১০০ বছর পর কবি আল মাহমুদ

0

মোরশেদ তালুকদার : আজ থেকে ১০০ বছর পর। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস লিখবেন সে সময়কার গবেষকরা। কবিতায় যাদের অবদান, এ অধ্যায়ে এসে একটি নাম তাঁদের লিখতেই হবে। তিনি মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ (১১ জুলাই ১৯৩৬ – ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯)। যাকে আমরা কবি আল মাহমুদ হিসেবেই চিনি।
১০০ বছর পর আল মাহমুদ সম্পর্কে একজন সমালোচক লিখবেন, “তিঁনি মৃত্যুর আগেও একবার মরেছিলেন। কারণ, তিঁনি তাঁর আদর্শ থেকে সরে এসেছিলেন।”
আরেকজন লিখবেন, “পচা শামুকে পা কেটেছিলেন আল মাহমুদ। তাই মৃত্যুর পর আল মাহমুদের শূণ্যতা অনুভব করে নি সেই সময়কার (২০১৯) সাহিত্যিকরা।”
আল মাহমুদ সম্পর্কে নিজেদের বক্তব্য সত্য প্রমাণে তারা (সমালোচক) হয়তো ‘রেফারেন্স’ হিসেবে এখনকার ফেসবুকের কিছু ‘পোস্ট’ সংযোজন করবেন। অবশ্য নিজেকে “সুশীল” এবং বিজ্ঞ সাহিত্যসমালোচক হিসেবে প্রচারই যে এসব ‘পোস্ট’দাতার আসল উদ্দেশ সেটা নিয়ে কিছু লিখবেন না তারা (১০০ বছর পর যিনি আল মাহমুদের সমালোচনা করবেন)।
১০০ বছর পর হয়তো আরেকদল সমালোচক লিখবেন, “ব্যক্তি আল মাহমুদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। কিন্তু তাঁর কাব্যপ্রতিভা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নাই। যে বা যারা আল মাহমুদের নীতির প্রশ্ন তোলেন তাদের অনেকে হয়তো এটা জানেন না, আল মাহমুদ একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। অথবা জানলেও আল মাহমুদের কাব্যের স্বরুপ উন্মোচনের ক্ষমতা তাদের নেই। পাণ্ডিত্যে নিজেদের ব্যর্থতা আড়ালে তাই এরা আল মাহমুদের চরিত্র নিয়ে টানাটানি করেন। অথচ একজন কবির প্রকৃত মূল্যায়ন হওয়া উচিত তাঁর কাব্য কতটা সমৃদ্ধ সেটার বিবেচনায়।”
২. সত্তর বছর বয়সে সক্রেটিস যখন বিচারকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন তখন তাঁর বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ ছিল। এর মধ্যে মারাত্বক অভিযোগ ছিল, “তিনি যুবকদের নৈতিক চরিত্র কলুষিত করে তাদের বিপথে চালিত করছেন”। আথেন্সের তিনজন খ্যাতিমান ব্যক্তি তথা কবি Meletas, বক্তা Lycon এবং নেতা Anytus অভিযোগগুলো করেছিলেন।
বিচারক মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেছিলেন রায়ে। বিচারকদের উদ্দেশ করে সক্রেটিস বলেছিলেন, “আমি চলেছি মৃত্যুর দিকে, আপনারা যান জীবনের দিকে। ঈশ্বর জানেন কার দিকটা শ্রেষ্ঠ।”
বিচারে অপরাধী প্রমাণিত হয়েছিলেন সক্রেটিস। অথচ মৃত্যুর পরেও এখনো বেঁচে আছেন দার্শনিক সক্রেটিস। যুগ যুগ বেঁচে থাকবেন তাঁর কর্মে।
“কোন কোন কবি এক লাইনেই অমর।” একজন আল মাহমুদও বেঁচে থাকবেন ‘সোনালি কাবিন দিয়ে’। সোনালি কাবিনেই বলেছিলেন, “পরাজিত হয় না কবিরা”। আল মাহমুদকে পরাজিত করা যাবে না।
আবৃত্তি মঞ্চে স্থান না পেলেও পাঠকের হৃদয়ে জায়গা পাওয়া কবি অনন্তকাল বেঁচে থাকবেন। কবিকে পরাজিত করতে চাইলে চরিত্র নয়, বরং তার সাহিত্যের সমালোচনা করে প্রমাণ করুন এসব “অখাদ্য কবিতা হয়ে উঠেনি”।
জানি পারবেন না। তাই ১০০ বছর পরেও কবি ঠিকই ঠাঁই করে নিবেন বাংলা সাহিত্যের সোনালী ইতিহাসে। তখন হয়তো সমালোচকরা বলবেন, “আল মাহমুদকে ছাড়া বিংশ শতাব্দীর বাংলা কবিতা কল্পনা করা যায় না। কবির শেষ জীবনের মতাদর্শ নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও তা একজন কবিকে মূল্যায়নে যথেষ্ট নয়। কবির মূল্যায়ন হয় তাঁর কাব্য দিয়ে। তাছাড়া মৃত্যুর যে কয়টি বছর আগের জীবন নিয়ে আল মাহমুদ প্রশ্নবিদ্ধ তার বহু আগেই কবি হয়ে উঠেছিলেন তিঁনি। ”

 

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.