বোয়ালখালীতে টিআর-কাবিখা প্রকল্পে দুর্নীতি

0

ছাদেকুর রহমান সবুজ, বোয়ালখালী (চট্টগ্রাম): চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায় গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) ও গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা) বিশেষ নন সোলার কর্মসূচি আওতায় ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের ২য় পর্যায়ের প্রকল্পে অর্থ দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

এডিবিসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কাজ হয়ে যাওয়া প্রকল্পগুলোকে নতুন করে টিআর-কাবিখার বিশেষ বরাদ্দে দেখানো হয়েছে ও নাম সর্বস্ব প্রকল্প দেখিয়ে সরকারি অর্থ হরিলুটের এ অভিযোগ পাওয়া গেছে।

চলতি বছরের ১৩ মার্চ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সুপ্তশ্রী সাহা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) একরামুল ছিদ্দিক যৌথ স্বাক্ষরিত তালিকায় জানা গেছে টিআর ১৯টি প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হয় ১২ লক্ষ ৬৭হাজার ৫২০টাকা এবং কাবিখার ১৬টি প্রকল্পের বরাদ্দ দেয়া হয় ১শত সাড়ে ৩২ মেট্রিক টন চাউল।

তবে এসব প্রকল্পের বেশিরভাগই নামসর্বস্ব প্রকল্প ও এডিবিসহ অন্যান্য বরাদ্দে উন্নয়নকৃত প্রকল্পকে কাগজেপত্রে হিসাব দেখিয়ে টিআর-কাবিখার অর্থ নয়ছয় করা হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

জানা গেছে, টিআর প্রকল্পে বোয়ালখালী পৌরসভার মুসলিম উদ্দিন সাহেবের পারিবারিক কবরস্থান উন্নয়নে ১ লক্ষ টাকা, পশ্চিম গোমদ-ী দক্ষিণ পাড়া ফোরকানিয়া মাদ্রাসার উন্নয়নে ৫০হাজার, আব্দুল লতিফ চৌধুরী বাড়ির সড়ক উন্নয়নে ৫০হাজার, খায়ের মঞ্জিল দরবার শরীফের উন্নয়নে ১ লক্ষ, উপজেলার হল রুমের আসবাবপত্র উন্নয়নে ৫০হাজার, বড়ুয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়নে ৫০ হাজার, নজু শাহ্ সড়ক উন্নয়নে ৫০ হাজার, মরহুম মফিজ সড়ক উন্নয়নে ৫০হাজার, অন্য একটি প্রকল্পে ১লক্ষ, সারোয়াতলী হাজী আব্দুল সবুরের বাড়ির রাস্তা উন্নয়নে ৫০হাজার, সুয়াবিবি সড়ক উন্নয়নে ৫০ হাজার, কঞ্জুরি হযরত চান্দবক্স সড়ক উন্নয়নে ১লক্ষ, পোপাদিয়া আব্দুর ওহাব সড়ক উন্নয়নে ৫০ হাজার, আমুচিয়া ইমাম হোসাইন একাডেমি আসবাবপত্র ক্রয়ে ৫০হাজার, চরণদ্বীপ ভান্ডারী দায়রা শরীফ উন্নয়নে ১ লক্ষ, নুর কামাল ক্লিনিক সংলগ্ন সড়ক কবরস্থান উন্নয়নে ১লক্ষ, ঘাটকুল সড়ক উন্নয়নে ৬৭হাজার ৫২০টাকা, আহলা কড়লডেঙ্গা তালুকদার পাড়া ঈদগাঁও উন্নয়নে ৫০হাজার, আমুচিয়া বগাচরা সড়ক উন্নয়নে ৫০হাজার টাকা নগদ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

কাবিখা প্রকল্পে কধুরখীল শরিফপাড়া জাগের সওদাগর বাড়ির সড়ক সংস্কারে ৮ মেট্রিক টন, মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম সড়ক সংস্কারে ৯ মেট্রিক টন, পশ্চিম গোমদন্ডী হাজী আবুল হোসেন নুর নাহার উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাটে ৮ মেট্রিক টন, শাকপুরা সতীশ মহাজন সারাং সড়ক সংস্কারে ৮ মেট্রিক টন, তাজ উদ্দিন সড়কের দুই সাইড মাটি ভরাট ৮ মেট্রিক টন, সারোয়াতলী বাইন্যাপাড়া সংযোগ সংস্কার ৮ মেট্রিক টন, ছনদন্ডী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভরাট ৯ মেট্রিক টন, খিতাপচর রশিদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংস্কারে ৮ মেট্রিক টন, পোপাদিয়া আকুলিয়া পুরাতন ডিপেন সড়ক সংস্কারে ৮ মেট্রিক টন, শহীদ রফিক স্কুল সংযোগ ৮ মেট্রিক টন, চরণদ্বীপ ফকিরা বাপের বাড়ি সড়ক সংস্কারে ৯ মেট্রিক টন, আলী আহমদ সড়ক সংস্কারে ৮ মেট্রিক টন, চরণদ্বীপ দরবার কবরস্থান সংযোগ সড়ক সংস্কারে ৯ মেট্রিক টন, আমুচিয়া দত্ত চৌধুরী সড়ক সংস্কারে ৮ মেট্রিক টন, মুছা চৌধুরী বাড়ি রাস্তা সংস্কার সাড়ে ৮ মেট্রিক টন, কড়লডেঙ্গা বুরি সড়ক সংস্কার ৮ মেট্রিক টন চাউল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা যুবলীগের একাংশের সভাপতি মো. সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘১৯টি টিআর ও ১৬টি কাবিখা প্রকল্পের অর্থ হরিলুট হয়েছে। পৌর এলাকায় ১টি প্রকল্পের কাজও করা হয়নি। এ ব্যাপারে স্থানীয় জনগণসহ আমরা দুইএকদিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করার প্রস্তুতি নিয়েছি।’

চরণদ্বীপ আলী আহমদ সড়ক সংস্কার প্রকল্পের সভাপতি তসলিম উদ্দিন জানান, ‘আমাকে প্রকল্পের সভাপতি করা হলেও আমি ১টাকাও চোখে দেখিনি। প্রকল্পের কাজ করেছেন স্থানীয় মঈন উদ্দিন আজাদ নামের এক ব্যক্তি করেছেন। তবে পকেটের টাকা খরচ করে উপজেলায় গিয়ে প্রকল্পের কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেছি।’

চরণদ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শামসুল আলম জানান, ‘চরণদ্বীপ ফকিরা বাপের বাড়ি সড়ক নামের কোনো সড়ক এ ইউনিয়নে নেই। চরণদ্বীপ দরবার কবরস্থান সংযোগ সড়ক সংস্কার নামে যে প্রকল্প দেখানো হয়েছে সেই সড়কের কাজ আমি এমপি সাহেবের নির্দেশে ব্যক্তিগত তহবিল থেকে সংস্কার করেছি। এছাড়া ভা-ারী দায়রা শরীফ উন্নয়নে টিআর থেকে ১ লক্ষ টাকার যে বরাদ্দ দেখানো হয়েছে সে ভা-ারী দায়রা শরীফে গত তিন বছরেও কোনো উন্নয়ন কাজ হয়নি।’

সারোয়াতলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. বেলাল হোসেন বলেন,‘টিআরের অর্থে নয় এডিবি’র বিশেষ বরাদ্দে হাজী আবুল সবুরের বাড়ির রাস্তা সংস্কার করা হয়েছে সপ্তাহ দুয়েক আগে। সারোয়াতলী ইউনিয়নে টিআর বরাদ্দের উল্লেখিত সুয়াবিবি সড়ক আছে বলে আমার জানা নেই।’

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা সুপ্তশ্রী সাহা মন্তব্য করতে অপারগতা জানিয়ে বলেন, অফিসিয়ালি কোনো বক্তব্য দেওয়া যাবে না। তাঁর বক্তব্য নিতে হলে জেলা প্রকল্প পরিচালকের অনুমতি নিতে হবে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.