আ’লীগ নেতা জহুরুল হক’র হত্যার বিচার ১৭ বছরেও হয়নি

0

জাহাঙ্গীর উদ্দীন মাহমুদ,ফটিকছড়ি : দীর্ঘ ১৭ বছর অতিবাহিত হলেও ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল হক চৌধুরী হত্যার বিচার হয়নি। এই মামলার ১১ জন আসামীর বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হলেও প্রকাশ্যে ঘুরছে আসামিরা। হত্যায় জড়িত অনেককে শনাক্ত করা গেলেও অনেক আসামিকে গ্রেফতার করা যায়নি। আওয়ামীলীগ সরকারের আমলেও আওয়ামীলীগ নেতা হত্যার বিচার তরান্বিত না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছে নিহতের পরিবার।

উল্লেখ্য, ২০০১ সালের ২৫ আগস্ট রাতে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামীলীগ নেতাকে সন্ত্রাসীরা ঘুমন্ত অবস্থায় ঘরের জানালা দিয়ে গুলি করে হত্যা করে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ফটিকছড়ি আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এম জহুরুল হক হত্যাকান্ডের পর তার ছোট ভাই এডভোকেট খাইরুল হক বাদি হয়ে ফটিকছড়ি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় বেশ কয়েকজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। পরবর্তীতে মামলাটির চার্জশিট দেওয়া হয় ১১ জন আসামিকে সনাক্ত করে। এর মধ্যে ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে গ্রেফতারকৃত আসামিরাও জামিনে এসে প্রকাশ্যে ঘুরছে। এর মধ্যে ২০১০ সালে প্রধান আসামি ওসমান বাহিনীর প্রধান ওসমান গণি র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হন।

মামলার বাদি এডভোকেট খাইরুল হক আজকের সূর্যোদয়কে বলেন, বর্তমানে সাক্ষীর অভাবে মামলাটি চলছে প্রায় ধীর গতিতে। সরকারি বিভিন্ন সংস্থার যেমন পুলিশ, ডিএসবি, ডাক্তাররা ঠিক সময়ে সাক্ষী দিতে আসেন না। তাদের বিরুদ্ধে সমন জারি করা হলেও অনেকে সাক্ষী দেননি। তিনি আরো জানান, ঘটনার পর থেকে একাধিকবার তদন্তকারী সংস্থা পরিবর্তন হয়ে সর্বশেষ মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় চট্টগ্রাম তৃতীয় অতিরিক্ত দায়রা জজকে। কিন্তু মামলার কার্যক্রম ধীরগতিতে চলায় হতাশ ও ক্ষুব্দ জহুরুল হকের পরিবারে। এড. খাইরুল হক বলেন, আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার চেয়ে তদন্ত সংস্থার দ্বারে দ্বারে ঘুরে ক্লান্ত ও হতাশ হয়ে পড়েছি আমরা। তারা টাকা ছাড়া মামলার একপাও এগুতে নারাজ। যা খুবি দুঃখ জনক।

একজন মুক্তিযোদ্ধা হত্যার সুষ্ঠ বিচার পাব কিনা জানি না। এদিকে বর্তমান মুক্তিযোদ্ধের স্বপক্ষের সরকার ক্ষমতায় আসার পর হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন ও ঘাতকরা শাস্তি পাবে বলে তাদের আশ্বস্ত করেছেন বলে জানান মামলার বাদী। কিন্তু সরকার পরিবর্তন হয়ে অনেক বছর ক্ষমতায় থাকার পরও এ হত্যাকান্ডের বিচার আজও হয়নি।

বীরমুক্তিযোদ্বা জহুরুল হক এর ছেলে মুজিবুল হক চৌধুরী বলেন, আমার বাবা ১৯৭২-১৯৮৯ সাল পর্যন্ত ফটিকছড়ি আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ১৯৮৯-২০০১ সাল পর্যন্ত, আমৃত্যু উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ছিলেন। এমন একজন কর্মি বা নেতার হত্যার বিচার যদি দল ক্ষমতায় থাকা আবস্থায় করতে না পারে, তাহলে সাধারন কর্মিদের অবস্থা কি হবে? উনার হত্যার পর উনার দীর্ঘ দিনের সহচর তৎকালিন আওয়ামীলীগ সভাপতি আফতাব উদ্দীন চৌধুরী ও সম্পাদক এম. সোলেমান বি কম নির্বাচিত হন।

ক্ষমতার পালা বদলে ২০০৮ সালে আবারো আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসে, ২০০৮ থেকে এখন ২০১৮ দীর্ঘ ১০ বছর আওয়ামীলীগ ক্ষমতায়, এই দশ বছরে উপজেলা আওয়ামীলীগের সদ্য সাবেক সভাপতি ও সা: সম্পাদক এবং বর্তমান সভাপতি ও সা: সম্পাদক কেউই ওনার হত্যার বিচারের ব্যাপারে খোজ- খবর রাখে নাই, যে ব্যাক্তি দীর্ঘ ৩০ বছর ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের দায়িত্বে থাকার পরও যদি তার হত্যার বিচারেরর জন্য সরকারি পিপি কে টাকা দিয়ে কেস চালাতে হয়। এখন আমাদের হতাশা ছাড়া আর কিছু নাই।

এ ব্যাপারে ফটিকছড়ি উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরী বলেন, সন্ত্রাসী ওসমান বাহিনীর নেতৃত্বে তৎকালিন আ.লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল হককে নৃশংস ভাবে রাতের আধারে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকান্ডের সুষ্টু বিচার আমরা এখনো পায়নি। তবে র‌্যাবে ক্রসফায়ারে ওসমান নিহত হলেও অন্য আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

এদিকে জহুরুল হকের ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার তার গ্রামের বাড়িতে দোয়া মাহফিল আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও বীর মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল হক স্মৃতি সংসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তির পক্ষ থেকে পূষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.