রোহিঙ্গা ইস্যুতে উদ্বিগ্ন চাকমা অধিবাসীরা: দেবাশীষ রায়

0

সাইফুল উদ্দীন, রাঙামাটি প্রতিনিধি:সংখ্যালঘু রাখাইন রাজ্য-বাসীর প্রতি বার্মার সরকারের বৈষম্যমূলক, হিংসাত্মক এবং মানবাধিকারবিরোধী ও মানবতাবিরোধী কর্মকান্ডকে তীব্র নিন্দা জানিয়ে চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় জানিয়েছেন, মায়ানমার বা বার্মার রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে কয়েক লক্ষ ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নারী, পুরুষ ও শিশুর মর্মান্তিক অবস্থায় আগমনে চাকমা সার্কেলের অধিবাসীগণ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

রোববার রাজবাড়ীর তাঁর নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই বক্তব্য তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, মৌলিকভাবে আমরা বাংলাদেশ সরকারের অবস্থানের সাথে সহমত পোষণ করি। এই শরণার্থীদেরকে যথা শীঘ্রই সম্ভব তাঁদের স্ব স্ব গ্রামে, সম্মানজনকভাবে, নিরাপদভাবে ও যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান সাপেক্ষে প্রত্যাবর্তনের উদ্দ্যেশ্যে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।

তবে, যতদিন পর্যন্ত তা সম্ভবপর না হয়, তাঁদেরকে বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে যথাযথ আশ্রয় প্রদান করা বাংলাদেশ সরকারের ও দেশের মানুষের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার, সংশ্লিষ্ট জাতিসংঘের সংস্থা ও বেসরকারি সংগঠনের কাছে পর্যাপ্ত আর্থিক ও অন্যান্যভাবে যথাযথ সহায়তা প্রদানের জন্য দেশের নাগরিক ও আন্তর্জাতিক মহলকে আহবান জানাচ্ছি।
দেশে শরণার্থীরা অবস্থানকালে তাঁদের নিজস্ব নিরাপত্তা ও সার্বিক কল্যাণার্থে, এবং বাংলাদেশের ও তাঁর নাগরিকগণের কল্যাণার্থে, নিশ্চিত করা প্রয়োজন যে শরণার্থীরা কেবল নির্দিষ্ট শরণার্থী শিবিরেই বসবাস করেন।

দেশের অভ্যন্তরে রাখাইন রাজ্যের শরণার্থীদের প্রতি তাঁদের স্বদেশে অত্যাচার ও বাংলাদেশে তাঁদের আগমনকে ঘিরে নানা প্রচার, অপ-প্রচার, গুজব এবং সীমিত পর্যায়ের হিংসাত্মক ঘটনা বা সে রকম ঘটনার উসকানির কথা আমরা জানতে পেরেছি। চট্টগ্রাম, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে কর্মরত বা বসবাসরত পার্বত্য চট্টগ্রামের একাধিক পাহাড়ি ব্যক্তি তাঁদের জাতিগত বা ধর্মগত পরিচয়ের কারণে কটাক্ষ উক্তি, হুমকি এবং হিংসাত্মক ও অন্যান্যভাবে অনাকাক্সিক্ষত আচরণের শিকার হয়েছেন মর্মে আমরা জেনেছি, এটা সংশয়ের বিষয়। এবং আমরা এ ব্যাপারে তীব্র নিন্দা জানাই।
যেহেতু বার্মার সংখ্যা-গুরু সম্প্রদায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী, এবং শরণার্থীদের সিংহভাগ মুসলিম ধর্মাবলম্বী, বিষয়টাকে অহেতুকভাবে ধর্মগত সা¤প্রদায়িক দ্বন্দ্ব হিসেবে কোন কোন মহল থেকে অপব্যাখ্যা প্রদান করা হচ্ছে। এসবের অসংযত বহিঃপ্রকাশের ফলে সাম্প্র দায়িকতা বেড়ে যাচ্ছে, এবং অহেতুকভাবে দেশের বৌদ্ধদেরকে রাখাইন রাজ্যের মুসলমানদের নিপীড়নের জন্য দায়ী করা হচ্ছে।
তবে বাস্তবে দেখা যায় যে, মায়ানমার সরকারের হাতে, বিশেষ করে সামরিক শাসনামলে, নিপীড়নের শিকার হয়েছে শুধু অ-বৌদ্ধ স¤প্রদায় নয়। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সংখ্যাগুরু বামার সম্প্রদায়, এবং শ্যান, রাখাইন, মোন, ক্যারেনসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নর নারী ও অগণিত ক্ষেত্রে অত্যাচার ও বৈষম্যের শিকার হয়েছেন।

এছাড়া, ঐতিহাসিকভাবে দেখা যায় যে বার্মা থেকে ভারতীয় ও বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নিপীড়নমূলক কর্মকান্ডের ফলে হাজার হাজার মুসলিম, হিন্দু, শিখ ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষ (বিশেষ করে বড়ুয়া স¤প্রদায়ের) বার্মা থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন, অন্যান্যের মধ্যে, ১৯৩০, ১৯৪৪-৪৫ ও ১৯৬২ সনে।

বার্মা-বাংলাদেশ সীমান্তে, আন্তর্জাতিক সীমান্তের উভয় পাশে, দীর্ঘকাল ধরে বসবাসরত বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী রয়েছে। এসব জাতিগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে জাতিগত, ভাষাগত ও কৃষ্টিগত ঐতিহ্য একই ধারায় গাঁথা। অন্যতম  (১) ‘রহিঙ্গা’ ও চাটগাঁইয়া ভাষাভাষী বাঙালি; (২) মারমা ও রাখাইন; (৩) চাকমা, তংচংগ্যা ও দৈনাক; (৪) বম, লুশাই ও চীন; (৫) খুমি, ম্রো, প্রভৃতি। নিকটবর্তী ভারতীয় সীমান্তের ওপারেও এ সকল অনেক জাতিগোষ্ঠীর বা তাঁদের গোত্রগত আত্মীয়দের বসবাস রয়েছে।

মানবাধিকারের দৃষ্টিতে, আন্তঃরাষ্ট্রীয় শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে, এবং বাণিজ্যের কারণে সীমান্তের উভয় দিকে বসবাসকারী জাতিগোষ্ঠীসমূহের সৎভাব বজায় রাখা অপরিহার্য। একই কারণে বাংলাদেশে বসবাসরত নাগরিকদের, বাঙালি, পাহাড়ি ও অন্যান্য আদিবাসী, মুসলমান, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ও অন্যান্য ধর্ম বা আধ্যাত্মিকতায় বিশ্বাসী স¤প্রদায়গুলোর মধ্যেও সৎভাব বজায় রাখতে হবে। বাংলাদেশ সরকারের সজাগ থাকতে হবে যাতে ‘রোহিঙ্গা’-দের কোন অংশের কোন রকমের সশস্ত্র ও অন্যান্য হিংসাত্মক কার্যকলাপ বাংলাদেশে বা বার্মার মাটিতে সংঘটিত না হয়। এসময় তিনি সাতটি বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

 

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.