রোহিঙ্গাদের ভোটার সহযোগিতায় ফৌজদারি মামলার নির্দেশ ইসি’র

0

সিটিনিউজ ডেস্ক :: ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের ভোটার বানাতে যে কোনো ধরনের সহায়তা করলেই আইন অনুযায়ী ফৌজদারি মামলা করা হবে। এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান ও রাঙামাটির ৩০ উপজেলার কর্মকর্তাদের নিয়ে ইসির বৈঠকের কার্যবিবরণীতে দেখা যায়, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কিছু অসাধু ব্যক্তির বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতার অভিযোগ করেছেন প্রশাসন, পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মককর্তারা।

এছাড়া বাংলাদেশি নারী-পুরুষদের মা-বাবা সাজিয়ে রোহিঙ্গাদের ভোটার হিসেবে নিবন্ধনের আবেদন করা হচ্ছে বলেও সভায় জানানো হয়।

নির্বাচন কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানান, রোহিঙ্গারা যাতে ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হতে না পারে, সেজন্য ‘কঠোর নির্দেশনা’ দেয়া হয়েছে কমিশনের পক্ষ থেকে।

এ বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে ইসি সচিবালয়ের পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগকে চিঠি দেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

কোনো জনপ্রতিনিধি রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে ভোটার হতে সহযোগিতা করলে, বাবা-মা হিসেবে কেউ ভুয়া পরিচয় দিলে অথবা অন্য কোনোভাবে কেউ সহযোগিতা করলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান ও রাঙামাটিতে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদে ঢুকে পড়ছে কিনা- সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে সংশ্লিষ্ট ৩০ উপজেলার কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকও করেছে ইসি।

 ‘অভিযোগ রয়েছে, বিশেষ এলাকাগুলোয় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে জাল/ভুয়া জন্মসনদ ও নাগরিকত্ব সনদ সংগ্রহ করে এবং ভুয়া বাবা-মা হিসেবে প্রক্সি নিয়ে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের ভোটার হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।

কিছু অসাধু জনপ্রতিনিধিও রোহিঙ্গাদের ভোটার করতে অপতৎপরতা চালাচ্ছেন; হালনাগাদ কাজে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের চাপও দিচ্ছেন তারা।’

অনেকে নিজেদের জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মসনদ ও অন্যান্য কাগজপত্র ভোটার হওয়ার জন্য রোহিঙ্গাদের কাছে বিক্রি করছে বা ভাড়া দিচ্ছে বলেও ওই বৈঠকে জানান তিনি।

প্রতিবেশী দেশ মায়ানমারে নিপীড়নের মুখে গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলমান।

বাংলাদেশ সরকার তাদের ফেরত নেয়ার আহ্বান জানিয়ে এলেও মায়ানমার তাতে সাড়া দেয়নি। রোহিঙ্গাদের তারা নাগরিক হিসেবেও মেনে নিতে নারাজ।

এই প্রেক্ষাপটে ২০০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরির কাজ শুরুর পর হালনাগাদের সময় রোহিঙ্গা সন্দেহে ৫০ হাজার আবেদন বাতিল করেছিল নির্বাচন কমিশন।

এদিকে ২৪ অগাস্ট মায়ানমারের রাখাইনে পুলিশ পোস্ট ও সেনাক্যাম্পে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর সীমান্তে নতুন করে রোহিঙ্গাদের ঢল নেমেছে।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের সূত্রমতে, ১১ দিনে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গার সংখ্যা ৯০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

২০ আগস্ট সারাদেশে শুরু হওয়া ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রমে নতুন করে ২৫ লাখের বেশি নাগরিকের তথ্য নেয়া হয়েছে। তাদের ছবি তোলার পর এখন চলছে নিবন্ধনের কাজ।

এই তালিকায় যাতে রোহিঙ্গারা ঢুকতে না পারে সে বিষয়েই মাঠ কর্মকর্তাদের সতর্ক করছে কমিশন।

উল্লেখ্য, কুতুপালং এলাকার জনপ্রতিনিধি বখতিয়ার আহমেদ বলেন, দিনে নাফনদীর পাড়ে অপেক্ষায় থাকা রোহিঙ্গারা রাতে আধারে ডুকে পড়ছে বাংলাদেশে। সীমান্তের অরক্ষিত অংশকে বেচে নিচ্ছে দালালরা।

দালাল চক্র টাকা হাতিয়ে নিয়ে অনুপ্রবেশে সহযোগীতা দিচ্ছে। তার পর সুযোগ বুঝে কক্সবাজার ও বান্দরবান হয়ে লোকালয়ে মুল জনস্রোতে মিশে যাচেছ।

কেউ কেউ ডুকে পড়েছে শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে। আরো কয়েক হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় আছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.