পটিয়ায় বাসা ভাড়া দ্বিগুন : আইন আছে, প্রয়োগ নেই

0

সুজিত দত্ত, পটিয়া প্রতিনিধি : চট্টগ্রামের পটিয়ায় বাসা বাড়ির ভাড়া দ্বিগুন হওয়ায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সরকারি-বেসরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সাধারণ জনগণ। “জীবিকার খোঁজে, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সন্ধানে, প্রয়োজনের তাগিদে অনেককেই নিজ বাড়ি-ঘর, পরিবার-পরিজন ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করতে হয়। তখন প্রয়োজন হয় মাথা গোজার জন্য এক চিলতে ছাদ। তখন বাসা ভাড়া বাড়িই একমাত্র ভরসা।

পটিয়া পৌরসভায় বাসা ভাড়া দেওয়ার প্রচলন রয়েছে দীর্ঘদিন যাবৎ। দেশের সিংহভাগ মানুষ ভাড়া বাসার উপর নির্ভরশীল। প্রায়শই ভাড়াটিয়ারা বাড়িওয়ালা কর্তৃক নানা ধরনের অনিয়ম ও হয়রানির শিকার হন। যেমন যখন তখন ভাড়া বৃদ্ধি করা, বিনা নোটিশে উচ্ছেদ করা সহ বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম। বর্তমান সময়ে এ সমস্যা আরও প্রকট হয়ে দাড়িয়েছে।

এ ধরনের অনিয়ম ও হয়রানি প্রতিরোধে বাংলাদেশে প্রচলিত রয়েছে ১৯৯১ সালের বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন। ভাড়াটে হিসেবে আপনার অধিকার এই আইনে লেখা আছে। এই অধিকার কোনো বাড়িওয়ালা লঙ্ঘন করলে তাঁকে পেতে হবে শাস্তি। কিন্তু পটিয়া পৌরসদর মুন্সেফ বাজার, ছন্দ সিনেমা, পোস্ট অফিস মোড়, তালতলাচৌকি, খাস্তগীর পাড়া, গালর্স হাই স্কুল, ছবুর রোড, থানার মোড়, আদালত রোড, ডাক বাংলো, ষ্টেশন রোড, রেল ষ্টেশন, বাস ষ্টেশন, বৈলতলী রোড, আলম শাহ রোড, পৌরসভা সংলগ্ন এলাকা, বাহুলী, শাহ আমির স্কুল সংলগ্ন সহ উপজেলা জুড়ে হাজার হাজার বহুতল ভবন নির্মাণকারীরা সরকারের নিয়মকানুন অমান্য করে অধিক হারে বাসা বাড়ির ভাড়া অতিরিক্ত আদায় করছে। ফলে দ্বিগুন বাসা বাড়ির ভাড়া আদায়ে চরম ভোগাান্তি পোহাচ্ছে সরকারি-বেসরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে বদলি হয়ে আসা চাকরিজীবী এবং সাধারণ জনগণ।

এব্যাপারের সরকারের আইন থাকলেও প্রয়োগ নেই বললেই চলে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পটিয়া থানার পুলিশের এক কনষ্টেবল জানান, তার বেতন ১৮ হাজার টাকা হলেও তাকে বাসা বাড়ির ভাড়া দিতে হয় ১০ হাজার টাকা দিয়ে। থাকা-খাওয়া, বাড়িতে টাকা পাঠানো সহ সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন। পটিয়া পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর হাজী নুরুল ইসলাম বলেন, বাসা বাড়ির ভাড়া আইন সঠিক প্রয়োগ এবং তদারকির জন্য পটিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

অনুসন্ধ্যানে জানা যায়, আইনে বাড়ির ভাড়া মানসম্মতভাবে নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে। বাড়ি ভাড়া সম্পর্কে এই আইনের ১৫ (১) ধারায় বলা হয়েছে, ভাড়ার বার্ষিক পরিমাণ সংশ্লিষ্ট বাড়ির বাজার মূল্যের শতকরা ১৫ ভাগের বেশি হবে না। বাড়ির বাজার মূল্য নির্ধারণ করার পদ্ধতিও বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, ১৯৬৪ তে স্পষ্ট করে উল্লেখ আছে। এ ভাড়া বাড়ির মালিক ও ভাড়াটের মধ্যে আপসে নির্ধারিত হতে পারে।

এই আইনের ১৮নং ধারায় উল্লেখ রয়েছে যে, ১৮৮২ সনের সম্পত্তি হস্তান্তর আইন বা ১৮৭২ সালের চুক্তি আইনের বিধানে যাই থাকুক না কেন, ভাড়াটিয়া যদি নিয়মিতভাবে ভাড়া পরিশোধ করতে থাকেন এবং বাড়ি ভাড়ার শর্তসমূহ মেনে চলেন তাহলে যতদিন ভাড়াটিয়া এভাবে করতে থাকবেন ততদিন পর্যন্ত উক্ত ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদ করা যাবে না। এমনকি ১৮(২) ধারা মতে বাড়ির মালিক পরিবর্তিত হলেও ভাড়াটিয়া যদি আইনসম্মত ভাড়া প্রদানে রাজি থাকেন তবে তাকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা যাবে না। চুক্তিপত্র না থাকলে যদি কোনো ভাড়াটে প্রতি মাসের ভাড়া পরবর্তী মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে পরিশোধ করেন, তাহলেও ভাড়াটেকে উচ্ছেদ করা যাবে না।

যুক্তিসংগত কারণে ভাড়াটেকে উচ্ছেদ করতে চাইলে যদি মাসিক ভাড়ায় কেউ থাকে, সে ক্ষেত্রে ১৫ দিন আগে নোটিশ দিতে হবে। চুক্তি যদি বার্ষিক ইজারা হয় বা শিল্পকারখানা হয়, তবে ছয় মাস আগে নোটিশ দিতে হবে। বাড়ির মালিক ন্যায়সংগত কারণ ছাড়াই ভাড়াটিয়াকে বাড়ি ছেড়ে দিতে বলতে পারবেন না। অনেক ক্ষেত্রে বাড়ির মালিক ভাড়া নিতে চান না। এক্ষেত্রে চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বা যদি চুক্তি না থাকে সেক্ষেত্রে মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে মানি অর্ডার এর মাধ্যমে বাড়ির মালিকের ঠিকানায় ভাড়া পাঠাতে হবে।

বাড়ির মালিক যদি ভাড়ার টাকা গ্রহণ না করে সেক্ষেত্রে টাকা ফেরত আসার পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে ভাড়াটেকে ভাড়ানিয়ন্ত্রক, অর্থাৎ সহকারী জজের কাছে আইনজীবীর মাধমে দরখাস্ত দিতে হবে। আদালত অনুমোদন দিলে প্রতি মাসে ভাড়া আদালতে জমা দেওয়া যাবে। বর্তমানে পটিয়া উপজেলা ও পৌরসভা এলাকায় সরকারের বাসা বাড়ির ভাড়া সংশোধিত আইন ২০১৭ইং এর আইন না মেনে ইচ্ছা মত বাড়ির মালিকরা বাসা বাড়ির ভাড়া দ্বিগুন আদায় করছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে প্রকাশ। এব্যাপারে ভুক্তভোগীরা আইনের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে নির্ধারিত বাসা বাড়ির ভাড়া আদায়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রশাসনকে সজাগ দৃষ্টি রাখার আহবান জানিয়েছেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.