বর্ষিয়ান রাজনীতিক এমপি ইউসুফ আর নেই
নিজস্ব প্রতিবেদক, সিটি নিউজঃঃ অবশেষে মৃত্যুকেই বরণ করলেন বর্ষিয়ান রাজনীতিক, মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ইউসুফ।তিনি আজ রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারী ) সকাল ৮টা ২০ মিনিটে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে তিনি (ইন্না লিল্লাহে… রাজেউন)।
অত্যন্ত নির্লোভী, সাদা মাটা জীবন যাপনে অভ্যস্ত এ সাংসদ তার জীবদ্দশার শেষ জীবনে এসে অর্থের অভাবে বিনা চিকিৎসায় দিনাতিপাত করতে হয়েছে। সাবেক একজন সাংসদের ভিখারীর মত জীবন কেউ প্রত্যাশা না করলেও তার জীবদ্দশায় তার সাহায্যার্থে তেমন কেউ এগিয়ে আসেননি।
মৃত্যুকালে তার বয় হয়েছিল ৬৯ বছর। চিরকুমার ছিলেন সাবেক এই সাংসদ। শেষ বয়সে এসে তাকে দেখাশোনা করতেন তারই ভাই ও ভাইয়ের পরিবার।
সংসদ সদস্য ইউসুফের ছোট ভাই মোহাম্মদ সেকান্দর জানান, ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ রোববার সকাল ৮টা ২০ মিনিটে বড় ভাই ইন্তেকাল করেছেন।
এর আগে তাঁর অবস্থা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হলে তা প্রধানমন্ত্রীর নজরে পড়ে। অবশেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গত ৯ জানুয়ারী গুরুতর অসুস্থ আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউসুফকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পাটি (সিপিবি) নেতা মোহাম্মদ ইউসুফ ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট থেকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীর ভাই এনডিপির প্রার্থী গিয়াস কাদের চৌধুরীকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন।
৬৭ বছর বয়সী ইউসুফ রাঙ্গুনিয়ার কলেজে পড়ার সময় ছাত্র ইউনিয়নে যুক্ত হন। এই মুক্তিযোদ্ধার কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৭৩ সালে, কর্ণফুলী পাটকলে কেরানীর চাকরিতে যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে।
ওই সময় থেকেই তিনি কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। শ্রমজীবী মানুষের রাজনীতিতে নিবেদিত প্রাণ ইউসুফের নিজের আর সংসার করা হয়ে ওঠেনি। ২০০৭ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর ইউসুফের শরীরের একাংশ অবশ হয়ে যায়।
এরপর আরও নানা ব্যাধি তার দেহে বাসা বাঁধে। সম্প্রতি তার পায়েও ক্ষতের সৃষ্টি হয়। কিন্তু আর্থিক অসচ্ছলতায় তার চিকিৎসা করাতে না পেরে পরিবারের সদস্যরা সাংবাদিকদের মাধ্যমে সরকারের সহায়তার জন্য দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এদিকে সাবেক এমপি ইউসুফের বর্তমান দিনকাল নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জোড়ালো প্রচার হওয়ার পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নজরে পড়ে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ আসে চট্টগ্রাম জেলাপ্রশাসনে।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মাসুকুর রহমান সিকদার প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা জানিয়ে সিভিল সার্জনকে সাবেক সংসদ সদস্যের চিকিৎসার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেন।
গত ৭ জানুয়ারী সকালে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী দুটি অ্যাম্বুলেন্স এবং তিনজন চিকিৎসক নিয়ে রাঙ্গুনিয়ায় মোহাম্মদ ইউসুফের বাড়িতে যান। অসুস্থ ইউসুফকে এনে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার। পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার সিএমএইচ এ ভর্তি করা হয়।
এদিকে তার মৃত্যুতে আওয়ামীলীগ চট্টগ্রাম নগর, উত্তর, দক্ষিণ জেলার নেতৃবৃন্দ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তাঁর মৃত্যুতে ছাত্র ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সভাপতি মু. গোলাম সারোয়ার এবং সাধারণ সম্পাদক আতিক রিয়াদ যৌথ বিবৃতিতে গভীর শোক প্রকাশ করছেন।