একজন আলোকিত মানুষ ড. মাহমুদ হাসান

0

জুবায়ের সিদ্দিকী  :     সমাজে কিছু মানুষআছে যারা অন্যকে সাহায্য সহায়তা করতে ভালবাসেন, অন্যের অপদে বিপদে হাত প্রসারিত করেন। মাদ্রাসা, মসজিদ, স্কুল, কলেজ, রাস্তাঘাট নির্মান করেন। সমাজে এদের সংখ্যা নগন্য। চট্টগ্রাম নগরীতে অভিজাত এলাকা বলে পরিচিত চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, নাছিরাবাদ হাউজিং, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা সহ অনেক এলাকায় বিত্তবানদের রাজকীয় প্রসাদ থাকলেও তাদের বাড়ির সামনের রাস্তা থাকে চলাচলের অযোগ্য। যানবাহন চলাচল দুরে থাক পায়ে হাঁটাই দুরুহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।

সমাজে একজন ব্যতিক্রম চরিত্রের মানুষ ড. মাহমুদ হাসান। গত ১৯ আগষ্ট দুপুরে নগরীর পাঁচল্ইাশ থানার সন্নিকটে আহমেদ মিয়া প্রাইমারী স্কুল লেইনে প্রবেশ করতেই দেখা হল ড. মাহমুদ হাসানের সাথে। রাস্তায় শ্রমিকদের কাজ তদারকি করছেন। প্রায় অর্ধ কিলোমিটার এই সড়কে আর.সি.সি ঢালাই করছেন সম্পুর্ন নিজ খরচে। নিজের টাকায় ক্রয় করেছেন বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার ও খুঁটি। সিটি কর্পোরেশনের ২০ লক্ষ টাকার প্রজেক্টের কাজ প্রায় ১৭ লক্ষ টাকায় শেষ হচ্ছে তার নিজের টাকায় বলে জানালেন।

চট্টগ্রামের সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিনের কাছে তিনি ওয়াদা দিয়েছিলেন তিনি নির্বাচিত হলে এই লেইনের রাস্তা নির্মান ও বিদ্যুতের সংস্কার করবেন। তাই নিজের ১৭ লক্ষ টাকা খরচ করে ওয়াদা রক্ষা করেছেন। রাস্তার ঢালাইয়ের কাজ প্রায় শেষ। আনা হয়েছে নতুন ট্রান্সফরমার। এই লেইনের রাস্তা পাকা হওয়াতে মানুষের দুর্ভোগ লাগব হয়েছে। এলাকার একজন ব্যবসায়ী জানালেন, ড.মাহমুদ হাসান এই মহল্লার স্থায়ী অধিবাসী। তিনি নিজ অর্থব্যয়ে রাস্তা নির্মান ও বিদ্যুতের সংস্কার করেছেন। তিনি সমাজের জন্য একটি অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। নগরীতে শত শত বিত্তবান রয়েছেন কিš‘ সকলের নিজের বাড়ির চেহারা দিন দিন উজ্জ্বল ফকফকা করলেও ভুলেও কেউ বাড়ির সামনের ভাঙ্গা রাস্তা মেরামদ বা নির্মান করা দুরে থাক একটি ইটও বসাননা। এই সমাজে আমরা সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত।

ফটিকছড়ির কৃতি সন্তান ড. মাহমুদ হাসান নিজ এলাকা ছাড়াও অনেক উপজেলায় মসজিদ, মাদ্রাসা ও স্কুল নির্মান, মেরামত, কম্পিউটার ও বইপত্র দিয়েছেন নিজের অর্থে। এই সমাজে রাজনীতি যখন ব্যবসার হাতিয়ার হয়, রাজনীতি যখন আধিপত্য বিস্তার ও ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার মাধ্যম হয় তখন নষ্ট রাজনীতির ভিড়ে কিছু আলোকিত মানুষ সমাজকে আলোকিত করেন। সমাজে এভাবে ড. মাহমুদ হাসানরা আছেন বলেই হয়ত সভ্য সমাজে মানুষ অন্ধকারে আলো দেখে। ফটিকছড়ির চৌকষ সাংবাদিক আহমদ এরশাদ খোকন বলেন, ড. মাহমুদ হাসানের জন্ম কোন ধর্নাঢ্য পরিবারে না হলেও শিক্ষিত, মননশীল, দায়িত্ববান, সৎ ও চরিত্রবান পরিবারের জন্মগ্রহন করেছেন তিনি। ড. মাহমুদ হাসানের পিতা মরহুম আলহাজ্ব মকবুল আহমদের দেখানো, শিখানো, সুন্দর,জনগুরুত্বপুর্ন পথেই হেটে চলেছেন মাহমুদ হাসান। শ্রম, মেধা, আর সততাকে পুঁজি করে হয়েছেন দেশবরেন্য ব্যক্তিত্ব হয়ে এখন আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী সমাজে নিজ যোগ্যতায় ঠাঁই করে নিয়েছেন।

বিশিষ্ট সাংবাদিক ও ফটিকছড়ি প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর উদ্দিন মাহমুদ জানান, ড. মাহমুদ হাসান একজন দানশীল ব্যক্তি, রাজনীতিক ও সমাজ সেবক। ফটিকছড়ির মানুষের কাছে তিনি অত্যন্ত সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব। শিক্ষানুরাগী ও সমাজের জনহিতকর কাজে ড. মাহমুদ হাসান উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখেছেন। সমাজে এ ধরনের মানুষের বড়ই অভাব। নিজ এলাকা ছাড়াও তিনি চট্টগ্রামের অনেক এলাকায় উন্নয়নের অংশিদার ও জনকল্যানে নিবেদিত প্রান। জাহাঙ্গীর উদ্দিন মাহমুদ জানান, শিক্ষানুরাগী এই মানুষটি ফটিকছডিতে অগনিত শিক্ষা প্রতিষ্টানে কম্পিউটার প্রদান করেছেন। পবিত্র ঈদুল ফিতরের সময় বস্ত্র ও রমজানে ইফতারি সামগ্রি বিতরন করেন প্রতি বছর।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ও আওয়ামী লীগ নেতা ড. মাহমুদ হাসান অত্যন্ত দৃঢ়চেতা একজন প্রচার বিমুখ মানুষ। এদিকের নাজির হাটের একজন ব্যবসায়ী জানান, ফটিকছড়ির নানুপুর নিবাসী ড.মাহমুদ হাসান সৎ, সাবলীল, ত্যাগী ও কষ্টসহিষ্ণু একজন ব্যক্তি। রাজনীতি করেন নিজের টাকায়। পদ পদবী ও ক্ষমতাকে অপব্যবহার করা দুরে থাক নিজেকে একজন সাধারন কর্মী হিসেবে ভাবতে ভালবাসেন তিনি। মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য। এই প্রবাদবাক্যটি শতভাগ পরিপুর্ন এই মানুষটির জীবনে। শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, সাহিত্যিককে কম্পিউটার প্রদান সহ নানাভাবে সহায়তা প্রদানকারী ড. মাহমুদ হাসান ফটিকছড়ির একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। এ মানুষটিকে নিজ দল মুল্যায়ন না করলেও জনগন তাকে মুল্যায়ন করছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক ড.মাহমুদ হাসান ওয়ান ইলেভেনের সময় দলের নেতারা যখন এলাকাছাড়া তখন নেতাকর্মীকে বুকে আগলে রাখেন আপদে বিপদে।

১৯৭৩ সালে ঐতিহ্যবাহী নাজিরহাট কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক থাকাকালীন ’৭৫এ বিপদগামী সেনা সদস্যের হাতে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হলে তিনি তিব্র প্রতিবাদ করেন। এর তখনকার শাসকযোষ্টির কুনজরে পড়েন তিনি। ১৯৭৬ সালে জীবন ও জীবিকার তাগিদে পাড়ি জমান কাতারে। সেখানে নিজের শ্রম আর মেধা ও সততাকে পুঁজি করে অল্প সময়ে সফলতার মুখ দেখেন ড. হাসান। নিজের কর্মস্থল  মজবুত পাশাপাশি কাতার সরকারের অনুরোধে মাহমুদ হাসানের একক প্রচেষ্টায় কয়েক হাজার বাংলাদেশিকে কাতারে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা  করা হয়। বাংলাদেশি শ্রমিকরা নিজেদের মেধা ও সর্বোচ্চ শ্রম দিয়ে কাতার সরকার ও সে দেশের ব্যবসায়ীদের মন জয় করে নেন। সাথে সাথে মাহমুদ হাসান বনে যান এক বিশ্বাসযোগ্য, নির্ভরযোগ্য ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিত্বে।

এর পর আর পিছু তাকাতে হয়নি তাঁকে। আন্তর্জাতিক বাজারেও একজন ব্যবসায়ী হিসেবে রয়েছে তার সুপরিচিতি। সম্প্রতি মালয়েশিয়া বিমান কর্তৃপক্ষ মাহমুদ হাসানকে সে দেশের সর্বোচ্চ পুরস্কার ’ডায়মন্ড এ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করেছেন। মালয়েশিয়ায় ড. হাসানের বিমানের টিকেট এজেন্সি রয়েছে। তিনি মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগের প্রতিষ্টাতা সভাপতি। ওই কমিটি দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও তৎকালীন সাধারন সম্পাদক আবদুল জলিল কর্তৃক স্বাক্ষরিত। প্রবাসের পাশাপাশি চট্টগ্রামের রাজনীতিতে তিনি পরিচিতমুখ। সাবেক এমপি প্রয়াত রফিকুল আনোয়ারের নেতৃত্বশুন্য ফটিকছড়িতে অনুপস্থিত নেতার পক্ষে মাঠে নেমে রাজনৈতিক বিচক্ষনতা, দানশীল কার্য সহ নানা কারনে ফটিকছড়ির রাজনীতির মাঠে মাহমুদ হাসান এখন অপ্রতিদ্বন্ধি।

গত দুই দফা অনুষ্টিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রচন্ড চাপ থাকার পরও উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের সমর্থনে নির্বাচন করেননি তিনি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের মিত্র, ত্বরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দেশজুড়ে আলোচিত হন এ তুখোড় বক্তা। সে নির্বাচনে ড. মাহমুদ হাসান পরাজিত হলেও একদিনের জন্যও মাঠ ছাড়েননি তিনি।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.