বিকল্প দেশ থেকে আমদানির দিকে ঝুঁকছেন পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা!

0

সিটিনিউজবিডি :  গত দুই সপ্তাহে প্রকারভেদে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা। ঈদুল আযহাকে (কুরবানির ঈদ) সামনে রেখে বাজার সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ভারতে দাম বৃদ্ধির অজুহাতে দেশের বাজারে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম।  এ পরিস্থিতিতে সিন্ডিকেটের লাগাম টেনে ধরার পাশাপাশি বিকল্প বাজার চীন, মায়ানমার, পাকিস্তান ও মিসর থেকে পেঁয়াজ আমদানির দিকে ঝুকছেন ব্যবসায়ীরা।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, বিকল্প দেশ থেকে আমদানির পাশাপাশি বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে।

এবার বাম্পার উৎপাদন ছিল পেঁয়াজের। গত (২০১৪-১৫) অর্থবছরে ১ লাখ ৯২ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ১৯ লাখ ৩০ হাজার টন। আর গত অর্থবছরে আমদানির পরিমাণও বেড়েছে। গত অর্থবছর (২০১৪-১৫) আমদানি হয়েছে ৫ লাখ ২৪ হাজার টন। অন্যদিকে ভারত থেকেও পেঁয়াজের আমদানি ভালো ছিল। পরিসংখ্যান বলছে, গেল ছয় মাসে দেশে ৩ লাখ ৬০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। পর্যাপ্ত মজুদ দেশে এই মুহূর্তে পেঁয়াজের কোনো সংকট নেই।

এ পরিস্থিতিতে হঠাৎ বাড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। কদিনের ব্যবধানে প্রতিকেজি দেশি ও বিদেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। রাজধানীর কারওয়ান বাজার কাঁচাবাজারে দেখা যায়, দেশি ও বিদেশি পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। পাইকারী ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণে দেশটি রপ্তানি মূল্য বাড়িয়েছে। আর এ কারণে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন- আমদানিকারক ও বড় বড় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণেই পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল রাখা যাচ্ছে না। খুচরা বিক্রেতা ও ক্রেতাদের দাবি, ভারত থেকে আসা পেঁয়াজের দাম বাড়ার পরপরই দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। এটা অবশ্যই মজুদ ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কারসাজি।

ভারতের পরিবর্তে এবার মিসর ও পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানির কথা চিন্তা করছে ব্যবসায়ীরা। ভারতীয় পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য টনপ্রতি ৪২৫ ডলার নির্ধারণ করায় এ দেশের ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যেই এসব দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেছেন। ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাজার ধরতে মিসর ও পাকিস্তানের বাইরে চীন ও মায়ানমার থেকেও পেঁয়াজ আমদানির দিকে ঝুঁকছেন ব্যবসায়ীরা। বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি উৎসাহিত করা গেলে ঈদুল আজহার আগেই বাজার স্থিতিশীল হওয়ার আশা করছেন তারা। খাতুনগঞ্জ কাঁচা পণ্য আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় মিসর থেকে বেশকিছু পেঁয়াজ বাজারে এসেছে। বিক্রি ভালো হওয়ায় আসার পথে রয়েছে আরো কিছু চালান। বাজারের সংকট কাটাতে আমি নিজে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীকে ঋণপত্র খোলার কাজ করে দিয়েছি। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো যদি এই মুহূর্তে বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে সহযোগিতা দেয় তাহলে বাজারে সংকট কেটে যাবে। দাম বাড়ার প্রবণতাও থাকবে না।

শ্যামবাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী রুনা বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ ইলিয়াস বলেন, বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আসায় পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। আগামী এক মাস এই সরবরাহ থাকলে ঈদুল আজহার আগেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

২০১৩ সালে ভারতে পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য টনপ্রতি ১১৫০ ডলার নির্ধারণের পর দেশের খুচরা বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। তবে সংকট মেটাতে তখন ভারতের বদলে মায়ানমার, পাকিস্তান ও চীন থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হওয়ায় বেশ সফলতা এসেছিল, দাম কমে গিয়েছিল। এর কিছুদিন পরই ভারত রপ্তানি মূল্য এক লাফে কমিয়ে ১৫০ ডলারে নির্ধারণ করেছিল। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্র জানায়, মে মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ১৩৫ টন, জুন মাসে ৮৫ টন এবং জুলাই মাসে ২৫২ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি হয় না। এসব পেঁয়াজ ভারতের বদলে বিকল্প দেশ থেকে এসেছে।

অবশ্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে থেকে ইতোমধ্যে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বর্তমান বাজারে এবং ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে পেঁয়াজের দাম কীভাবে স্থিতিশীল রাখা যায়, সে বিষয়ে শিগগরিই পদক্ষেপ নেয়া হবে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.