সূর্যকে স্পর্শ করতে মহাকাশে নাসার মিশন
আন্তর্জাতিক ডেক্স : গ্রহ, উপগ্রহ এমনকি ধূমকেতু অভিমুখে মহাকাশ যান পাঠানোর কথা আমরা শুনেছি। কিন্তু এবার পাঠানো হচ্ছে সূর্যের দিকে, যার নাম পার্কার। উদ্দেশ্য সূর্যকে স্পর্শ করা।
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা- নাসার এই যানটিই হবে মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে প্রথম কোন স্পেইসক্রাফ্ট যা সূর্যের পরিমণ্ডলের গভীরে প্রবেশ করবে।
পার্কার তৈরি করে এই যানটিকে মহাকাশে পাঠাতে নাসার খরচ হবে প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার। এর আকার হবে ছোট্ট একটি গাড়ির সমান। সূর্য থেকে প্রায় ৪০ লক্ষ মাইল দূরে থেকে এই যানটি ওই তারার চারদিকে ঘুরতে থাকবে।
এই যানটি উৎক্ষেপণ করা হবে আগামী বছরের জুন মাসে। কিন্তু নাসা বলছে, এটি সূর্যের চারদিকে ঘুরতে শুরু করবে ২০২৪ সাল থেকে।
সূর্যের উপরি-পৃষ্ঠ অত্যন্ত গরম। সেখানকার তাপমাত্রা ১০ হাজার ডিগ্রি ফারেনহাইটেরও বেশি।
আর একারণে পার্কারের জন্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে টিকে থাকা। সূর্যের পরিমণ্ডল বা ফটোস্ফিয়ারের যে জায়গায় থেকে এটি ঘুরতে থাকবে সেখানকার তাপমাত্রা ১৩০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা আড়াই হাজার ডিগ্রি ফারেনহাইট।।
সূর্যের বাইরের এটমোসফেয়ারের পরিবেশ আরো কঠিন ও জটিল। প্রচণ্ড তাপমাত্রার সাথে আছে তেজস্ক্রিয় রশ্মির বিকিরণ।
এসবের মুখোমুখি হয়ে পার্কার জানার চেষ্টা করবে সূর্যের গঠন এবং এই বৃহদাকার তারকাটি ঠিক কিভাবে কাজ করে সেসব বিষয়ে।
সূর্যের চারদিকে এর ছুটে চলার গতি হবে ঘণ্টায় চার লক্ষ ৩০ হাজার মাইল। এই গতিতে ছুটে গেলে অ্যামেরিকার নিউ ইয়র্ক থেকে জাপানের টোকিওতে যেতে লাগবে এক মিনিটেরও কম সময়।
নাসার এই মিশনের বিজ্ঞানী নিকি ফক্স বলছেন, বিশাল সূর্যের চারদিকে পার্কার ঘুরবে মোট ২৪ বার।
সূর্যের পরিমণ্ডলে প্রচণ্ড তাপমাত্রাকে উপেক্ষা করে টিকে থাকাই পার্কারের জন্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
“সূর্যের চারদিকে গ্যাসের যে পরিবেশ আমরা সেই করোনার ভেতরে প্রবেশ করবো। এই এলাকার রহস্য উন্মোচন করতে বহু বিজ্ঞানী দশকের পর দশক ধরে গবেষণা করেছেন। শেষ পর্যন্ত আমরাও এখন সেখানে একটি মিশন পাঠাচ্ছি যা এসব রহস্য ভেদ করতে পারবে,” বলেন তিনি।
নিকি ফক্স বলেন, পার্কারকে যেদিন উৎক্ষেপণ করা হবে সেদিনটা তার জন্যে হবে অত্যন্ত আবেগময় একটা দিন।
“আনন্দ ও কষ্ট এই দুটো অনুভূতিই কাজ করবে। কারণ এই মহাকাশ যানটি নিয়ে আমি প্রচুর কাজ করেছি। এই মিশনের প্রত্যেক বিজ্ঞানীর জীবনের সাথে এটি জড়িয়ে গেছে। এটা হচ্ছে অনেকটা নিজের সন্তানকে কলেজে পাঠানোর মতো। আমরা বিশ্বাস করি, পার্কার ঠিকমতোই কাজ করবে এবং সেটি মহাকাশ থেকে আমাদের কাছে প্রচুর তথ্য পাঠাবে। এই মিশন নিয়ে আমরা সবাই উত্তেজনা বোধ করছি। আমি নিশ্চিত যে সেদিন আমি কেঁদেই ফেলবো।”