পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে টিসিবিকে কার্যকর করার আহ্বান ক্যাবের

0

নিজস্ব প্রতিবেদক::পেয়াঁজ সংকট নিরসনে বর্তমান মজুত গুলির সুষ্ঠু বন্টন নিশ্চিত, আমদানিকারক ও খুচরা পর্যায়ে ব্যবসায়ীদেরকে যথাযথ মনিটরিং নিশ্চিত করা, সংকটকালীন সময়ে টিসিবিকে দ্রুত কার্যকর করা, নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্যের বাজার তদারিকতে মোবাইল কোর্ট আইন ২০০৯ নিয়ে সৃষ্ঠ জঠিলতা নিরসন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সরকারের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বাজার মনিটরিং জোরদার করার জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে তৎপর করতে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থসংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগ ও নগর কমিটি।

বিশেষ করে ভারতে পেয়াজর মুল্য বৃদ্ধি হলে পার্শ্ববর্তী দেশ নেপাল, মায়ানমার ও পাকিস্তান থেকে পেয়াঁজ আমদানীর কোন উদ্যোগ না নিয়ে ব্যবসায়ীদের পকেট কাটার সুযোগ সৃষ্ঠি করে দিয়েছে। এছাড়াও সংকটকালীন সময়ে পেয়াঁজ সংকট মোকাবেলায় টিসিবিকে কাজে না লাগিয়ে টিসিবিকে অর্থব প্রতিষ্ঠানে পরিনত করে রেখেছেন। অন্যদিকে মোবাইল কোর্ট আইন ২০০৯ নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা সংক্রান্ত জটিলতার কারনে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা ও বাজার মনিটরিং এ অচলাবস্থা সৃষ্ঠির সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বেপরোয়া হয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে আগুন দিচ্ছে।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন ব্যবসা বানিজ্যে মূল উপসর্গ উৎপাদক, বিক্রেতা, শ্রমিক ও ভোক্তা। আর দেশে ব্যবসা বানিজ্যের স্বার্থ সংরক্ষন করতে হলে এ পক্ষগুলির স্বার্থ রক্ষা করা প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশে শুধুমাত্র ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করে যাবতীয় নীতি প্রণয়ণ করার কারনে অন্যপক্ষগুলির স্বার্থ উপেক্ষিত হয়। ফলে দেশে ন্যায্য ব্যবসার পরিবেশ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। সেকারনে ব্যবসায়ীরা নীতি নৈতিকতা বাদ দিয়ে যে যেভাবে পারে মজুত করে সরবরাহ সংকট তৈরী করে ১০০-১৫০শতাংশ পর্যন্ত লাভে পণ্য বিক্রি করছে। ভারতে পেয়াজের দামবৃদ্ধির অযুহাত তুললে বর্তমানে মুজত পেয়াঁজগুলি ৩-৬ মাসে পূর্বে আমদানি করা এবং পর্যাপ্ত মজুত থাকা সত্বেও দামবাড়িয়ে জনগনের পকেট কাটলেও সরকার আমদানিকারক ও পাইকারী ব্যবসায়ীদেরকে যথাযথ নজরদারি করেনি। অন্যদিকে পাইকারী ব্যবসায়ীদের দেখানো পথ অনুসরণ করে খুচরা ব্যবসায়ীরাও বেপরোয়া ভাবে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। দেখার জন্য বাজারেও কেউ নেই। সরকারের মাঠ পর্যায়ে নজরদারির দুর্বলতার কারনে ১৭-১৮% পর্যন্ত চালের শুল্ক হ্রাস করে চাল আমাদানির পরেও চালের বাজারে তার প্রতিফলন ঘটেনি, পুরো টাকা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিয়েছে, সেভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারও অস্থিরতা তৈরী করে পুরো টাকা হাতিয়ে নেবার পাঁয়তারা করছে একটি মহল।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরো বলেন ক্যাব দীর্ঘদিন ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্যের বিকল্প বাজার হিসাবে টিসিবিকে কার্যকর করার জন্য দাবী করলেও ব্যবসায়ী নেতারা টিসিবিকে সক্রিয় করতে সরকারকে বিভ্রান্ত করে বাঁধা প্রদান করছে। তাদের যুক্তিহলো টিসিবি অথর্ব প্রতিষ্ঠান এবং লোকসানি। যার কারনে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্যের বাজার পুরোটাই সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের দখলে, ফলে বাজারে প্রতিযোগিতা তৈরীর পরিবর্তে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্যের বাজার পুরোটাই ব্যবসায়ীদের একচেটিয়া দখলে রয়েছে।

নেৃতবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন ক্যাব বছরব্যাপী বাজার মনিটরিং এর দাবি করে আসলেও মোবাইল কোর্ট আইন’০৯ নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলার কারনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা মোবাবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে না পারায় একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে মজুতদারি, সিন্ডেকেট করে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্যের বাজারে আগুন দিচ্ছে। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের কোন প্রকার নজরদারি ও হস্তক্ষেপ না থাকায়, বাজার নিয়ন্ত্রণহীন ও অস্থির হয়ে আছে। আর ব্যবসায়ীরা এটাকে স্বাবাভিক বললেও প্রকৃতপক্ষে মধ্যবিত্ত ও সীমিত আয়ের জনগোষ্ঠির জন্য এটা বাড়তি বোঝা যা সরকারের অনেকগুলি উন্নয়ন কর্মকান্ডকে ম্লান করে দিচ্ছে।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরো বলেন দেশে পেয়াজের চাহিদা বার্ষিক ২০-২২ লাখ মেঃ টন আর দেশে উৎপাদিত হয় ১৭-১৮ লাখ মেঃটন। তবে কোরবানীর ঈদে চাহিদা একটু বাড়লেও সরবরাহ জঠিলতায় ও মজুতদারির কারনে দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের পকেট কাটে কিছু ব্যবসায়ী। আর দেশীয় কৃষকদেরকে প্রণোদনা প্রদান করা সম্ভব হলে এবং ভোক্তা হিসাবে সচেতন হলেই এই সংকট সহজেই মোকাবেলা সম্ভব। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাক্তন গর্ভনর ডঃ আতিউর রহমান পেয়াঁজ, মসলা ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্য স্বল্প সুদে কৃষি ঋন বিতরনের উদ্যোগ নিলেও ঋনগুলি প্রকৃত কৃষকের কাছে না পৌঁছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের নিজেদের চলতি ঋনগ্রহীতাদের মাঝে এসমস্ত ঋনগুলি বিতরণ করায় পেয়াজ ও মসলা উৎপাদান খাতে সরকারের প্রণোদনা গুলির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত না হওয়ায় কৃষকরা উপকৃত হয়নি। ফলে দেশীয় কৃষকের স্বার্থ রক্ষা হয়নি, দেশীয় উৎপাদকরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। যার খেসারত পুরো দেশবাসীকে দিতে হচ্ছে। তাই দেশীয় উৎপাদক ও কৃষক পর্যায়ে সরকারের প্রণোদনা ও ঋনের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।

বিবৃতিতে যারা স্বাক্ষর করেছেন তারা হলেন ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, মহানগর সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সহ-সভাপতি হাজী ইকবাল আলী আকবর ও সাধারন সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ন সম্পাদক এএম তৌহিদুল ইসলাম, দক্ষিন জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান, সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক শাহনেওয়াজ আলী মির্জা প্রমুখ।

 

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.