ছাত্রলীগের ৩১ কর্মী চিহ্নিত: পরীক্ষা দিল বহিষ্কৃত ছাত্র

0

সিটিনিউজবিডি :  শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর হামলায় অংশ নেয়া ছাত্রলীগের ৩১ নেতাকর্মীকে চিহ্নিত করা গেছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হওয়া এক ছাত্রলীগ কর্মী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে বলে জানা গেছে।

এদের মধ্যে ১৬ জনই শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিবন চক্রবর্তী পার্থ ও সাধারণ সম্পাদক ইমরান খানের অনুসারী। বিভিন্ন ভিডিও চিত্র ও সিসি টিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এদের চিহ্নিত করা হয়েছে।

ভিসি অধ্যাপক ড. আমিনুল হক ভূঁইয়ার অপসারণ ও শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে শাবিতে শিক্ষকদের আন্দোলন চলছেই। বুধবারও তারা কর্মবিরতি, মৌন মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে। এর মধ্যেই এবার চার হলে নতুন প্রভোস্ট নিয়োগ দিয়েছে প্রশাসন।

অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল জানান, আমি আগেই বলেছি এ ভিসি মিথ্যাবাদী। এ রকম মিথ্যাবাদী ভিসির অধীনে কাজ করা সম্ভব না। আমি সরকারকে অনুরোধ করব আমাদের প্রকাশিত শ্বেতপত্রের প্রতিটা লাইন ধরে এগিয়ে যান এবং সে অনুযায়ী তদন্ত করেন। আমাদের অভিযোগ ভুল প্রমাণিত হলে আমাদের যে শাস্তি দেয়া হবে তা মাথা পেতে নেব।

শিক্ষকদের আন্দোলন সম্পর্কে ভিসি আমিনুল হক ভূঁইয়া বুধবার বলেন, শিক্ষকরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা না মেনেই আন্দোলন করছেন। রোববারের ঘটনার জন্য আন্দোলনরত শিক্ষকরাই দায়ী। তিনি প্রশ্ন করেন, সকাল ৭টার সময় অবস্থানের কী প্রয়োজন ছিল? সচেতন ছাত্ররা মনে করেছিল একাডেমিক কাউন্সিল করা উচিত।

এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষকরা আমাকে ধাক্কা দেয়। ছাত্ররাও শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করে। তবে এ ঘটনা নিন্দনীয়। আপনি পদত্যাগ করবেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি যে প্রক্রিয়ায় নিয়োগ পেয়েছি সরকার চাইলে সে প্রক্রিয়ায় চলে যাব।

৩১ নেতাকর্মী চিহ্নিত : সাধারণ সম্পাদক ইমরান খানের ১২ অনুসারী এবং সভাপতি সঞ্জিবন চক্রবর্তী পার্থর চার অনুসারী হামলায় অংশ নেয়। বাকিরা সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সাইদ আকন্দ, উত্তম কুমার দাশ, সহ-সভাপতি অঞ্জন রায়, যুগ্ম সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম সবুজ সমর্থিত কর্মী ছিল।

ফুটেজে দেখা যায়, ইমরান সমর্থিত কর্মী ধনিরাম রায় ও তমাল পাল অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউনুসকে ধাক্কা দিয়ে ও মারধর করে মাটিতে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করে। অন্য শিক্ষকদের ওপর হামলা ও ব্যানার টেনে ছিঁড়ে ফেলায় অংশ নেয় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আবদুর বাতেন তন্ময়, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের মোস্তাক আহমেদ, আবদুল্লাহ আল মাসুম, ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের ফয়সল আহমেদ জিয়া, ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের প্রথম বর্ষের সজীব আহমেদ, তৃতীয় বর্ষের আরিফ আহমেদ, দ্বিতীয় বর্ষের জাহিদ হাসান, ফুড অ্যান্ড টি টেকনোলজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নিয়াজ মোর্শেদ, নৃবিজ্ঞান দ্বিতীয় বর্ষের শ্রাবণ আহমেদ ও লোক প্রশাসন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শুকান্ত। হামলার ঠিক আগে তাদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুডকোর্টে মিটিং করেন ইমরান খা। ঘটনার সময়ও তিনি পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন।

 

শিক্ষকদের প্রতিবাদ : মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক ফোরামের শিক্ষকরা বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় মৌন মিছিল বের করেন। পরে ভিসি ভবন চত্বরে সমাবেশ করেন তারা।

অধ্যাপক সৈয়দ সামসুল আলমের সভাপতিত্বে এবং শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফারুক উদ্দিনের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন অধ্যাপক মস্তাবুর রহমান, অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম, অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুছ, অধ্যাপক আবদুল গণি, অধ্যাপক সৈয়দ হাসানুজ্জামান ও সহকারী অধ্যাপক এমদাদুল হক।

তারা বলেন, ভিসিকে ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যেতে হবে। এ বিষয়ে সরকারকে দ্রুত উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানান তিনি।

সমাবেশে অধ্যাপক ড. ইউনুছ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, ভিসি বেশ কয়েকটি মিডিয়ায় তার কলার চেপে ধরার কথা বলছেন। কিন্তু প্রকাশিত সিসিটিভির ফুটেজের ছবিতেই প্রমাণিত হয় ভিসি কত বড় মিথ্যাবাদী। আমি সংবাদমাধ্যমটিকে ধন্যবাদ জানাই সত্য ঘটনা তুলে ধরার জন্য।

ড. ইউনুছ আরো বলেন, ওইদিনের ঘটনার ভিডিও ফুটেজটি সবাই দেখুন, সেটি প্রকাশ করা হোক। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ভিসির বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন।

ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চার ছাত্রকে বহিষ্কার করা হয়েছে। শিক্ষক হিসেবে ব্যাপারটা আমার খুব খারাপ লেগেছে। কারণ এসব ছেলেমেয়ের বাবা-মায়েরা এখানে পাঠায় লেখাপড়া করতে।

অধ্যাপক সৈয়দ সামসুল আলম বলেন, আমরা ভিসির অপসারণের দাবি থেকে এক চুল পরিমাণও নড়ব না। দিন দিন আমরা আরো কঠোর কর্মসূচি দিব। ঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে আজ সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করবেন বলে জানান অধ্যাপক সৈয়দ সামসুল আলম।

নতুন প্রভোস্ট নিয়োগ : ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মুহসিন আজিজ খানকে শাহপরাণ হল, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শরদিন্দু ভট্টাচার্যকে সৈয়দ মুজতবা আলী হল, সমাজকর্ম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিনা পারভিনকে প্রথম ছাত্রী হল, ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শরীফা ইয়াসমিনকে বেগম সিরাজুন্নেসা হলের প্রভোস্ট এবং পরিসংখ্যান বিভাগের প্রভাষক নাহিদ সুলতানাকে একই হলের সহকারী প্রভোস্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

ভিসি অধ্যাপক আমিনুল হক ভূঁইয়া প্রত্যেককে তিন বছরের জন্য নিয়োগ দেন। উপরেজিস্টার যোবায়ের আহমেদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। নিয়োগের বিষয়টি ভিসি অধ্যাপক আমিনুল হক ভূঁইয়া নিশ্চিত করেন।

ভিসি অপসারণের দাবিতে প্রশাসনিক পদ থেকে পদত্যাগ করা পদের মধ্যে শাবির হলগুলোর প্রভোস্ট এবং সহকারী প্রভোস্টরাও ছিলেন। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু হলে প্রভোস্ট নিয়োগ দেয়া হলেও পাঁচ মাস ধরে অভিভাবকশূন্য ছিল শাবির এ চারটি হল।

পরীক্ষা দিলেন বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ কর্মী : বুধবার বন ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের ২য় বর্ষ ২য় সেমিস্টারের শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে (এফইএস-২১৮) ফাইনাল পরীক্ষা ছিল। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এ পরীক্ষা চলে। এতে ছাত্রলীগ কর্মী জাহিদ হোসেন নাঈম অংশ নেন। শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনায় মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছিল।

এ বিষয়ে বন ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. নারায়ণ সাহা বলেন, চিঠিতে তিন কার্য দিবসের মধ্যে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়নি। তবে আন্দোলনকারী শিক্ষক নেতা মো. ফারুক উদ্দিন বলেন, ভিসি পরিকল্পিতভাবে এটা করছেন। তিনি শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছেন।

দফতর প্রধানদের নিন্দা : শিক্ষক লাঞ্ছিত করার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দফতর প্রধান ফোরাম তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে আজ সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত কর্মবিরিত পালন করবে ফোরামটি। ফোরামের আহ্বায়ক আ ন ম জয়নাল আবেদীন এ তথ্য জানান। তারা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দায়ীদের শাস্তি দাবি করেন।

রোববার সকালে ভিসিকে ভবনে প্রবেশে বাধা দেন তার অপসারণ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকরা। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসব শিক্ষকের ওপর হামলা চালিয়ে ভিসিকে ভেতরে ঢোকার সুযোগ করে দেন। এ সময় ১০ শিক্ষক আহত হন। এ নিয়ে সারা দেশেই তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করছে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.