মিয়ানমারে অর্থনৈতিক অবরোধ চায় এইচআরডব্লিউ

0

আন্তর্জাতিক ডেস্ক::সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর জাতিগত নিধন চালিয়ে তাদের বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য করার দায়ে মিয়ানমারের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ ও দেশটির সেনাবাহিনীর ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।

গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা পুলিশ চৌকি ও সেনা শিবিরে হামলা চালায়। এতে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে শতাধিক নিহত হয়, যাদের মধ্যে ১২ জন পুলিশ ও নিরাপত্তা সদস্য, বাকিরা রোহিঙ্গা বিদ্রোহী।

এ অভিযানকে ঘিরে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলোতে অভিযান চালাচ্ছে। তারা বেসামরিক রোহিঙ্গাদের লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি করছে এবং তাদের গ্রামগুলো আগুনে পুড়িয়ে দিচ্ছে।

জাতিসংঘ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বরতাকে জাতিগত নিধন অভিযান বলে আখ্যা দিয়ে বলছে- এ পর্যন্ত তিন হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে এবং প্রায় চার লাখ ১০ হাজার মানুষ পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

মানবাধিকার পর্যবেক্ষক ও পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা বলছে, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাখাইন সন্ত্রাসীরা এক যোগে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালাচ্ছে এবং তাদের দেশ ছাড়া করতে আগুন দিচ্ছে।

তবে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমার এ অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলছে, তারা ২৫ আগস্টের হামলাকারী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সদস্যদের বিতাড়ন করতে অভিযান চালাচ্ছে। গত বছরের অক্টোবরেও আরসার বিরুদ্ধে অভিযানের নাম করে রোহিঙ্গাদের হত্যা-ধর্ষণ-নির্যাতন করে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছিল।

এইচআরডব্লিউ বলছে, রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংস চালানো এবং তাদের উদ্বাস্তু করে দেশছাড়া করায় মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীকে কঠোর সমালোচনা করে আসছেন বিশ্ব নেতারা। তবে এখন এমন কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার সময় এসেছে যেন মিয়ানমারের জেনারেলরা তা উপেক্ষা করতে না পারে।

সংস্থাটি এক বিবৃতিতে বলে, রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ‘জাতিগত নিধন’ অভিযান বন্ধ করতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিল এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর উচিত মিয়াপনমারের ওপর কঠোর অর্থনৈতিক অবরোধ ও অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত।

রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংস হামলা বন্ধ না করায় মিয়ানামারের নেত্রী এবং নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অংসান সুচি আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র সমালোচনা মুখে পড়েছেন।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এখনো দেশটির নিরাপত্তা নীতি নিয়ন্ত্রণ করে এবং তারা দেশটির রোহিঙ্গা জনগণের প্রতি মোটেই সহমর্মীতা পোষণ করে না। বরং রাখাইন রাজ্যে সেনা বাহিনী যে দমনাভিযান চালাচ্ছে তা মিয়ানমারে বেশ বড় সমর্থন পেয়ে আসছে।

এদিকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আগামীকাল মঙ্গলবার দেশটির নেত্রী ও রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সুচি প্রথমবারে মতো জাতির উদ্দেশ্য ভাষণ দেবেন।

রাখাইনে বেসামরিক মানুষকে সুরক্ষা দিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। চলতি সপ্তাহে দেশটির উপ সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্যাট্রিক মারফির মিয়ানমার সফর করার কথা রয়েছে।

তিনি রাখাইনের রাজধানী সিতওয়ে সরকারি কর্মকর্তা ও রোহিঙ্গাসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। তবে রাখাইনের যে এলাকায় সংঘাত চলছে সেসব এলাকায় সরেজমিনে যাবেন না তিনি।

গুরুতর নির্যাতনে জড়িত থাকার অভিযোগে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা এবং তাদের সম্পদ বাজেয়াফত করতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এইচআরডব্লিউ।

সংস্থাটি মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওপর থাকা বিদ্যমান অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার পরিধি বাড়ানোসহ সব ধরনের সামরিক অস্ত্র বিক্রি, সহযোগিতা ও সহযোগিতার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার দাবি জানিয়েছে।

এছাড়াও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মালিকানাধীন প্রধান প্রধান সব ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে বলেছে ওয়াশিংটন ভিত্তিক সংস্থাটি।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.