সাম্প্রতিক বন্যায় চকরিয়ায় অর্ধ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি

0

বশির আলমামুন, চকরিয়াঃ কক্সবাজারের চকরিয়ায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বানের পানি কমে গিয়ে বন্যা কনলিত এলাকায় সবকিছু উন্নতি হতে শুরু করেছে। গত সোমবার সকাল থেকে রোদের দেখা মেলায়া মানুষের মাঝে কিছুটা হলেও স্বস্থি ফিরে এসেছে।

তবে লোকালয় থেকে পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে ভেসে উঠছে বন্যার ক্ষতচিত্র। কোথাও বেড়িবাঁধ, কোথাও সড়ক লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। আবার অনেক জায়গায় শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্টান সহ মানুষের বাড়ী ঘর ভেঙ্গে গেছে। অবশ্য বানের পানি নামার পরপর চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকার ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন করেছে।

গত সোমবার উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে বন্যা পরিসি’তি পরবর্তী মতবিনিময় সভায় ক্ষয়ক্ষতির চিত্র আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এতে উপজেলার বিভিন্ন স্থরে প্রায় ৪১ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করেছে প্রশাসন। উপজেলা প্রশাসনের তালিকা মতে, বন্যায় ক্ষতিসাধন হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল (এলজিইডি) বিভাগ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, শিক্ষা বিভাগ, চকরিয়া পৌরসভা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, মৎস্য বিভাগ, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তর ও উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগের।

চকরিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো.মাসুদুর রহমান বলেন, টানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ঠ বন্যার তান্ডবে চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের শুধুমাত্র খুটাখালী ইউনিয়ন ছাড়া অপর ১৭টি ইউনিয়নে কমবেশি ক্ষতিসাধন হয়েছে। তাঁর মধ্যে ৩৪ হাজার ২শ৬২টি পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থস’ হয়েছে। ১শ৩৫ দশমিক ৫০ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা, ৩৯ কিলোমিটার পাকা রাস্তা, ৩৪ কিলোমিটার আধাপাকা রাস্তা ও ৮শ৫০ মিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস’ হয়েছে। এছাড়াও বন্যার তান্ডবে একটি মসজিদ ও একটি মন্দির সম্পুর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। বীজতলার ক্ষতি হয়েছে প্রায় দুই কোটি টাকার।

প্রাথমিক পরিসংখ্যানে মোট ক্ষতিসাধণের পরিমাণ নির্ণয় করা হয়েছে ৪০ কোটি ৫৫ লাখ টাকার। তবে বন্যার পানি পুরোদমে নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। এদিকে চকরিয়ার কাকারা ইউনিয়নের প্রপার কাকারার বেড়িবাঁধ কাম সড়ক নদীগর্ভে তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ছিকলঘাট-কৈয়ারবিল সড়ক, চিরিঙ্গা-বানিয়ারছড়া-বরইতলী-পেকুয়া সড়ক, ছিকলঘাট-কাকারা-মানিকপুর সড়কসহ উপজেলার অভ্যন্তরীণ অন্তত ১৫ সড়ক এবং গ্রামীণ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্থ হয়। স্থানীয় চেয়ারম্যানরা জানিয়েছেন, এবারের ভয়াবহ বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় বেশি ক্ষতিগ্রস্থ’ হয়েছে গ্রামীণ অবকাঠামো। এই অবকাঠামো যদি সহসা টেকসইভাবে মেরামত করা না হয় তাহলে যাতায়াতের ক্ষেত্রে বেশি দুর্ভোগের শিকার হবেন মানুষ।

চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ জাফর আলম বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষ যাতায়াতের ক্ষেত্রে যাতে দুর্ভোগের শিকার না হন, সেজন্য অল্প সময়ের মধ্যেই অভ্যন্তরীণ সড়ক-উপসড়কসহ গ্রামীণ অবকাঠামো টেকসইভাবে মেরামত কাজ শুরু করা হবে। এজন্য স্ব স্ব মন্ত্রণালয়ে আমি যোগাযোগ শুরু করে দিয়েছি বরাদ্দ পাওয়ার জন্য।’অপরদিকে সোমবার চকরিয়ার বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. আশরাফুল আফসার, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহজান আলী।

এ সময় সঙ্গে ছিলেন পাউবো কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা, এলজিইডি’র জেলার নির্বাহী মাকসুদুল আলম, জনস্বাস্থ্য কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী ঋত্বিক চৌধুরী, ইউএনও নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান, চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী, সহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। পরে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় সভা করেন উপজেলা পরিষদের মোহনায়। মতবিনিময় সভায় উত্থাপিত তথ্যের ভিত্তিতে বন্যাকবলিত এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ অবকাঠামো নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় যাবতীয় পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.