আজকের সুর্যোদয়ের বিরুদ্বে মামলা ও কিছু কথা

0

জুবায়ের সিদ্দিকী – 

চট্টগ্রামে পাঠকনন্দিত আজকের সুর্যোদয়ের নগরীর লুসাই ভবনের অফিসে বসে কাজ করছিলাম। গত ২ ডিসেম্বর দুপুরে আদালতের আর্দালী আমার হাতে দিয়ে গেল আদালতের সমন।বুঝতে পারলাম আমার বিরুদ্ধে মানহানীর মামলা হয়েছে। তবে বাদী ইদ্রিসকে চেনা মনে হল না। সেদিনই আদালতে গিয়ে স্মরনাপন্ন হলাম চট্টগ্রাম আদালতের ক্লাক এসোসিয়েশনের সভাপতি বিমল চন্দ্র নাথের নিকট। তিনি মামলার নথি বের করে এনে ফটোষ্ট্যাট করে দিলেন। এরপর দেখা গেল, আমার লেখা বা আমার কোন সহকর্মীর লেখা নয়! আনোয়ারা উপজেলা থেকে একজন মুক্তিযোদ্ধা লিখেছে অনেক মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে। লেখক তার লেখাটি পাঠিয়েছেন সরাসরি ঢাকায় সম্পাদকের ঠিকানায়। এই লেখা সম্পর্কে আমি মোটেও অবগত নই। আমার জানা নেই, দেখা নেই, এমন একটি প্রকাশিত নিবন্ধের জন্য আমাকে দুই নম্বর আসামী করে এই ইদ্রিস মামলাটি সিএমএম আদালতে দায়ের করেছেন। আমি নির্দোষ হয়েও আসামী হলাম।

আমার অনুজপ্রতিম সাংবাদিক শহিদুল ইসলামকে নিয়ে আদালত থেকে ফিরে আসি। রাতেই আমাদের সাংবাদিকদের রুটি-রুজীর সংগঠন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক হাসান ফেরদৌসকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি বাদীর আইনজীবিকে ফোন করে জানালেন,’মামলা হবার কথা লেখক ও সম্পাদকের বিরুদ্ধে। এ ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধানের বিরুদ্ধে মামলা হওয়াটা দু:খজনক। তিনি বিষয়টি দেখভাল করবেন বলে জানালেন। এরপর চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারন সম্পাদক ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের ব্যুরো প্রধান সুহৃদ রিয়াজ হায়দার চৌধুরীকে বিষয়টি জানালে তিনি তাৎক্ষনিক বিষয়টি বিশিষ্ট আইনজীবি ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী কে মামলার বিষয়টি জানিয়ে ফোন করেন। একদিন পর ইফতেখার সাইমুল চৌধুরীর সঙ্গে আমি দেখা করি। তিনি ১৯৯৮ সালে সাইফুদ্দিন কাদের চৌধুরী দায়ের করা একটি মামলায় প্রবীন আইনজীবি ইব্রাহীম হোসেন বাবুলের সাথে আমাদের কৌশলী হিসেবে লড়েছেন।

গত ৬ ডিসেম্বর সকালে আমার সহকর্মী শহিদুল ইসলাম, গোলাম সরওয়ার ও সজল চক্রবর্ত্তীকে নিয়ে আদালতে উপস্থিত হয়ে আত্বসমর্পন করলে বিজ্ঞ আদালত আমাকে জামিন মঞ্জুর করেন। আদালতে এ সময় উপস্থিত ছিলেন এডভোকেট ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, এডভোকেট সালাউদ্দিন আহমেদ লিপু, এডভোকেট আল মামুন করিম (মামুন) ও এ.পি.পি একেএম আজহারুল হক (আজহার) ও আমার সহকর্মী রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, শহিদুল ইসলাম, গোলাম সরওয়ার, সজল চক্রবর্ত্তীর আন্তরিক সহযোগিতা আমাকে অভিভুত করেছে। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি মুক্তিযোদ্ধা চৌধুরী মাহবুব, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কবির আহমদ, সহকর্মী গোলাম শরীফ টিটু ও আলী আদনানকে। অভিনন্দন জানাচ্ছি চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নকে। দেশ বিদেশে আমাদের সংবাদদাতাগন, পাঠক, শুভাকাঙ্কী ও সহকর্মীগন যেভাবে সহমর্মিতা জানিয়েছেন তাতে আমি আনন্দিত। মামলা, হামলা, এই নতুন নয়। তবে নির্দোষ হয়েও এই প্রথম একটি মামলায় আসামী হলাম যা কষ্টজনক। গত ২৯ ডিসেম্বর আদালতে হাজিরা দিতে সহকর্মী গোলাম সরওয়ার সহ উপস্থিত হলে এডভোকেট সালাউদ্দিন আহমেদ লিপু সহ আমার আইনজীবিগন সহায়তা করেন। আদালতে বাদীর সাথে দেখা হলে তিনি বলেন,’ভাই আমি দু:খিত। আমার ভুল হয়েছে। এভাবে মামলায় জড়িয়ে পড়ায় হতবাক আমার সহকর্মীগন। বিভিন্ন সংগঠন, সংস্থা ও সাংবাদিক মহলের আন্তরিক সহযোগিতাকে আমি শ্রদ্ধার সাথে স্মরন করছি।

প্রধান সম্পাদক খোন্দকার মোজাম্মেল হক এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন,’ এই মামলায় আসামী আপনার হওয়ার কথা নয়। কারন কলাম আপনার দেখার কথা নয় এবং লেখক তার লেখাটি ঢাকায় পাঠিয়েছেন। আজকের সুর্যোদয়ের জনপ্রিতায় ইশ্বান্বিত একটি মহল সবসময় আমাদের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়েছে। সাংবাদিকতা একটি ঝুকিপুর্ন পেশা। এরপরও রুটিরুজির তাগিদের সাথে মানুষের কথা বলতে, ন্যায়ের পথে, সমাজ ও রাষ্ট্রের কথা বলতে আমাদের পথচলা থেমে নেই। সংবাদপত্র সমাজের নির্ভেজাল দর্পনরুপে শত প্রতিকুলতা অতিক্রম করছি আমরা প্রতিদিন। নষ্ট কিছু মানুষের ভীড়ে দল মত নিরপেক্ষ সমষ্টিক মানুষের আশা আকাঙ্খা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নির্ভীক সংবাদ পরিবেশনই আমাদের লক্ষ্য। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রজ্জলিত আলোর মশাল নিয়ে পথ চলতে কিছু কিটপতঙ্গের থাবা আমাদের পথরোধ করে বাধার সৃষ্টি করলেও তারা কোনভাবেই সফল হবে না। চট্টগ্রামে আজকের সুর্যোদয়ের অগ্রযাত্রা অপ্রতিরোধ্য। এই অগ্রযাত্রাকে ঠেকাতে অনেক চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র হয়েছে বার বার। কিন্তু পাঠকপ্রিয় আজকের সুর্যোদয় গনমানুষের ভালবাসা ও দোয়ায় দিন দিন সার্কুলেশন ও জনপ্রিয়তা বাড়ছে। রাজনৈতিক সংবাদ ম্যাগাজিনে বাজাকের আজকের সুর্যোদয়ের কোন প্রতিদ্বন্ধিও নেই। যে কারনে চক্রান্তকারীরা বার বার আমাকে আমার কর্মদক্ষতা ও কর্মপ্রেরনাকে স্তব্ধ করে দিতে চক্রান্ত করেছে। যার অনেক প্রমানও আমাদের কাছে আছে।

নব্বই দশকের দিকে একবার ফটিকছড়ি থেকে অধুনালুপ্ত এনডিপির (সাকা চৌধুরীর দল) পাঠানো কাফনের কাপড় পাশ্বেলে এসেছিল আমার ঠিকানায়। ২০০৩ সালে জঙ্গিগোষ্টী আমাকে ডেট নোটিশ পাঠায়। সে সময় রয়টার্স এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি নিজাম উদ্দিন আহমেদ আমার সাথে ফোনে কথা বলে দক্ষিন এশিয়ার রয়টার্স এর সাংবাদিককে নিয়ে চট্টগ্রাম এসে ’ডেট নোটিশপ্রাপ্ত সাংবাদিক সমরেশ বৈদ্য, সুমি খান ও আমার সাক্ষাতকার গ্রহন করেন। এর পর লন্ডন থেকে এ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল এই সংবাদটি গুরুত্বের সাথে তাদের ওয়েবসাইটে ও বিবিসিতে প্রচার করে। আমার সহকর্মী গোলাম সরওয়ার রিপোর্টটি ডাউনলোড করে এনে দেখায়। এভাবে সাংবাদিকতা পেশায় অসংখ্যবার আমাদের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। জাতীয় সংবাদ সাপ্তাহিক আজকের সুর্যোদয়ের দীর্ঘ ২৫ বছরের সাথে আমার চাকরীও ২৫ বছর চলছে। অনেক চড়াই উৎরাই পার হয়ে চলতে হচ্ছে। তারপরও আমরা আশাবাদী। সমাজের বিশাল জনগোষ্টি, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বৃহত্তর পাঠক মহল আমাদের পথচলায় শুভাকাঙ্খী। মিথ্যা মামলা, সাজানো মামলা, হামলা সহ অনেক বাধা বিপত্তি এভাবে আসবে। আমাদেরও এর আইনী প্রক্রিয়াতে অংশ নিয়ে পথচলতে হবে। কোন দুষ্টগ্রহ বা নষ্ট মানুষের বেহায়াপনা আমারে নির্দিষ্ট পথথেকে সরাতে পারবেনা ইনশাআল্লাহ। চট্টগ্রামে বিগত ২৫ বছর যাবত আজকের সুর্যোদয় তার অবস্থান ধরে রেখেছে।

মুক্তিযোদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার স্বপক্ষে আমাদের অবস্থান হওয়াতে কোন কোন মহল ইর্ষান্বিত হয়ে চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সুর্যোদয়ের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে তৎপর রয়েছে। এর সব সময় ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করেছে তথাকথিত কিছু মুক্তিযোদ্ধা সমাজে ’মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা ’নাম ব্যবহার করে চলেছে ফ্রিষ্টাইলে চাঁদাবাজি। সাংবাদিক, আইনজীবি, ছাত্রনেতা। যখন তখন নাম সর্বস্ব সাইবোর্ডের আড়ালে বিভিন্ন কর্মসুচীতে অতিথি হয়ে যাওয়ার খায়েশ নিয়ে এইসব চাঁদাবাজকে বগলদাবা করে যাচ্ছেন। ক্রেষ্ট বানিজ্য ও চাঁদাবাজিতে অভ্যস্ত এসব মুক্তিযোদ্ধা নামধারীরা সমাজে ছড়াচ্ছে বিভেদ। প্রতারিত হচ্ছেন গুনিজন সহ সাধারন মানুষ। মুক্তিযোদ্ধাদের বিভক্ত ও তাদের ভাবমুর্তি বিনষ্ট করে মুক্তিযোদ্ধা নামধারীদের অপতৎপরতা অব্যাহত আছে কি শহরে, কি উপজেলায়, কি গ্রামে। নগরীতে জনতার হাতে গনধোলাই, তাদের বিরুদ্ধে পোষ্টার, পত্র পত্রিকায় ছবি সহ রিপোর্ট, মামলা সহ অনেকভাবে প্রতিরোধ করা হলেও এদের পদচারনা যেন থেমে নেই। এদের পদচারনার নেপথ্যে সমাজে রয়েছে একটি দুষ্টচক্র। এই চক্রের মদদে তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধা নামধারীদের মুখোশ উম্মোচন করতে অনুরোধ করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা চৌধুরী মাহাবুব সহ অনেক মুক্তিযোদ্ধারা। আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি এবং ধন্যবাদ জানাচ্ছি তাদের এ ব্যাপারে এগিয়ে আসার জন্য। নিশ্চয় আল্লাহ তাদের জন্য সহায় হবেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.