পটিয়ায় লবন মিল ইজারা নিয়ে পাল্টাপাল্টি সম্মেলন

0

সুজিত দত্ত, পটিয়া প্রতিনিধি :: পটিয়া ইন্দ্রপোল শিল্পাঞ্ছলের চট্টগ্রাম লবন উৎপাদনকারী কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি লিমিটেডের (বাহারছড়া-কক্সবাজার) এর মালিকানাধীন একটি লবন শৌধনাগার মিল নিয়ে দুটি পক্ষ বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) পৃথক পৃথক সংবাদ সম্মেলন করেছে। এতে উভয় পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর ছুড়ে দিয়ে প্রশাসনের কাছে আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক সহযোগিতা প্রাথর্ণা করেছে।

সকাল ১০ টায় মোস্তাফা সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজে নতুনভাবে এ মিলের ইজারাপ্রাপ্ত মালিক দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেন পৌরসভার সাবেক কমিশনার নাছির উদ্দিন।

তিনি বলেন, ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর ইজারদার এস.বি সল্ট এর মালিক গাজী সাব্বির আহমদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় সমিতির বিধি মোতাবেক ২০১৮ সাল হতে ৫ বছরের জন্য তিনি ইজারাপ্রাপ্ত হন। যা সমিতির সভাপতি মো: মেহেরুজ্জামান পটিয়া ইন্দ্রপোল লবন মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক গাজী মো: আয়ুব ও সমিতির নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারী রেজিষ্ট্রি শেষে ইজারাদারের দখলীয় ৩৪/১৮ দখলনামা লবন মিল এবং গুদামের চাবি তাকে বুঝিয়ে দেন।

পরে ৩ জানুয়ারী সাবেক ইজারাদার গাজী সাব্বির বহিরাগত লোকজন নিয়ে মিল দখলের চেষ্টা চালালে আমি চট্টগ্রাম সদর দক্ষিণ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মিচ মামলা করি। যার নং-১৭/২০১৮ইং।

শুনানী শেষে বিজ্ঞ আদালত দখল প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সহকারী কমিশনার ভূমি ও আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য ওসি পটিয়াকে নির্দেশ দেন। যা এখনো বিচারাধীন। পরে এ নিয়ে পুনরায় গাজী সাব্বির দখল চেষ্টা চালালে ৭ জানুয়ারী থানায় আরো একটি অভিযোগ করি যার নং-৬০। পরে এ নিয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে আরো একটি মামলা দায়ের করি। এতে বিজ্ঞ আদালত শুনানী শেষে ১৩/২/১৮ইং পর্যন্ত স্থিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য ওসি পটিয়াকে পুনরায় নির্দেশ দেন।

তিনি সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন গাজী সাব্বির এরপরে মহামান্য হাইকোর্টে একটি রীট পিটিশন দায়ের করেন। যাতে নিম্ন আদালতের চলমান এ মামলা ও আদেশের তথ্য গোপন করেন। যার রীট পিটিশন নং-২৭৮/২০১৮ইং। এতে এক তরফা শুনানী শেষে ৬ মাসের জন্য সমিতির ইজারা কার্যক্রম স্থগিত করেন। আমি উক্ত স্থগিতাদেশের খারিজ চেয়ে সুপ্রীম কোর্টের আপিলএ্যাড ডিভিশনের ২৪/১/১৮ইং তারিখে একটি রীট পিটিশন দায়ের করি। যার নং-৭৬/২০১৮ইং।

শুনানীতে আমার পক্ষে ছিলেন ড. আবুল বশর। গাজী সাব্বিরের পক্ষে ছিলেন ব্যারিষ্টার শফিক আহমদ। এতে উভয় পক্ষের যুক্তি তর্ক শেষে মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্ট কর্তৃক স্থগিত আদেশ খারিজ করেন এবং ৬ সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেন। এতে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে গাজী সব্বির ভাড়াটিয়া লোকজন নিয়ে আমাদের মিল জবর দখল করে ভিতরে ঢুকে পড়ে এবং মালামাল লুট করে। এব্যাপারে পটিয়া থানাকে আমরা মৌখিক ভাবে জানিয়েছি এবং প্রশাসনের কাছে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে আইনী সহায়তা কামনা করছি।

অপরদিকে দুপুর ১২ টায় সংবাদ সম্মেলন করেন এস.বি সল্টের মালিক গাজী সাব্বির। তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, নতুন করে কোন মিল ইজারা দিতে হলে সংশ্লিষ্ট কমিটির পরামর্শের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু কোন নিয়ম না মেনে সমিতির সভাপতি মেহেরেুজ্জামান একক সিদ্ধান্তে গত ২৮/১২/২০১৭ইং তারিখে লিজ পরিবর্তনের আদেশ দেন। পরে কৌশলে নাছিরের ৩১/১২/১৭ইং তারিখের আবেদন গ্রহণ পূর্বক চুক্তিনামা সম্পাদন করেন।

এব্যাপারে আমি পটিয়া থানায় অবহিত করি এবং মহামান্য হাইকোর্টে রীট পিটিশন নং-২৭৮/১৮ দায়ের করি। এতে মহামান্য হাইকোর্টে শুনানী শেষে সমবায় সমিতির সভাপতি কর্তৃক দেয়া গত ২৮/১২/২০১৭ইং এর আদেশকে অবৈধ ঘোষণা করে রুল নিশি জারি পূর্বক ৪ সপ্তাহের মধ্যে কারণ দর্শানোর আদেশ দেন। এছাড়াও আমাকে ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে কোন ধরণের ডিস্টার্ব না করার জন্য নির্দেশ দেন।

বর্তমানে আমি আমার মিলে ব্যবসা করছি। প্রতিপক্ষ নাছিরের আবেদনের প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ যে স্থিতাবস্থার আদেশ এনেছেন তাও আমার পক্ষে এসেছে। বর্তমানে নাছিরের পক্ষ থেকে আমাকে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। আমি ব্যবসা পরিচালনায় প্রশাসনের মানবিক সহযোগিতা চাই।

এ নিয়ে পটিয়ায় বর্তমানে দুটি পক্ষই মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। যেকোনো মুহুর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা রয়েছে। তবে পুলিশ রয়েছে সতর্ক অবস্থানে।

পটিয়া থানার ওসি (তদন্ত) রেজাউল করিম মজুমদার বলেন, এ মিলের বিষয় এখন বিজ্ঞ আদালতের এখতিয়ারে চলে গেছে। আমরা আইন শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে সর্বদা সচেষ্ট রয়েছি। তিনি সব পক্ষকে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহবান জানান।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.