই সময় কারখানাটির নির্মাতাকারী জাপানী প্রতিষ্ঠান ২০ বছর মেয়াদ বেঁধে দিলেও পার হয়ে গেছে প্রায় ৩০ বছর। বিভিন্ন সময়ে গ্যাস সংকট ও যান্ত্রিক ত্রুটিতে কারখানাটি ৮/৯ মাস বন্ধ থাকলেও এবার সর্বোচ্চ উৎপাদন বন্ধ থাকে ২৯ মাসের বেশি সময়। এতে কারখানার ৬ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে চাকরি নিয়ে শংকা দেখা দিয়েছে

তাছাড়া গড়ে প্রতিদিন এক হাজার চারশ টন করে ১২ লাখ ৩৭ টন ইউরিয়া সার উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১৭৩২ কোটি টাকা। এ পরিমাণ সার বিদেশ থেকে আমদানি করতে সরকারের ব্যয় হয়েছে আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যে প্রতিটনে গড়ে ১০ হাজার টাকা করে ১২ শত কোটি টাকার উপরে। ফলে সরকারের ক্ষতি হয়েছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা।

জানা যায়,দেশের রাষ্ট্রায়ত্ব ৭টি সারকারখানার মধ্যে সিইউএফএলে উৎপাদন খরচ সবচেয়ে কম। কিন্তু সার উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় গ্যাস ও মিঠা পানি সংকটের কারণে দফায় দফায় বন্ধ রাখতে হয়েছে কারখানাটির উৎপাদন। এটি পুরোদমে চালু করতে প্রয়োজন হয় ৫২ মিলিয়ন সিএফডি গ্যাস। তাছাড়া কারখানাটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় অনেক যন্ত্রাংশের কার্যক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়েছে। যার ফলে বেশিরভাগ সময় কারখানাটির উৎপাদন বন্ধ ছিল।

কারখানার প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, ৯ বছরের বেশি দিন আগে পুরো প্রতিষ্ঠান মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় কারখানার বেশিরভাগ যন্ত্রাংশ অকেজো হয়ে পড়েছে। তারমধ্যে কিছু কিছু যন্ত্রাংশ পরিবর্তন করা হলেও বাকিগুলো ঝুঁকির মধ্যে আছে। এছাড়া কারখানা চালু থাকলে প্রতি ঘন্টায় ৮শত মেট্রিক টন করে দৈনিক ১৯ হাজার ২শত মেট্রিক টন পানির প্রয়োজন হয়। এ কারখানা প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে কালুরঘাট ওয়াটার প্ল্যান থেকে পানি এনে প্রতিষ্ঠান চালানো হয়।

কিন্তু কর্ণফুলী নদীতে পানির লবণাক্ততা বেড়ে গেলে চাহিদামত পানি নেওয়া সম্ভব হয় না। ১৭ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন এ কারখানায় আপাতত দৈনিক ১৪-১৫ হাজার মেট্রিক টন সার উৎপাদন করা যাবে বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে সিইউএফএল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি মো.নাসির উদ্দিন বলেন,দীর্ঘদিন ধরে কারখানা বন্ধ থাকার কারণে শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে চাকরি হারানোর শংকা ছিল বেশি। আবার অনেকের অন্যত্র বদলিও হয়ে গেছে। কারখানা চালুর খবরে শ্রমিক-কর্মচারীদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

দীর্ঘদিন পর কারখানাটি সচল হওয়া সেই সাথে সার উৎপাদনে যাওয়ায় বিষয়ে জানতে চাইলে সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু তাহের ভুইয়া জানান,গ্যাস সংকটসহ নানা সমস্যায় দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় কারখানা বন্ধ ছিল। গ্যাস সরবরাহ পেয়ে মঙ্গলবার রাতে কারখানাটির ইউরিয়া উৎপাদন শুরু করা হয়।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.