স্পোর্টস ডেস্ক : ক্রীড়াঙ্গনে একটি শক্তিশালী ভিত গড়ে তুলতে ১৯৭২ সালে ক্রীড়াপ্রাণ শেখ কামালের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলে ঐতিহ্যবাহী আবাহনী ক্রীড়াচক্র ক্লাব। সময়ের পথ বেয়ে যা আবাহনী লিমিটেড নাম ধারণ করেছে। বধুবার শেখ কামালের হাতে গড়া সেই প্রিয় ক্লাব প্রাঙ্গণেই যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে তার ৬৬তম জন্মবার্ষিকী। শ্রদ্ধায়-ভালবাসায় জাতি স্মরণ করেছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় ছেলে শেখ কামালের কথা। আবাহনী লিমিটেড চত্বরে বিকালে শেখ কামাল বয়সভিত্তিক ক্রীড়া একামেডির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রয়াত শেখ কামালের স্বপ্ন পূরণের প্রক্রিয়াকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিয়েছেন। এই কমপ্লেক্সের পুরো নাম রাখা হয়েছে শহীদ শেখ কামাল ক্রীড়া কমপ্লেক্স।
আবেগাপ্লুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে বলেছেন, ‘শেখ কামাল ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এবং বেঁচে থাকলে তিনি জাতিকে অনেক কিছু দিতে পারতেন।’ প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছেন, ‘আমার ভাই শেখ কামাল ছিলেন শতভাগ দেশপ্রেমিক ও নির্লোভ ব্যক্তি। স্বাধীনতার পর দেশের তরুণ প্রজন্মকে সারা বিশ্বের সামনে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন সব সময়ই দেখেছেন তিনি। প্রখর মেধাসম্পন্ন সেই ব্যক্তিটি দেশের পতাকাকে ক্রীড়াঙ্গনের মাধ্যমে সারাবিশ্ব পরিচিত করার স্বপ্নই লালন করেছেন আজীবন। এরই উজ্জ্বল উদাহরণ আবাহনী লিমিটেড।’
অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রেখেছেন আবাহনীর পরিচালক কাজী নাবিল আহমেদ। এ ছাড়া বক্তব্য রেখেছেন আবাহনীর পরিচালক ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এমপি, শেখ ফজলে নূর তাপস এমপি, শেখ কামালের সহযোগী আবাহনীর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ, পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু এবং আবাহনী সমর্থক গোষ্ঠীর সভাপতি মীর নিজামউদ্দিন আহমদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেছেন আবাহনীর ক্লাব পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারমান সালমান এফ রহমান।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র কিংবদন্তি ক্রীড়াব্যক্তিত্ব শেখ কামালের ৬৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে বিশেষ আবদানের জন্য ৬ জনকে ‘শেখ কামাল স্বর্ণপদক’প্রদান করেছেন ক্রীড়াবান্ধব প্রধানমন্ত্রী। এ বছর খেলোয়াড় বিভাগে পুরস্কার পেয়েছেন ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, ফুটবলার মামুনুল ইসলাম ও জাতীয় হকি দলের গোলরক্ষক অসীম গোপ। আর সংগঠক হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এমপি ও সাবেক সভাপতি শামসুল ইসলাম খান এবং পৃষ্ঠপোষক হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন ড. কাজী আনিস আহমেদ। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী টেবিল টেনিস লীগে হ্যাটট্রিককারী আবাহনী টেবিল টেনিস দলের কাছে ক্রেস্টও হস্তান্তর করেন। আবাহনী সমর্থক গোষ্ঠী এ পুরস্কারের মূল উদ্যোক্তা।
শেখ কামাল বয়সভিত্তিক ক্রীড়া একাডেমি হবে শেখ কামাল ক্রীড়া কমপ্লেক্সের ৫টি অংশের একটি। পুরো কমপ্লেক্সে থাকছে ৭০০ গাড়ি পার্কিং করার জন্য দুই তলা বেসমেন্ট পার্কিং, অত্যাধুনিক ক্রিকেট ও ফুটবল একাডেমি। এতে থাকবে ৪ লেনের একটি ইনডোর ক্রিকেট স্টেডিয়াম, ৫ তারা সুবিধার অত্যাধুনিক খেলোয়াড় হোস্টেল, এরোবিক্স ও যোগ ব্যায়াম করার সুবিধা, অত্যাধুনিক ফিজিও থেরাপি রুম, ভিডিও কনফারেন্স করার সুবিধা, অত্যাধুনিক লন্ড্রির ব্যবস্থা, সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন ক্লাব লাউঞ্জ, স্কোয়াশ, বিলিয়ার্ড ও স্নুকার খেলার সুবিধা, মহিলা ও পুরুষদের পৃথক সুইমিং পুল ও জিমনেসিয়াম, ছাদের ওপর টেনিস কোর্ট, স্টিম বাথ ও স্পা এবং বিশাল আকারের শেখ কামাল কনভেনশন সেন্টার। যেখানে ধানমণ্ডিবাসীরা সামাজিক ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের সুবিধা পাবেন।
উল্লেখ্য, শেখ কামাল ১৯৬৭ সালে শাহীন স্কুল থেকে এসএসসি শেষ করে ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকা কলেজে। এ সময়ে শীর্ষ পর্যায়ে বিভিন্ন খেলাধূলায় অংশ নিয়ে সুনাম কুড়িয়েছেন তিনি। পরর্বতীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে নিয়মিত ক্রিকেট, ভলিবল খেলেছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পুরো পরিবারকে হত্যা করেছে। ঘাতকের বুলেট কেড়ে নিয়েছে ক্রীড়ানুরাগী শেখ কামালেরও প্রাণ। তবে স্তব্ধ করে দিতে পারেনি শেখ কামালের স্বপ্নকে।
বঙ্গবন্ধু যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে ব্যস্ত সময় পার করছেন, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শেখ কামাল শুরু করেছেন দেশের ক্রীড়া আর সংস্কৃতি অঙ্গনকে বিশ্ব-দরবারে প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়নের কর্মযজ্ঞ। নতুন স্বাধীন দেশ। ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে স্বপ্ন তখন ঘুরে দাঁড়ানোর। শেখ কামাল এমন বাস্তবায়তায় একজন অন্যরকম যোদ্ধা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন খেলাধূলাকেই। আবাহনীকে নিয়ে শেখ কামালের যে স্বপ্ন তা আরো বড় হয়ে রূপ পাচ্ছে আবাহনী ক্রীড়া কমপ্লেক্সে।