বেড়ীবাঁধ নির্মাণ না করেই ১ কোটি টাকা উত্তোলন!
বশির আলমামুন,চকরিয়া(কক্সবাজার)থেকে:: কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষন কর্মসূূচীর কাজ বাস্তবায়নে ব্যাপক অনিয়ম ও চরম দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে।
খাল খনন ও বেড়িবাঁধ নির্মাণের একাধিক প্রকল্পে ওভারলেপিং (অধিক্রমণ) করে ত্রাণ মন্ত্রনালয় থেকে বিশেষ বরাদ্দ এনে কোন কাজ না করেই বাস্তবায়ন দেখিয়ে পুরো টাকা উত্তোলন করে নেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের কিছু কর্মকর্তা উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা, প্রকল্পবাস্তবায়ন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতাদের যোগসাজসে এসব অনিয়ম ও দূর্নীতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
চকরিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকার্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) কর্মসূচীর আওতায় স্থানীয় সংসদ সদস্যের অনুকুলে চিরিঙ্গা এলাকায় মগখাল হতে মাতামুহুরী নদী পর্যন্ত খাল খননের জন্য গত ৭ ফেব্রুয়ারী ৩০ লাখ টাকা, কাকারা এলাকায় মাতামহুরী নদীর বন্যা রোধে বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য গত ১ জুনে ১০ লাখ টাকা, বরাদ্দ দেয়া হয়।
ওই কাজগুলো শরু বা শেষ না হতেই গত ১৩ জুন দুর্যোগ ব্যবস্থপনা অধিদপ্তরের উপ পরিচালক (কাবিখা) শাখা হতে ওই দুই এলাকায় ওভারলেপিং করে আবারো চিরিঙ্গা ইউনিয়নে মগখাল পুনঃ খনন দেখিয়ে ৫৭লাখ ৯৮ হাজার ৯৬৪ টাকা, কাকারা মাঝের ফাঁড়ি ষ্টেশন হতে বেপারী পাড়া হয়ে লুটনী বটতলী রাস্তার মাথা পর্যন্ত এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণের কথা উল্লেখ করে ২৮লাখ ৯৯ হাজার ৪৮২টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
এই বিশেষ বরাদ্দের মেয়াদ গত ৩০ জুন শেষ হয়ে গেছে। এলাকাবাসি জানায়; মগখালে স্থানীয় সাংসদের অনুকুলে দেয়া ৩০লাখ টাকার কাজ দায়সারা ভাবে ও দূর্নীতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে।
ওভারলেপিং এ খালটির পুনঃ খনন কাজ কোন এলাকায় কী ভাবে করা হবে তার কিছুরই উল্লেখ করা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে একই খালটি পুনঃ খননের নামে বিশেষ বরাদ্দ এনে পুরো টাকা কাজ না করেই ৩০জুনের মধ্যেই উত্তোলন করে নেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে ওই প্রকল্পের সভাপতি, চিরিঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ জসিম উদ্দিন জানান, এসব বিশেষ বরাদ্দ গুলো আনতে মন্ত্রনালয়েই ৪০% টাকা দিয়ে দিতে হয়। তারপরও তিনি কাজ করছেন বলে দাবী করেছেন।
এলাকাবাসি জানান, ওই বরাদ্দ পাওয়ার সময় থেকে মগখালটি জলমগ্ন ছিল। জলমগ্ন অবস্থায় সেখানে খালটি খননের কোন সুযোগ নেই।
অপর দিকে কাকারা মাঝের ফাঁড়ি ষ্টেশন হতে বেপারি পাড়া হয়ে ‘প্রপার কাকারা’ পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণের কোন চিহ্ন নেই।
কাকারার মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুর রহমান জানান; মাঝের ফাঁড়ি ষ্টেশন হতে প্রপার কাকার পযন্ত কোথাও এ বছর এক কোদাল মাটিও কাটা হয়নি।
এ ব্যাপারে কাকারার চেয়ারম্যান শওকত ওসমান জানান, বেড়িবাঁধের নির্মাণ কাজ ঠিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
এলাকাবাসি জানায়, স্থানীয় সাংসদের অনুকুলে দেয়া ১০লাখ টাকার বরাদ্দ দিয়ে প্রপার কাকার হতে লুটনী পর্যন্ত বেড়িবাঁধের কাজ করা হয়েছে বলে দাবী করলে ও যে অংশ দিয়ে মাতামুহুরী নদী থেকে বন্যার পানি লোকালয়ে ঢুকে সেই অংশে বাঁধ দেয়া হয়নি।
যে অংশ দিয়ে পানি নদীতে নেমে যায় সেই অংশে বাঁধ দেয়ায় উল্টো জলবদ্ধতার সৃষ্টি করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে এই বিশেষ বরাদ্দগুলোর সিংহভাগ টাকা স্থানীয় এক রাজনৈতিক নেতা, উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা, প্রকল্পবাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের কিছু কর্মকর্তার মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে থাকে।
এ ছাড়া ও কাবিটা গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার কর্মসূচীর আওতায় অন্যান্য যে সব কাজে (কাবিটা নগদ টাকা প্রদান) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রনালয়ে নির্দেশিকা মেনে কাজ করার কথা।
কিন্তু চকরিয়ার কোথাও এ ক্ষেত্রে তার কিছুই মানা হয়নি। এসব প্রকল্পে কিছু কিছু কাজ করা হলে ও সেগুলোতেও চরম দুর্নীতি ও অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রনালয়ের সচিব শাহ কামাল জানান; এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গত ৯ জুলাই চকরিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ জোবায়ের হাসানের কাছ থেকে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে বলেছেন, কাজ যা হয়েছে সে পরিমান টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। একটু পরেই বলেছেন, কাজ শেষ হয়েছে সব টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। সবশেষে বলেছেন কাজ এখনও চলছে।