সীমান্তের পরিস্থিতি অপরিবর্তিত : ক্রমশ জড়ো হচ্ছে রোহিঙ্গা

0

শহিদুল ইসলাম, উখিয়া,সিটিনিউজ : মায়ানমারে সহিংসতার ৫ম দিন রাতের আধাঁরে হাজারো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। আরাকান রাজ্যের বিভিন্ন গ্রামে অগ্নিকান্ডে আগুনের লেলিহান শিখা সীমান্ত এলাকা থেকে দেখা যাচ্ছে। আতংকিত রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের উখিয়া – টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে এপারে ঢুকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও আত্মীয় স্বজনের বাড়ীতে আশ্রয় নিচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। উখিয়া সংলগ্ন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্ত পয়েন্টে দিয়ে পাঁচ হাজারের বেশী রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় আছে। ওই এলাকার জিরো পয়েন্টে প্রায় এক হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে গিয়ে বিজিবির হাতে আটকা পড়েছে।

সীমান্তে জড়ো হয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের আতঙ্কিত করতে মিয়ানমার বিজিপি সকালে গুলি ছুঁড়েছে এবং বিজিপির ছোঁড়া তিনটি গুলি তুমব্রু বাজারে এসে পড়েছে। তবে কারও কোনো ক্ষতি হয়নি। দিশেহারা রোহিঙ্গাদের আর্তনাদে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠে। বিজিবি সীমান্তে কড়া পাহারায় রয়েছে এবং অতিরিক্ত টহল জোরদার করেছে। উখিয়ার পার্শ্ববর্তী ঘুমধুম, তুমব্রু, জলপাইতলীর নুরুল ইসলামের আমবাগান, পশ্চিমকুলের বাশঁ বাগান, উখিয়ার রহমতের বিল, ধামনখালী, বালুখালী, পালংখালী পয়েন্ট দিয়ে দিন -দিন রোহিঙ্গারা জিরো পয়েন্টে জটলা বাধছে।
সীমান্তের পরিস্থিতি দেখতে ২৭ আগস্ট রবিবার বিকালে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন মিয়ানমার সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের ঘুমধুম জলপাইতলী এলাকা পরিদর্শণ করেছেন।

সীমান্ত পরিদর্শণ শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘বাংলাদেশ অভ্যান্তরে অনুপ্রবেশ কঠোর হস্তে দমন করা হবে। কোন রোহিঙ্গা যাতে বাংলাদেশ অভ্যান্তরে প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য বিজিবি করণীয় সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। কোন সীমান্ত অরক্ষিত থাকবেনা। সীমান্ত প্রহরায় জোরদার করতে অতিরিক্ত ১৫ হাজার বিজিবির সদস্য এখানে বাড়ানো হচ্ছে”। তিনি আরো বলেন, “আমরা ( বাংলাদেশের মানুষ) বীরের জাতি। আমরা যুদ্ধ করে এদেশ স্বাধীন করেছি। স্বাধীন দেশের ফসল আমরাই ভোগ করবো।

কোন অপশক্তিকে এদেশের ভুখন্ড অনৈতিক ভাবে ব্যবহার করতে দেবোনা। যেকোন সন্ত্রাসীর অপকর্ম আমরা রুখে দিতে প্রস্তুত। নতুন আসা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে দিতে পররাষ্ট্র নীতির মাধ্যমে আলোচনা হচ্ছে। নতুন করে কোন রোহিঙ্গার অস্তিত্ব আমরা দেখতে চাইনা”। এক প্রশ্নের জবাবে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, “মিয়ানমারের সরকারের কাছে আনান কমিশন রির্পোট দিয়েছে, বাংলাদেশ মনে করে মিয়ানমার সরকার তা বাস্তবায়ন করবে”।

তিনি গনমাধ্যম কর্মীদের আহবান জানিয়ে বলেন, “রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে শুধু এপারের ঘটনা প্রকাশ করলে হবেনা, পাশাপাশি মিয়ানমারের অভ্যান্তরিন ঘটনাা প্রবাহও তুলে ধরতে হবে”। সীমান্ত সুরক্ষিত রাখতে বিভিন্ন পয়েন্টের সেন্ট্রি পোষ্ট গুলোর আধুনিকায়ন এবং টেকসই মজবুত করা হবে। বাংলাদেশের ভুখন্ডে কোন বিদেশী নাগরিককে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালাতে দেওয়া হবেনা বলেও পুনরোল্লেখ করেন বিজিবি ডিজি মোঃ আবুল হোসেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রামের রিজিওনাল কমান্ডার কর্ণেল আলিফ, কক্সবাজারের সেক্টর কমান্ডার আনোয়ারুল আজিম, বান্দরবান জেলা প্রশাসক দীলিপ কুমার বণিক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান, ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্ণেল মঞ্জুরুল হাসান খান, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম সরওয়ার কামাল, ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ।

এদিকে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা টেকনাফের হোয়াইক্যং উলুবনিয়া, লম্বাবিল, খারাইংগ্যা ঘোনা, উখিয়ার পালংখালী এলাকা দিয়ে শত শত রোহিঙ্গা নাফনদী অতিক্রম করে সীমান্তের উপকূলীয় বিভিন্ন কেওড়া বনে লুকিয়ে থাকছে বলে জানা গেছে। এসব রোহিঙ্গারা রাতের আধারে অনুপ্রবেশ করে টেকনাফের লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প, নয়াপাড়া শারণার্থী ক্যাস্প, উখিয়া কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্প, কুতুপালং ও বালুখালী অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাস্পে সুযোগ বুঝে আশ্রয় নিচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, মিয়ানমার সেনাবাহীনি ঘর বাড়ী জ্বালিয়ে দিচ্ছে। পুুরুষদের ধরে গুলি করে হত্যা করছে। মহিলাদের নির্যাতন ও ধর্ষণ করা হচ্ছে। রোহিঙ্গারা আতংকে পাহাড়, ধান ক্ষেতে ও বনজঙ্গলে পালিয়ে লুকিয়ে আছে। হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। কিন্তু বিজিবি বাধা দেওয়ায় কেউ ঢুকতে পারছেনা। তারা রাতের আধারে বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে অনুপ্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে বলে জানান। পালিয়ে আসা মিয়ানমারের ঢেকিবনিয়ার দিল মোহাম্মদ ও মিনারা বেগম জানান, সেনা বাহিনীরা গ্রামে ঢুকে অত্যাচার করছে। পুরুষদের ধরে নির্যাতন চালিয়ে গুলি করে হত্যা করছে। গ্রামে অগ্নি সংযোগ করে গোটা গ্রাম জ্বালিয়ে দিচ্ছে।

প্রায় চারদিন ধরে খাবার নেই। রোববার মিয়ানমার ঢেকিবুনিয়া তুমব্রু থেকে এসে এপারের ঘুমধুম এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে এক হাজারের অধিক রোহিঙ্গা নরনারী শিশু। এর মধ্যে আবদুল্লাহ (১৮), জাহেদা বেগম (১৯), জয়নাল উদ্দিন (১২), আবুল কালাম (৬৭), তার স্ত্রী ওয়াজ খাতুন (৫০), রশিদ আহমদ (৬৫), জুহুরা বেগম (৪৫), রোকিয়া বেগম (২০), ছৈয়দা (১৭), মুজিবুর রহমান (৪৭), রশিদ (৩৫), আব্বাস (১২), ইউনুছ (৭), হাবিবা (৪), ওমাইর (৮ মাস), আছমা (১৯), এদের সাথে কথা হলে তারা জানান, মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনরা তাদের ঘর বাড়িতে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে।

সহায় সম্পদ নিয়ে যাচ্ছে এবং মেয়েদের চরম নির্যাতন চালাচ্ছে। আর পুরুষদের ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। এ কারণে প্রাণ বাঁচাতে তারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে। বালুখালী ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা মরিয়ম বেগম (৫৫) বেগম, তার স্বামী ও ছেলেকে গুলি করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী হত্যা করেছে। তাই সে পালিয়ে এসেছে।

রাখাইন রাজ্যে এক রাতে ৩০টি পুলিশ পোস্টে হামলার পর সেই দেশের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা গোষ্ঠির উপর দমন নীপড়ন, হত্যাহসহ ভয়াবহ অত্যাচার বাড়িয়েছে বলে আগত রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন। অত্যাচারের মাত্রা দিন -দিন বাড়ছে, ফলে বাড়ছে উৎকণ্ঠাও।

 

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.