প্রকৌশলীদের প্রকল্প এলাকায় উপস্থিত থাকতে মেয়রের নির্দেশ

0

সিটি নিউজঃ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের চলমান সকল উন্নয়ন প্রকল্পে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীসহ সর্বস্তরের কর্মকর্তাদেরকে প্রকল্প এলাকায় বাধ্যতামূলকভাবে অবস্থান করার নির্দেশ দিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব আ.জ.ম নাছির উদ্দীন। তিনি বলেন উর্দ্ধতন কর্মকর্তার উপস্থিতি তার অধীনস্থ কর্মকর্তাদের দায়িত্ববোধ বাড়িয়ে দেয়। স্বচ্ছতা ও কাজের গুনগত মান নিশ্চিত হয় । তাই চসিক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীসহ তার নিচের সকল কর্মকর্তাদের প্রকল্প স্থানে অবস্থান করার উপর গুরুত্বারোপ সিটি মেয়রের।

আজ রবিবার (২১ জুলাই) সকালে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচিত পরিষদের ৪৮ তম সাধারণ সভায় সভাপতির বক্তব্যে একথা বলেন। সভায় প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলর, সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর, চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া, সিটি মেয়রের একান্ত সচিব মো. আবুল হাশেমসহ নগরীর সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। সভা সঞ্চালনা করেন চসিক সচিব আবু সাহেদ চৌধুরী।

সিটি মেয়র আরও বলেন, আগামী ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালন করা হবে। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টদের মাসব্যাপি কর্মসূচি গ্রহন করার দিকনির্দেশনা দেন মেয়র।আসন্ন ঈদুল আযহা উদযাপনে সরকারের নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে সিটি মেয়র বলেন নগরীর কোরবানি পশুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।

ঈদের দিন বিকাল ৪ টার মধ্যে পুরো নগরীতে কোরবানীর দিন জবাইকৃত পশুর বর্জ্য অপসারণ এবং ঈদের পরের দিন শেষ রাত পর্যন্ত বর্জ্য অপসারনের লক্ষে ৪১টি ওয়ার্ডকে উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম-৪টি জোনে বিভক্ত করে কাউন্সিলর ও কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ৪টি ‘উপ-কমিটি’ এবং একটি কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন হয়েছে। ঐদিন পরিচ্ছন্ন বিভাগের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়।

বর্জ্য অপসারন কার্যক্রম নিশ্চিতকল্পে কোরবানি ঈদের দিন সকাল ৯ টার মধ্যে দায়িত্বে নিয়োজিত স্থায়ী ও অস্থায়ী পরিচ্ছন্ন কর্মীদের স্ব স্ব ওয়ার্ডে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।এ সমস্ত কার্যক্রম ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলররা তদারকি করবেন। ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়া প্রসঙ্গে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন অদ্যাবধি চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগের সন্ধান পাওয়া যায়নি।তাই বলে বসে থাকলে চলবে না। ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের চলমান কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে হবে। একবার এই ডেঙ্গু রোগ দেখা দিলে মহামারী আকারে ধারণ করবে বলে তিনি সকলকে সর্তক করে দেন।

তিনি বলেন বদ্ধ পানি এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র। বাসাবাড়ির আশপাশে ডাবের খোসা, ফুলের টব, ছাদ, ফ্রিজের নিচের ট্রেতে যাতে পানি না জমে সেদিকে নজর রাখতে তিনি নগরবাসীর প্রতি আহবান জানান। এই প্রসঙ্গে মেয়র বলেন ডেঙ্গু প্রতিরোধে গত ১৫ জুলাই ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। প্রতিদিন ১৬১ জন কর্মী নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে ও বিভিন্ন স্থানে ওষুধ ছিটাচ্ছে। এ ছাড়া রয়েছে সচেতনতা সৃষ্টিতে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন, মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ। প্রতিটি ওয়ার্ডের ঝোপঝাড় পরিস্কার ও নালা-নর্দমায় যেখানে মশা বংশবিস্তার করে, সেখানেও ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। এ সব বহুমুখী কর্মসূচির কারণে মশার উপদ্রব ও ডেঙ্গুর প্রকোপ নেই চট্টগ্রামে। তিনি বলেন পরিচ্ছন্ন বিভাগের সক্ষমতা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশী ।

এই সময় তিনি পরিচ্ছন্ন বিভাগের ওয়ার্ডওয়ারী পরিচ্ছন্ন কর্মীদের তালিকা সভায় তুলে ধরে বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে বিগত সময়ের চেয়ে দ্বিগুন – তিনগুন কর্মী বেশী আছে। এখন কর্মীর স্বল্পতার অজুহাত দেখিয়ে পার পাওয়া যাবে না। সিটি মেয়র বলেন, আপনাদের সুপারিশে এসব পরিচ্ছন্ন কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। আপনারা তাদেরকে চাকুরি দিয়েছেন – চাকুরির রক্ষার দায়িত্ব তাদের। তাদের নিকট থেকে কড়াগন্ডায় কাজ আদায়ের জন্য কাউন্সিলরদেরকে আরো আন্তরিক ও দায়িত্বশীল হওয়ার আহবান জানান মেয়র। এই প্রসঙ্গে তিনি নগরীর রাস্তায় ময়লা-আর্বজনার স্তুপ যেন দেখা না যায়, সে ব্যাপারে চসিক প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তাকে সর্তক করে দেন।

তিনি বলেন, চসিকের সুনামকে ম্লান করার জন্য একটি চক্র উঠে পড়ে লেগেছে। এইসব চক্রটি বাইরের ময়লা এনে নগরীতে ফেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপ-প্রচার চালাচ্ছে । এই কর্মকান্ড সম্পর্কে সকলকে সজাগ থাকার পরামর্শ দেন সিটি মেয়র। চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত মেয়র গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্ণামেন্ট অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই সিদ্ধান্তের আলোকে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ড থেকে বয়স ভিত্তিক নিজস্ব খেলোয়াড় বা বাইর থেকে খেলোয়াড় সংযুক্ত করার বিষয়ে কাউন্সিলরদের মধ্যে বৈঠকের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহনপূর্বক জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে অবহিত করার জন্য আহ্বান জানান মেয়র।

সভায় অনলাইনে মৃত্যু নিবন্ধন, নগরীর কমিউনিটি সেন্টার গুলোকে ট্যাক্সের আওতায় আনা, সবুজ মেলার আয়োজন, ঈদ জামাত ও মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ বিরোধী সমাবেশের আয়োজন, অতি বৃষ্টিতে নগরীতে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার জরিপ, আয়বর্দ্ধক প্রকল্প ও ২৪ জুলাই আরাকান সড়কের উদ্বোধন সম্পর্কে আলোচনান্তে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।

এছাড়া সভায় অর্থ ও সংস্থাপন, বর্জ্য, শিক্ষা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য রক্ষা, জন্ম মৃত্যু নিবন্ধন, নগর অবকাঠামো নির্মাণ ও সংরক্ষণ,আইন শৃংখলা,পরিচালনা ও রক্ষণা বেক্ষণ, যোগাযোগ, দারিদ্র হ্রাস করন ও বস্তি উন্নয়ন,নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন,পরিবেশ উন্নয়ন, দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা, হিসাব নিরীক্ষা, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষন, পানি ও বিদ্যুৎ, সমাজকল্যাণ ও কমিউনিটি সেন্টার, ষ্ট্যান্ডিং ও নামকরণ উপ- কমিটির চেয়ারম্যানগণ স্ব স্ব কমিটির কার্যবিবরণী উপস্থাপন করেন এবং আলোচনান্তে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। সভার শুরুতে সম্প্রতি নগরীতে নিহত ব্যক্তিদের রুহের মাগফেরাত কামনা এবং চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মুফিদুল আলমের সুস্থতা কামনায় বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন চসিক মাদ্রাসা পরিদর্শক মাওলানা হারুন-উর-রশিদ চৌধুরী।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.