চট্টগ্রামে রোগ নির্ণয়ে অবদান রাখছে পরমাণু চিকিৎসা কেন্দ্র

0

আবদুস সাত্তার,সিটিনিউজ ::  চট্টগ্রামে পরমাণু চিকিৎসা এবং আল্ট্রাসাউন্ড কেন্দ্রে জনবল ও যন্ত্রপাতি সঙ্কটের মধ্যেও থেমে নেই চিকিৎসাসেবা । দিনদিন বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। সেই সাথে বেড়েছে আয়। এখানে প্রতিদিন শতশত রোগীর ভীড় হয়। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই রোগ নির্ণয়ের নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে অবদান রেখে চলেছে প্রতিষ্ঠানটি।

কর্তৃপক্ষ সুত্র জানা যায়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাম্পাসে অবস্থিত সরকারীভাবে পরিচালিত পরমাণু চিকিৎসা এবং আল্ট্রাসাউন্ড কেন্দ্রে কম খরচে বিভিন্ন রোগ ব্যাধির পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রির্পোট প্রদান করা হয়।

বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের দ্বিতীয় বৃহত্তম কেন্দ্র পরমাণু চিকিৎসা এবং আল্ট্রাসাউন্ড কেন্দ্র চট্টগ্রাম।

২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতি বছরই আয় বৃদ্ধি হচ্ছে এ প্রতিষ্ঠানের। ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১১ সালের জুন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি আয় করেছে ১ কোটি ৩৮ লাখ ৪৩ হাজার ২০০ টাকা। কেন্দ্রের ৩৮টি মঞ্জুরিকৃত পদের মধ্যে বর্তমানে কর্মরত আছেন ৩০ জন।

এরমধ্যে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, কনিষ্ঠ পরীক্ষণ কর্মকর্তা, সহকারী কারিগরি কর্মকর্তা, উপ-সহকারী প্রকৌশলী, টেকনিশিয়ান, গবেষণা সহগামী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা, হিসাব সহকারী, গাড়িচালক ও স্যানিটারি সহগামীর পদ শূন্য আছে।

সরেজমিনে বুধবার দুপুরে চট্টগ্রামের পরমাণু চিকিৎসা এবং আল্ট্রাসাউন্ড কেন্দ্রের পরিচালক ডা.আবু হায়াত মো. রকিবুল হক এসব তথ্য জানান।

ছোট বোনের সিটি স্ক্যান করাতে আসা দিদারুল আলম নামের এক ব্যক্তি বলেন, দীর্ঘ সিরিয়াল দিয়ে অনেকক্ষণ অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। যদি আরো দ্রুত কাজ করানো যেত তাহলে আরো সুবিধা হতো। রির্পোট গ্রহণ করার ক্ষেত্রেও বিভিন্ন ভোগান্তির কথা জানান রোগীরা। অনেক রোগীর স্বজনেরাই এ কেন্দ্রের সময় এবং যন্ত্রপাতি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।তারা বলেন, বেসরকারি রোগনিরূপণ কেন্দ্রগুলো (ডায়াগনস্টিক সেন্টার) সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত খোলা থাকে। অথচ সরকারি এ কেন্দ্রটি বেলা আড়াইটায় বন্ধ হয়ে যায়। এতে একদিকে সরকার আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অন্যদিকে গরিব রোগীদের দুর্ভোগ-ভোগান্তি বাড়ছে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কেন্দ্রের পরিচালক ডা.আবু হায়াত মো. রকিবুল হক বলেন, ‘আমরা সরকারি নিয়মনীতি অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করছি। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা বেশি মানুষকে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।’

রোগীদের সাধ্যমতো সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিগত তিন বছরে বিভিন্ন হরমোন পরীক্ষা করেছেন ৭২ হাজার ৯১৮ জন রোগী, থাইরয়েড ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসা নিয়েছেন ২শত ৭৬জন, আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা নিয়েছেন ৪১ হাজার ৮৩২জন রোগী। এছাড়াও পরমাণু চিকিৎসা এবং আল্ট্রাসাউন্ড কেন্দ্রের হিসাবে দেখা যায়,গত ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরে মোট ৪০ হাজার ৪৮৫ জন রোগীর বিপরীতে ১৯ কোটি ৭ লাখ ৮৪ হাজার টাকা আয় করেছে। ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে ৩৮ হাজার ৩৫৩ রোগীর বিপরীতে ২৩ কোটি ১৬ লাখ ৬ হাজার ৫৫০ টাকা আয় হয়েছে। ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরের গত জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ১৫হাজার রোগীর বিপরীতে ৯ কোটি ৭৪ লাখ ৩ হাজার ২০০ টাকা আয় হয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল ক্যাম্পাসের ভেতর পরমাণু চিকিৎসা ও আল্ট্রাসাউন্ড কেন্দ্রে জটিল ও কঠিন পরীক্ষার জন্য প্রচুর রোগী আসেন। বিশেষ করে সরকারি মূল্যে রোগ নিরূপণ করতেই ভিড় করেন তারা। তবে রোগী দেখা শুরু করতেই ১০টা বেজে যায়। আবার আড়াইটার আগেই শেষ হয়ে যায় কার্যক্রম। এতে রোগীদের ভোগান্তি বাড়ে।

দু’টি ভবন নিয়ে গড়ে উঠেছে পরমাণু চিকিৎসা ও আল্ট্রাসাউন্ড কেন্দ্র। পুরনো ভবনের নিচতলায় অভ্যর্থনা, নিবন্ধন (রেজিস্ট্রেশন), থাইরয়েড ও হরমোন পরীক্ষার জন্য রক্ত সংগ্রহের কক্ষ, বিএমডি পরীক্ষা, সিন্টিগ্রাফি, আইসোটোপ ডিসপেনসিং কক্ষ, থাইরয়েড আপটেক, থাইরয়েড স্ক্যান ও হটল্যাব। দোতলায় আছে প্রশাসনিক ও হিসাব কর্মকর্তার দফতর, প্রশাসন ও হিসাব শাখা এবং বিশ্রামাগার (রেস্ট হাউস)। নতুন ভবনের নিচতলায় আছে আল্ট্রাসনোগ্রামের দু’টি কক্ষ, রোগীদের বিশ্রামকক্ষ, মুখ্য চিকিৎসা কর্মকর্তার কক্ষ, দ্বিতীয় তলায় পরিচালকের দফতর, আরআইএ ল্যাব এবং তৃতীয় তলায় সেমিনার কক্ষ ও গ্রন্থাগার।

মুখ্য চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সকাল আটটা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত পরমাণু চিকিৎসা এবং আল্ট্রাসাউন্ড কেন্দ্র খোলা থাকে। এখানে ৫৪টি পরীক্ষা করা হয় বেসরকারি রোগনিরূপণ কেন্দ্রের চেয়ে অনেক কম দামে।
বিশেষ করে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকায় লোয়ার ও হোল অ্যাবডোমেন আল্ট্রাসনোগ্রাফি, ২০০ টাকায় থাইরয়েড স্ক্যান, ৪৫০ টাকায় কিডনি স্ক্যান এবং ২ থেকে ৪ হাজার টাকার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সিটিস্ক্যান করা হয়ে থাকে।’

তিনি বলেন, এখানে সবচেয়ে দামি পরীক্ষাটি হচ্ছে সিএ থাইরয়েড ট্রিটমেন্ট (আপটু ২০০ এমসিআই) ৬ হাজার ৭৫০ টাকা। পরীক্ষাটি ১০০ এমসিআই’র হলে ৪ হাজার টাকা।

কেন্দ্রের পরিচালক ডা. আবু হায়াত মো. রকিবুল হক বলেন, ‘এখানে রোগীর শরীরের স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপের ব্যাঘাত না ঘটিয়ে তেজস্ক্রিয় ওষুধ প্রয়োগ করে গামা ক্যামেরার সাহায্যে লিভার, স্পিন, কিডনি, মস্তিষ্ক, অস্থি, থাইরয়েড, হেপাটোবিলিয়ারি, ফুসফুসসহ বিবিধ স্ক্যান করা হয়ে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘চমেক হাসপাতালের ক্যাম্পাসের ভেতর হলেও এটি একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। এখানে চমেক হাসপাতালের রোগী যেমন পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়ে থাকে তেমনি বাইরের রোগীরাও আসেন সেবা নিতে।’ এখানে রোগীর সেবার কথা বিবেচনা করেই রোগ নির্ণয়ের টাকা কম রাখা হচ্ছে। বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও লোকবলের সংকটের মধ্যেই সেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি আমরা।

 

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.