কক্সবাজারে বন কর্মকর্তার অনিয়ম, উজাড় হচ্ছে মূল্যবান গাছ

0

জামাল জাহেদ,কক্সবাজার : কক্সবাজার উপকুলীয় দক্ষিণ বনবিভাগের চট্রগ্রাম রেঞ্জের আওতাধীন মহেশখালী,কুতুবদিয়া,টেকনাফ,উখিয়া রামু, ঘটিভাংগা সোনাদিয়ার বনবিটের অঞ্চলে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও সামাজিক বনায়নের ফলে দারিদ্র বিমোচন প্রকল্পের বড় বড় ঝাউগাছসহ বনভুমি দিনদিন উজাড় করা হচ্ছে বিট কর্মকর্তার যোগসাজশে,অথচ রেন্জার ও বন কর্মকর্তারা নীরব বলে জানা যায়। পাচার হয়ে যাচ্ছে মূল্যবান ঝাউবনের বড় গাছ,বাইন ও গেওয়া সহ নানা বনভুমির গাছ।ফলে বনভুমি কমে যাচেছ, দিনদিন বাইন কেটে কেটে বিক্রি করা হচ্ছে প্রতিটি স্থানীয় বাজারে।

বনবিভাগের তথ্যসুত্রে জানা যায়,বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে প্রায় ৪৫০.০ বর্গ কিঃমিঃ এলাকা জুড়ে কক্সবাজার দক্ষিণবন বিভাগ বিভাগের বিসত্মৃতি। উত্তরে বাঘখালী নদী, পূর্বে বান্দরবান জেলার অশ্রেণীভূক্ত বনাঞ্চল এবং নাফ নদী বরাবর বাংলাদেশ ও মায়ানমারের অমত্মর্জাতিক সীমারেখা এবং দক্ষিণে ও পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর- এর মধ্যবর্তী বনাঞ্চল কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের অধিক্ষেত্র।

পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এর প্রজ্ঞাপন নং- পবম/শা-২/বন (প্রা:স:) -২২(৬) ২৯৬ তাং- ২৪/৬/২০০১ ইং মূলে অনুমোদিত বন অধিদপ্তরের সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী অতি প্রাচীন কক্সবাজার বন বিভাগকে দু’ভাগে বিভক্ত করে কক্সবাজার উত্তর ও দক্ষিণ বন বিভাগ গঠন করা হয়। এ বিভাগে ৩৬৬০২.০৫ হেক্টর সংরক্ষিতবনভুমি ও ৭৫৭২.৮৬ হেক্টর রক্ষিতবনভুমি রয়েছে।কক্সবাজার জেলার সবকটি উপজেলার বনবিটের দূর্নীতিবাজ বন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উদাসীণতায় এসব বনাঞ্চল উজাড় হয়ে যাচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

এ ক্ষেত্রে কক্সবাজার দক্ষিন বন বিভাগ অফিস অনিয়ম দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। উর্ধতন কর্মকর্তার নাম ভাঙ্গিয়ে উৎকোচ আদায় সহ নানা দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছে প্রধান সহকারী ও অফিস সহকারী।উর্ধবতন বন কর্মকর্তার সহযোগিতায় এসব অপকর্ম চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।প্রাপ্ত তথ্যমতে, হিমছড়ি ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রের ওয়ার্ক পারমিট দেয়ার সময় ইজারাদারের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা দাবী, সামাজিক বনায়নের লট ক্রেতাদের কাছ থেকে কার্যাদেশ দেয়ার সময় ও জামানত (ব্যাংক ড্রাপ) উত্তোলনে উৎকোচ আদায়,সংরক্ষিত বনাঞ্চলে চিংড়িঘের তৈরি করার সুযোগ দিয়ে,মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়া,নতুন আবর্তে বাগান সৃজনের জন্য টাকা উত্তোলনের সময় উপকার ভূগিদের কাছ থেকে ২০ শতাংশ কর্তন, টেকনাফ মহেশখালীর নানা বনবিটে বন প্রহরী নিয়োগের নামে ৬০ হাজার টাকা আদায়, দক্ষিন বন বিভাগ অফিসে পোষ্টিং দেয়ার নামে ফরেষ্টারের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে উৎকোচ আদায়, আসবাবপত্র স্থানান্তরের অনুমতি দেয়ার ক্ষেত্রে উৎকোচ আদায়,রাতের আধারে গাছ পাচারের সুযোগ সহ নানা অভিযোগ রয়েছে বনবিভাগের বিরুদ্ধে।

এ ছাড়াও দক্ষিন বন বিভাগের আওতাধীন রেজ্ঞ ও বিট অফিসে কর্মরত মাঠ পর্যায়ের সকলের কাছ থেকে উৎকোচ আদায় সহ নানাভাবে হয়রাণী করারও অভিযোগ রয়েছে প্রধান সহকারী ও অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে।বনবিভাগে দীর্ঘদিন নিয়োগ হয়না বলে,নিম্ন পদের লোকক দিয়ে উপরের কাজ করতে হয় বলে দুর্নীতি বেশি হয় বলে জানান নাম প্রকাশ করা এক ফরেস্ট গার্ড।বনের মুল্যবান কাঠ ইজারা পেতে কম টাকায়,নানা সিন্ডিকেট উর্ধবতন কর্মকর্তার সাথে আতাত কররে ব্যাপক হারে অনিয়ম দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ অনেকের।হিমছড়ি ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রের ইজারাদার সাথে কথা বলে জানা যায়, হিমছড়ি ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রের ওয়ার্ক পারমিট দেয়ার সময় তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়।

সরকারের একটি দপ্তর থেকে বদলী হওয়া এক কর্মকর্তা জানান, বদলীর কারনে আসবাবপত্র স্থানান্তরের অনুমতি পেতে তার কাছ থেকে অফিস সহকারী ১ হাজার টাকা আদায় করেছে।সামাজিক বনায়নের লট ক্রেতা কয়েকজনের সাথে কথা হয়। তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তাদের কাছ থেকে লট প্রাপ্তির কার্যাদেশ দেয়ার সময় ও জামানত (ব্যাংক ড্রাপ) উত্তোলনের সময় উর্ধতন কর্মকর্তার নাম ভাঙ্গিয়ে উৎকোচ আদায় করেছে প্রধান সহকারী ও অফিস সহকারী। এ দু’কর্মচারীর হাতে নানা ভাবে হয়রাণীর শিকার হতে হয়েছে। এ সব বিষয়ে সদর সহকারী বন সংরক্ষককে অবহিত করলেও তিনি পাত্তা দেননি।অপরদিকে একই রেঞ্জের অধীনে মহেশখালি, কক্সবাজার সদরের ১৯টি পয়েন্টের নানা এলাকায় চলছে পাহাড় কাটার প্রতিযোগিতা। পরিবেশবাদীদের অভিযোগ, একদিকে গাছ কাটা আরেকদিকে পাহাড় কাটার ফলে পরিবেশেরও মারাত্মক বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা দেখা দিবে।

বিট কর্মকর্তা পেয়ার মাহমুদ পিয়ারো মহেশখালী বনবিটে যোগদানের পর থেকে স্থানীয় কাঠ চোরাকারবারীদের সাথে যোগসাজস করে বনের সৃজিত মূল্যবান বড় বড় ঝাউবন ও বাইন গাছ গুলো রাতের আধারে কেটে পাচার করে দিচ্ছে বলে ঘটিভাংগা ও কেরুনতলী এলাকার জনসাধারণ অভিযোগ করেন। এর সঙ্গে প্যারাবনে চিংড়িমাছ চাষ করার নামে হাড়িঘের করার অনুমতি দিয়ে প্রায় ২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে মর্মে অভিযোগ করেন। সরকারি নিয়ম মতে প্যারাবন গভীরে লাইফবোট নিয়ে ডিউটি করার কথা থাকলেও স্টাফসহ বিট সদস্যরা সিভিল পোশাকে ওয়াপদা বেরিবাধের উপর, নয়তো ঘটিভাংগা ব্রীজে দায়িত্ব পালন করে। এই সুযোগে বন নিধনকারীরা বনের গভীরে বৃক্ষ নিধন করে থাকে বলে অভিযোগে জানান জনৈক জালাল মিয়া। পুর্ব পাড়ার মোহাম্মদ শফি জানায়,বিট কর্মকর্তা ও বন প্রহরীদের ডিউটি বনে করার কথা থাকলেও তারা বেশির ভাগ সময় অফিসে আড্ডা দিয়ে অথবা চায়ের দোকানে সময় পার করে।

বিটের যোগসাজশে বিভিন্ন চোরাই কাঠ ব্যবসায়িদের সাথে আতাত করে সামাজিক বনায়ণের গাছ গুলো কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এদের আশ্রয়ে এক শ্রেণির স্থানীয় বনখেকো বনভুমির জায়গা দখলে নিচেছ। এছাড়া বিট কর্মকর্তার সহায়তায় ওই এলাকায় বহিরাগত লোকজন এসে বনভূমি দখল করে নিয়েছে। এ সুযোগে তারা সামাজিক বনায়নের গাছ কেটে বন উজাড় করে দিচ্ছে। এ অবস্থায় সরকারের কোটি টাকার বনসম্পদ ও সামাজিক বনায়ন রক্ষা করা যাচ্ছে না। দারিদ্র বিমোচন প্রকল্পের কোটি টাকা গাছসহ বন দুর্নীতিবাজ বিট কর্মকর্তার অবহেলায় ধ্বংস হবে তা মানতে পারছেনা জনগন। ইতিহাস ও প্রকৃতিগত ভাবে অতিরিক্ত জ্বলোচ্ছাস, খরা ও বন্যা কবলীত এলাকায় একমাত্র মানুষের নিরাপত্তার জন্য এই প্রাকৃতিক বনটি প্রহরী হিসেবে কাজ করে আসছে।

যেমনটা রক্ষা করেছিলো ভয়াল ৯১ সালে, ২০০৭ সালের মহা-প্রলয়ংকারী ঘুর্ণিঝড় সিডর, ২০০৯ সালের আইলার কবল হইতে এ সবুজ বেষ্টনির কারণে এলাকার বেড়িবাঁধসহ সাধারণ জনগনের জীবন রক্ষা হয়েছিলো। কিন্তু বারংবার কিছু অসত বন কর্মকর্তা ও তার সহকারীরা অসত উদ্দেশ্যে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য কতিপয় অসত দুর্নিতীবাজ লোভি মানুষকে প্রভাবিত করিয়া কতিপয় অসাধু ব্যক্তিকে ব্যবহার করে সরকারি বনভুমির আওতায় থাকা কেওড়,বাইন, গড়াইন,গেওয়া গাছ,ঝাউবন কেটে বন উজার করে ফেলে। এ ব্যাপারে মহেশখালি উপজেলা বন বিভাগের রেঞ্জ কমকর্তা কবিরের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে ফোন রিসিভ না করাতে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ বিষয় উপকূলীয় দক্ষিণ বন বিভাগের জেলা বন কর্মকর্তা এসিএফ জিএম মোহাম্মদ আলী কবির বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে আশ্বাস প্রদান করেন।

……………..জেএম/সিটিনিউজবিডি 

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.