অতীত হয়ে গেলেন কুমার সাঙ্গাকারা!

0

সিটিনিউজবিডি :   সাঙ্গাকারার চোখে জল দেখা যায়নি, তবে তার কথা শুনে গ্যালারির অনেকের হৃদয়ে ক্ষরণ হয়েছিল। শচীন টেন্ডুলকারের মতো চোখে জল আসেনি তার। শচীনের মতো কাগজেও নোট করে আনেননি কথাগুলো। তার পরও বিদায়-সায়াহ্নে যেভাবে বলে যাচ্ছিলেন কথাগুলো, তাতে গোটা পি সারা ওভাল নিশ্চুপ হয়ে ছিল। পরিবার, বন্ধু, পুরনো কোচ সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে কুমার সাঙ্গাকারা শ্রীলংকার পরবর্তী প্রজন্মের হাতেই তুলে দিয়ে গেলেন যত দায়িত্ব। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজকে শেষ কথাটি বললেন এভাবেই_ ‘যা কিছু অর্জন করবে তা নিয়েই গর্বিত থেকো। হারে কখনও ভয় পাবে না, কেননা হারটা তখনই আসে, যখন তুমি জয়ের খোঁজ করছ। শ্রীলংকার পতাকাকে সবসময় উঁচুতে রেখো।’

বিদায়বেলায় সাঙ্গাকারার সে বক্তব্য পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো :

শ্রদ্ধেয় রাষ্ট্র্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সংসদ সদস্যবৃন্দ, আমার সব শুভাকাঙ্ক্ষী, ভক্ত-সমর্থক, আমার সব বন্ধু, আমার পরিবার_ যারা আজ সবাই এখানে উপস্থিত, তাদের ধন্যবাদ জানাই। সবাইকে এভাবে একত্রে পাওয়া আমার জন্য আনন্দের ব্যাপার। বিরাট কোহলি এবং ভারতীয় দল, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ এবং শ্রীলংকা দল যারা সবাই এখানে রয়েছেন, তাদের সবাইকে আরও একবার ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

আমার ক্রিকেট শুরু হয়েছিল স্কুলজীবন থেকে। ট্রিনিটি কলেজ আমার জীবনে দারুণ একটি সুযোগ করে দিয়েছিল। আমি আজ যা কিছু অর্জন করেছি তা ওই স্কুল ক্রিকেটের কারণেই। যখন আমি ছোট ছিলাম, আমার বাবা আমাকে সুনিল ফার্নান্দোর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। তখন আমার বয়স মাত্র ১২। সুনিল ফার্নান্দোর আমার স্কুল ক্রিকেট দলের প্রতিপক্ষ দলের কোচ ছিলেন; কিন্তু তিনিই আমাকে আগ্রহ নিয়ে শিখিয়েছিলেন। তখন তার কাছ থেকে শোনা প্রতিটি কথা, প্রতিটি উপদেশ আমি এখনও মেনে চলি। তিনিই আমাকে প্রথম ক্রিকেট কোচিং করিয়েছিলেন। যখন আমি ক্যান্ডিতে চলে যাই, তখনও আমার বাবা তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। মনে আছে, আমি যখন কংক্রিটের পিচে নেট করতাম, তখনই আমি ক্রিকেটের বেসিক কিছু জিনিস শিখে নিই। আজ বিদায়বেলায় সেই স্কুল কোচকে আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

আমার সাবেক সব অধিনায়ক, সতীর্থদেরও ধন্যবাদ জানাই। তারা আমার জন্য অনেক কিছু করেছেন। আমি যা কিছু অর্জন করেছি, যে প্রেরণা পেয়েছি তার জন্য তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তারা আমাকে যেভাবে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন, যেভাবে সামনে এগোতে সাহায্য করেছেন, তাদের সে মূল্যবোধগুলোকে আমি অনেক অনেক উঁচুতে রাখি। অনেক সম্মান করি। আমি এখন সেসব মিস করব। মিস করব ড্রেসিংরুমের দিনগুলো, ড্রেসিংরুমের সেসব কথা, যা শুধু ক্রিকেটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকত না।

চার্লি ও সুথামি অস্টিন, তোমরা আমার ম্যানেজারের চেয়েও অনেক কিছু। তোমরা আমার পরিবারের মতো হয়ে গেছ। জানি, অতীতে তোমাদের কখনও এভাবে আমি ধন্যবাদ জানাতে পারিনি; কিন্তু আজ আমি তোমাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমার ম্যানেজার এবং পরিবার-সংশ্লিষ্ট সবাই আমাকে একজন ভালো পিতা হতে সাহায্য করেছে।

অনেক মানুষ আমার কাছে জানতে চায়, কার প্রেরণায় তুমি এতদূর এসেছ। আমাকে অনুপ্রেরণা খোঁজার জন্য খুব বেশিদূর যেতে হয়নি, কারণ বাবা-মা-ই আমার প্রেরণা। আমার পরিবারই আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। আমার ভাইবোনই আমার প্রেরণা। তারা বছরের পর বছর আমাকে প্রেরণা জুগিয়ে গেছেন। আমি ক্রিকেট খেলি আর না খেলি, আমি ভালো করি বা না করি, এখনও আমার কাছে একটি জায়গাই সবচেয়ে বেশি নিরাপদ, সেটা হলো আমার বাড়ি। পরিবারের সব সদস্যকে আরও একবার ধন্যবাদ জানাই। আমার পরিবারের সদস্যরা সব সময় বলেছে, তোমাকে আমাদের নিয়ে ভাবতে হবে না, তুমি বন্ধুদের সময় দাও। আমি সত্যিই ভাগ্যবান, এমন একটা পরিবারে জন্মগ্রহণ করে।

আমি দুঃখিত, আমি আসলে সাধারণত ইমোশনাল হই না। কিন্তু আজ এমনই একটা দিন, যেখানে আমার পরিবারের সবাই এসেছে আমার খেলা দেখতে। দিনটি তাই আজ আমার নিজের মনে হচ্ছে। অনেকেই জিজ্ঞাসা করেন, ১৫ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে কোনটা সবচেয়ে বড় অর্জন_ বিশ্বকাপ জেতা নাকি ক্রিকেট মাঠে করা সেঞ্চুরিগুলো? আমি সবাইকে আজ বলতে চাই, আমার ক্রিকেট জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন বুঝি আজই পেলাম। যখন আমি গ্যালারির বক্সে তাকিয়ে দেখি আমার সব বন্ধু সেখানে বসে আছে, যাদের আমি গত ত্রিশ বছর ধরে চিনি, তারা সবাই এসেছে আজ আমার খেলা দেখতে। আমার পরিবার, বন্ধু, পুরনো সতীর্থ, পুরনো কোচ সবাইকে এভাবে আমার জন্য একসঙ্গে দেখাটাই আমার সবচেয়ে বড় অর্জন।

ক্রিকেট ছাড়ার পর হয়তো আমাকে পরিবারের সঙ্গেই বেশি সময় কাটাতে হবে; এই বন্ধুদের সঙ্গেই কাটাতে হবে, যারা আজ এখানে এসেছে। তাদের এ ভালোবাসা শর্তহীন। শ্রীলংকার সব ক্রিকেট সমর্থককে ধন্যবাদ জানাই, কৃতজ্ঞতা জানাই, কারণ তারা আমাকে দেশের জন্য কিছু করার সুযোগ করে দিয়েছেন।

বিরাট কোহলি এবং ভারতীয় দলকে ধন্যবাদ, আমার বিদায়বেলায় সুন্দর কিছু কথা বলার জন্য। সাঙ্গা বলেন, বছরের পর বছর তোমরা আমাদের শক্ত পতিপক্ষ হয়ে ছিলে। আজ আমরা হয়তো হেরেছি; কিন্তু এটা কোনো ব্যাপার নয়। আমরা আবার জয়ে ফিরে আসব (হাসি)।

অ্যাঞ্জেলো (ম্যাথুজ) তোমাকে আবারও ধন্যবাদ, তোমার দলটি খুব ভালো। দারুণ ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে তোমার এ দলটির জন্য। আশা করি, তোমরা এ খেলাটি উপভোগ করে যাবে। আমার ব্যক্তিগত জীবনে অল্প সময়ই, খুব অল্প সময়ই এ খেলাটি খেলতে পারি, এটা আসবে-যাবে। কখনও ভয় পেও না। যা কিছু অর্জন করবে তা নিয়েই গর্বিত থেকো।

হারে কখনও ভয় পাবে না, কেননা হারটা তখনই আসে, যখন তুমি জয়ের খোঁজ করছ। শ্রীলংকার পতাকাকে সব সময় উঁচুতে রেখো।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.