বশির আলমামুন,চকরিয়া::এবারে দুই দফা ভয়াবহ বন্যায় চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার একাধিক আভ্যন্তরীণ সড়ক ও গ্রামীণ রাস্তা ভেঙ্গে খানাখন্দক ও বিশাল গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এতে অধিকাংশ সড়কে যান চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। যার ফলে চকরিয়ার চিরিঙ্গা পৌরশহরের সাথে বিভিন্ন ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এতে করে চকরিয়া এলজিইডির আওতাধীন সড়কের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩০ টাকা এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগ চকরিয়ার আওতাধীন সড়কের ক্ষতি হয়েছে ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তর।
জানা গেছে সম্প্রতি ভারি বর্ষণে ও উজান থেকে মাতামহুরী নদী দিয়ে নেমে আসা বানের পানিতে উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের নিন্মাঞ্চল ও একটি পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ড প্লাবিত হয়েছে। পুরো উপজেলার অন্তত দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি ছিলো। এখনো খাবার সংকট কাটেনি বন্যা দূর্গত এলাকায়। তবে এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এলজিইডি, সওজ ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায় দপ্তরে গ্রামীন অবকাঠামো হাতে গৃহীত একাধিক আভ্যন্তরীণ সড়ক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাধগুলো। প্রায় প্রত্যেক ইউনিয়নে আভ্যন্তরীণ সড়ক, গ্রামীন রাস্তাগুলো বানের পানির প্রবল স্রোতে ভেঙ্গে খানাখন্দক ও বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
অনেক স্থানে সড়ক ভেঙ্গে মাতামুুহুরী নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। বিশেষ করে চিরিঙ্গা-বদরখালী কেবি জালালউদ্দিন, শাহারবিল-পূর্ববড়ভেওলা ইউনিয়নের জকরিয়া সড়ক, চিরিঙ্গা-বেতুয়াবাজার সড়ক, ছিকলঘাট-কৈয়ারবিল সড়ক, ছিকলঘাট-কাকারা সড়ক, কাকারা-মানিকপুর সড়ক, সাহারবিল পরিষদ ও আঠারকুম সড়ক, কোনাখালী বাংলাবাজার সড়ক সহ বিভিন্ন স্থানে বাসের পানির তোড়ে ভেঙ্গে খানাখন্দক ও বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
তাছাড়া পাউবোর আওতাধীন পৌর শহর রক্ষাবাধঁ, ভাংগারমূখ-দিগরপানখালী সড়ক (বেড়ীবাধঁ) দিগরপানখালী-ঘুনিয়ার ১নং বাঁধটি মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ভেঙ্গে গেছে কুরুইল্ল্যার কুম ও পুরুত্যাখালী বাজার ও পহরচাঁদা কইন্নার কুম পূর্ববড়ভেলার আনিসপাড়া সেকান্দরপাড়া এলাকার বেড়িবাধঁ। এছাড়াও পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ড, খুটাখালী, ডুলাহাজারা, ফাঁশিয়াখালী, বরইতলী, হারবাং, ঢেমুশিয়া, বিএমচর ও পশ্চিমবড়ভেওলা ইউনিয়নের অধিকাংশ সড়ক ও রাস্তা ভেঙ্গে গেছে। এসব ইউনিয়নের সড়ক গুলো ভেঙ্গে ক্ষত-বিক্ষত হওয়াতে পৌরশহরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। অনেক স্থানে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে মানুষের নিত্য যাতায়াতের ক্ষেত্রে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সাহারবিল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহসিন বাবুল জানান, তার ইউনিয়নে ভয়াবহ বন্যায় সড়ক ও রাস্তাগুলো ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেক স্থানে বিশাল গর্ত ও খানাখন্দক হওয়ায় যান চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
ফাঁশিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী জানান, তার ইউনিয়নের আভ্যন্তরীণ সড়ক গুলো ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। একাধিক রাস্তায় বড়বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া দিগরপানখালী-ঘুনিয়ার ১নং বাঁধটি মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ইতোমধ্যে গণি সিকদারপাড়া পয়েন্টে প্রাথমিক ভাবে ১০টি স্পার দিয়ে বাধঁ রক্ষার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি স্থানীয় মানুষের সহায়তায় বাঁধ রক্ষার জন্য মাটি দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
উপজেলা এলজিইডি’র অফিস জানায়, বন্যার পানিতে এলজিইডি আওতাধীন অধিকাংশ গ্রামীণ সড়ক ভেংগে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক জায়গায় বিশাল গর্ত হয়েছে। আর এতে ৩০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।সড়ক ও জনপথ বিভাগের কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী রানা প্রিয় বড়ুয়া বলেন, স¤প্রাতিক ভয়াবহ বন্যার ফলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ২০কিলোমিটার এবং চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ৫০ কিলোমিটার সড়কে খানাখন্দ ও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রায় ১২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ক্ষয়-ক্ষতির চিত্র তুলে ধরে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ আসলে দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়ক গুলো সংস্কার কাজ শুরু করা হবে।
চকরিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো: সাহেদুল ইসলাম বলেন, বন্যায় ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করে বিভিন্ন দপ্তরে তথ্য পাঠানো হয়েছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রামীণ সড়কগুলো মেরামতের কাজ শুরু করা হবে। যাতে করে সাধারণ মানুষের দু:খ লাঘব হয়।