স্পোর্টস ডেস্ক::অস্ট্রেলিয়াকে ২১৭ রানে আটকে দিয়ে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ভালোই এগিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে দুঃস্বপ্নের মতো শুরুটা এবার হয়নি। তবে আফসোস দিয়েই শেষ হয় দিনটি। সৌম্য সরকারের উচ্চাভিলাসী শটটিই শেষ বিকেলে আক্ষেপে পুড়িয়েছে টাইগারদের। তা না হলে তৃতীয় দিনের শুরুটা ১০টি উইকেট হাতেই নিয়েই শুরু করতে পারতো। তবে অসাধারণ এই দিনের স্বস্তি, দিনশেষে ৮৮ রানে এগিয়ে আছে টাইগাররা। মিরপুরে দ্বিতীয় দিনটা্ তারা শেষ করেছে ১ উইকেটে ৪৫ রান তুলে। এর আগে বাংলাদেশের ২৬০ রানের জবাবে ২১৭ রানে অল আউট হয় স্টিভেন স্মিথের দল। ৪৩ রানের লিড পায় মুশফিকুর রহীমের দল। সাকিব আল হাসান ৫ উইকেট নিয়ে বিরল এক রেকর্ড গড়ে ফেলে ধসিয়েছেন অসিদের।
দ্বিতীয় ইনিংসে সতর্ক সূচনাই করেছিল বাংলাদেশ। স্বভাবে তামিম ইকবাল ও সৌম্য দুইজনই আগ্রাসী ব্যাটসম্যান। তবে দেখেশুনেই ব্যাট করছিলেন তারা। ৪৩ রানের জুটিও হয়ে গেল অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের হতাশ করে। তবে দিনের শেষ ওভারের আগে হঠাৎ ছয়ের নেশায় পেয়ে বসে সৌম্যকে। স্পিনার অ্যাস্টন অ্যাগারের বলে ডাউন দ্য উইকেট গিয়ে তুলে মেরে আকাশে বল উঠালেন। মিড অন থেকে লং অনে পিছিয়ে সে ক্যাচ চার বারের চেষ্টায় লুফে নেন উসমান খাজা। ফলে ১৫ রানে বিদায় তার। তবে অপর প্রান্তে ঠাণ্ডা মাথায় খেলেছেন তামিম। ৩০ রানে অপরাজিত তিনি। তার সঙ্গী নাইটওয়াচম্যান এবং হালে বেশ ব্যাটিং প্র্যাকটিস করতে থাকা তাইজুল ইসলাম। তার রানের খাতা অবশ্য এখনো খোলেনি।
‘স্মিথই আমাদের বড় হুমকি’ আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই বলেছিলেন সাকিব আল হাসান। তার কথা শুনেই হয়তো সোমবার দায়িত্বটা নিয়েছিলেন মিরাজ। দারুণ এক ফ্লাইট ডেলিভারিতে বোকা বানিয়েছেন অসি অধিনায়ককে। তাও দিনের তৃতীয় ওভারেই। এর চেয়ে দারুণ শুরু আর কি হতে পারতো! ভারতে চার টেস্টে কদিন আগে স্পিন খেলার মাস্টার স্মিথ ৩টি সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে এসেছেন। ফুটওয়ার্কেও অসাধারণ। তবে দিনের এমন শুরুর মতো টপটপ উইকেট তুলে নিয়ে শেষ করতে পারলেন না টাইগাররা। বোলারদের পক্ষ থেকে চেষ্টার কমতি ছিল না। মিরাজ আর সাকিবের বলে রীতিমত কাঁপছিল অজিরা। কিন্তু ফিল্ডারদের দায় ছাড়া ফিল্ডিংয়েই দুশো পেরিয়ে যায় স্মিথের দল। যা আসলে হওয়ার কথা ছিল না।
চলতি বছরের গোড়ায় ভারতে এমনই স্পিনিং উইকেটে ফাঁদে পড়েছিল অস্ট্রেলিয়া। বেঙ্গালুরুতে ১১২ রানে অলআউট হওয়ার পর ধর্মশালায় ১৩৭ রানে অলআউট হয়েছিল দলটি। মিরপুরেও এমন কিছুরই আভাস ছিল। ৩৩ রানে ৪ উইকেট হারানো দলটি সে শঙ্কা দূর করে দেয় ম্যাট রেনশ- পিটার হ্যান্ডসকম্বের ৬৯ রানের জুটিতে। তবে এটুকু পথ পাড়ি দিতে গিয়ে রেনশ একাই তিন তিনবার সুযোগ দিয়েছিলেন টাইগারদের। তা লুফে নিতে পারেননি সৌম্য-মোস্তাফিজরা।
দলীয় ১০২ রানের সময় বিপজ্জনক হয়ে ওঠা জুটি ভাঙ্গেন তাইজুল। এলবিডাব্লিউর ফাঁদে ফেলেন হ্যান্ডসকম্বকে। এরপর প্রান্ত বদল করে প্রথম বলেই সাফল্য পান সাকিব আল হাসান। ভাগ্যের ছোঁয়া এবার আর পাননি রেনশ। স্লিপে এবার তার ক্যাচ তালুবন্দি করতে পেরেছেন সৌম্য। ভাগ্যদেবী যে তখন বাংলাদেশের পক্ষ নিয়েছেন তা বোঝা গেল ম্যাথু ওয়েডের আউটে। মিরাজের বলে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে পড়েন তিনি। তবে হক আইতে দেখা গেছে বলটি লেগ স্টাম্প মিস করছিল।
১২৪ রানে ৭ উইকেট তুলে নেওয়ার পর টাইগারদের বড় বাধা ছিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ভারতে সেঞ্চুরি করেছেন। ভালো ব্যাট করেছেন স্পিনের বিপক্ষে ওখানে। আগ্রাসী ব্যাটসম্যান অবশ্য ঢাকার প্রথম ইনিংসে খুব একটা ভোগাতে পারেনি বাংলাদেশকে। এগিয়ে এসে খেলতে গিয়ে সাকিবের ঘূর্ণিতে বিভ্রান্ত হন। বল ধরে স্টাম্প ভাঙতে ভুল করেননি মুশফিক। দলীয় স্কোরে ২০ রান যোগ করে ব্যক্তিগত ২৩ রানে আউট হন ম্যাক্সওয়েল।
তবে বরাবরের মতো বাংলাদেশকে ভুগিয়েছে প্রতিপক্ষের সেই লেজের দিকের ব্যাটসম্যানরা। অবশ্য ভোগান্তিটা মুশফিকরা নিজেরাই কিনে আনেন অনেকটা। দলীয় ১২৯ রানে অ্যাগারের সহজ স্টাম্পিং মিস করেন অধিনায়ক মুশফিকই। অ্যাগার তখন রানের খাতাই খুলতে পারেননি। জীবন পেয়ে থিতু হয়ে খেলতে থাকেন তিনি। আর তার সঙ্গী প্যাট কামিন্সকেও ফেরানোর সহজ সুযোগই পেয়েছিল টাইগাররা। সাকিবের ফ্লাইটেড বলে খেলতে গিয়ে আকাশে উঠিয়ে দেন কামিন্স। তবে সে ক্যাচ তালুবন্দি করতে পারেননি শফিউল ইসলাম। আহা! কি অপচয়!
জীবন পেয়ে কিছুটা রক্ষণাত্মক হয়ে যান কামিন্স। অ্যাগারকে নিয়ে ধীর গতিতে এগিয়ে যেতে থাকেন। দলের রান বাড়াতে হবে। তবে দলীয় ১৯৩ রানে কামিন্সকে থামান সাকিব। তবে এর মাঝেই দলের জন্য অতিমূল্যবান ৪৯ রানের জুটি গড়েন তারা। শেষ উইকেটেও আসে ২৪ রানের জুটি। হার না মানা ৪৩ রানের ইনিংস খেলেন অ্যাগার। হ্যাজলউডকে ইমরুলের ক্যাচে পরিণত করে বিরল এক রেকর্ড গড়েন সাকিব। টেস্ট ক্রিকেটের সবগুলো দলের বিপক্ষে পাঁচ উইকেট তুলে নেওয়ার অভিজাত ক্লাবের মাত্র চতুর্থ সদস্য হয়েছেন বিশ্বের সেরা অল রাউন্ডার। ততক্ষণে অস্ট্রেলিয়া পায় ২১৭ রানের লড়াকু স্কোর। বাংলাদেশ পায় ৪৩ রানের লিড। অস্ট্রেলিয়ার রানটা অতো কমও না উইকেটের কারণে।
সংক্ষিপ্ত ইনিংস :
(দ্বিতীয় দিনশেষে)
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস : ৪৫/১ (২২ ওভার) (তামিম৩০*, সৌম্য ১৫, তাইজুল ০*; অ্যাগার ১/৯)
অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস : ২১৭/১০ (৭৪.৫ ওভার) (রেনশ ৪৫, অ্যাগার ৪১*, হ্যান্ডসকম্ব ৩৩, কামিন্স ২৫, ম্যাক্সওয়েল ২৩, ওয়ার্নার ৮, স্মিথ ৮, ওয়েড ৫, হ্যাজেলউড ৫, খাজা ১, লায়ন ০; সাকিব ৫/৬৮, মিরাজ ৩/৬২, তাইজুল ১/৩২)।
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ২৬০/১০ (৭৮.৫ ওভার)।