শৃঙ্খলা ফেরাতে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নির্দেশ শিক্ষামন্ত্রীর

0

সিটিনিউজ ডেস্ক:: শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা ফেরাতে প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেন, ‘কোনও অজুহাতে তা অমান্য করা হলে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আজ থেকেই এই ব্যবস্থা নিতে হবে।’ সোমবার (৬ আগস্ট) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত রাজধানীর স্কুল ও কলেজ প্রধানদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ নির্দেশ দেন।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকদের শিক্ষা প্রতষ্ঠানের শিক্ষার অভ্যন্তরীণ পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আগামীকাল সব শিক্ষার্থীকে নিয়ে সমাবেশ করে সবার কাছে বার্তা পৌঁছে দিন, শিক্ষার্থীদের যেন কেউ ব্যবহার করতে না পারে। গুজব রটিয়ে যেন কেউ শিক্ষার্থীদের ক্ষতিগ্রস্ত না করতে পারে। সব শিক্ষক মিলে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ব্যবস্থার জন্য শিক্ষকদের দায়িত্ব নিতে হবে। যারা পারবেন না, তাদের জবাবদিহি করতে হবে।’

শিক্ষার্থীদের ধমক দিয়ে নয়, ভালোবাসা দিয়ে বোঝাতে হবে মন্তব্য করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘অভিভাবকদের সম্পৃক্ত করতে হবে। অভিভাবকদের ডেকে সভা করতে হবে। শিক্ষক-অভিভাবক মিলে এ ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনও অজুহাত দেখানোর সুযোগ নেই। আমরা খবর নেবো, তথ্য রাখবো, কে করছেন, কে করছেন না। অনেকেই এবার পেরেছেন। এবার আপনাদের পরীক্ষার সময়, কে পারবেন আর কে পারবেন না।’গভর্নিং বডির সদস্যদের সহায়তা নিয়ে প্রতিষ্ঠান যথাযথভাবে পরিচালনার জন্য নির্দেশ দেন শিক্ষামন্ত্রী।

শিক্ষার্থীদের ঘরে ফেরার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘তোমাদের অভিনন্দন, তোমাদের বিজয় হয়েছে। যে ঘটনা ঘটেছে, সে ঘটনা মর্মান্তিক, আমরা তাদের (নিহত দুই শিক্ষার্থী) পরিবারের দুঃখ, কষ্ট, বেদনা থেকে বিচ্ছিন্ন নই। কোমলমতি প্রকৃত শিক্ষার্থীদের আন্তরিকতা, ক্ষোভ ও দুঃখকে সম্মান জানাচ্ছি। দয়া করে রাজপথ ছেড়ে ক্লাসে ফিরে যাও। যা করেছ, তা এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব সরকারের, জনগণের। কুচক্রীমহল শিক্ষার সার্বিক পরিবেশ নষ্ট করে দেবে। দয়া করে বাড়িতে যাও। তোমাদের অর্জন রক্ষা করা হবে। নিজেকে আরও প্রস্তুত করো, আরও বড় পদক্ষেপ নিতে হবে।’ এ সময় তিনি গুজবে কান না দেওয়ারও আহ্বান জানান।

সড়কে নিহত দুই শিক্ষার্থরি বিচার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘যারা আমাদের শিশুদের হত্যা করেছে, তাদের অবশ্যই বিচার হবে। কাল মন্ত্রিসভায় সড়ক পরিবহন আইন অনুমোদন হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে রাস্তা পারাপারে আন্ডার পাস, ফুটওভারব্রিজ হবে। প্রধানমন্ত্রী সব মেনে নিয়েছেন। তবে এতে সময় লাগবে।’

সড়কে অনিয়ম নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে কতগুলো বিষয় স্পষ্ট হয়েছে। পরিহন মালিক ও শ্রমিকরা নিয়মনীতি মানে না। অনেকেই নীয়িমনীতি মানেন না। নিয়ম না মেনে চললেই দুর্ঘটনা ঘটে। তাই বলে সীমাহীন সময় নিয়ে আন্দোলন চলে না। পরিবহন সেক্টরের কালচার পরিবর্তন করতে হবে। আমরা ব্যবস্থা নেবো। পরিবহনে যারা রয়েছেন তাদের সন্তানরাও স্কুল, কলেজে লেখাপড়া করে।’

মতবিনিময় সভায় শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলা ফেরানো ও তাদের নিরাপত্তায় বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানরা। তাদের প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে, গভর্নিং বডিকে সক্রিয় করা, অভিভাবকের সঙ্গে একাধিক মাধ্যমে যোগাযোগ রাখা, ফেসবুক বন্ধ করা, শিক্ষার্থীদের হাতে স্মার্ট ফোন না দেওয়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োগ করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংল্গ্ন স্থানে স্পিড ব্রেকার, আন্ডার পাস, ফুটভার ব্রিজ নির্মাণ, স্কুল বাসের আলাদা ব্যবস্থা করা, প্রতিটি স্কুলে স্কুল ড্রেস বাধ্যতামূলক করা এবং শিক্ষার্থীদের শিক্ষক ও অভিভাবকদের মাধ্যমে কাউন্সেলিং করা।

বৈঠকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া রাজধানীর ২৪২টি কলেজের (এর মধ্যে ১৩১টি স্কুল অ্যন্ড কলেজ) অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ ও ১৯৪টি মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.