চন্দনাইশে দূষণের মাত্রাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে নিষিদ্ধ পলিথিন

0

মো. দেলোয়ার হোসেন, চন্দনাইশঃ প্লাস্টিক পদার্থের নিয়মিত ব্যবহার দূষণের মাত্রাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে নিষিদ্ধ পলিথিন। অপচনশীল এ পদার্থ পরিবেশে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করছে। ফলে মাটি, পানি দূষিত হয়ে যাচ্ছে। এতে খাল-বিল, নদী-নালা থেকে শুরু করে মহাসমুদ্র পর্যন্ত প্লাস্টিক পদার্থ ও প্লাস্টিক কণা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে, উন্নত বিশ্বের প্রসিদ্ধ কোম্পানির বোতলজাত পানিতেও বিষাক্ত প্লাস্টিক কণার উপস্থিতি পরিলক্ষিত হচ্ছে।

পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্যের কারণে বিশ্বের সকল স্তরের জীববৈচিত্র আজ মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন। অণুজীব থেকে শুরু করে তিমি মাছ পর্যন্ত মারাত্মক হুমকিতে। খাদ্য শৃঙ্খলের মাধ্যমে অন্যান্য প্রাণিসহ আমরাও মারাত্মক হুমকিতে রয়েছি বলে জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা।

পরিবেশবিদদের মতে, প্লাস্টিক দূষণ আমাদের নদী, সাগর, মহাসাগর ও ভূমিকে বিষাক্ত করছে। সামুদ্রিক জীবন ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং জনস্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশে সরকার ২০০২ সালে আইন করে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। কিন্তু এ আইনের কোনো বাস্তবায়ন নেই চন্দনাইশে। ফলে, সারা দেশে প্রায় এক হাজার দু’শ কারখানায় নিষিদ্ধ পলিথিন তৈরি হচ্ছে।

একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী জানা যায়, প্রতিটি পরিবার প্রতিদিন গড়ে ২/৩ টি পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করে। এগুলো দ্বারা নালা-নর্দমা, খাল, ড্রেন, ডোবা ইত্যাদি ভরাট হয়ে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং সামান্য বৃৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার প্রকোপ বাড়িয়ে দিচ্ছে। বর্তমানে দেশে প্রতিদিন ৩৫ লাখের বেশি টিস্যু ব্যাগ উৎ্পাদন ও বাজারজাত হচ্ছে। এসব ব্যাগ পলিথিনের হলেও কাপড়ের ব্যাগ হিসেবে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি পলিথিনের আগ্রাসন চলছেই। আইনানুযায়ী দেশে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ। কিন্তু সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের নির্লিপ্ততার কারণে পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি পলিথিনের আগ্রাসন বন্ধ না হয়ে নানারূপে বিস্তৃত হচ্ছে। পলিথিন উৎপাদন করলে প্রচলিত আইনানুযায়ী ১০ বছরের জেল ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান থাকলেও আইন প্রয়োগে রয়েছে প্রশাসনিক শৈথিল্য।

জন সচেতনতা সৃষ্টির কর্মসূচিও দুর্বল। পরিণামে পলিথিনের বেপরোয়াভাবে বিস্তার ঘটছে। ফলে, পরিবেশ ও জন স্বাস্থ্য পড়ছে চরম হুমকিতে। বর্তমানে জলাবদ্ধতার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে পলিথিন। পলিথিন নষ্ট করে দেয় কৃষি প্রধান বাংলাদেশের উৎপাদনযোগ্য জমির উর্বরতা শক্তি। পলিথিনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পরিবেশ ও জন জীবনে। পলিথিন পোড়ালে তার বিষাক্ত গ্যাস কার্বন-মনোক্সাইড বেড়ে গিয়ে মানুষের শরীরে হাঁপানী, ব্রঙ্ক্রাইটিস, শ্বাসকষ্টসহ জটিল রোগের সৃষ্টি হয়। মাটির গভীরে পলিথিন থাকলে, সেখানে স্থাপনা নির্মাণ করলে ধ্বসে পড়ার আশংকা থাকে।

তাছাড়া পলিথিনে মোড়ানো গরম খাবার খেলে ক্যান্সার ও চর্মরোগের সংক্রামণ হতে পারে। পলিথিনে মাছ, মাংস প্যাকিং করলে ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হয়, যা দ্রুত পচনে সহায়তা করে। সরকার জন স্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষার জন্য সারা দেশে বৃক্ষ রোপন ও বনায়নের উপর গুরুত্ব দিয়ে আসছে। তেমনিভাবে জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম ক্ষতিকর পলিথিন, অপচনশীল মোড়ক, বিভিন্ন বর্জ্যরে বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করেন।

পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার একটি সেমিনারে বলেছেন, প্লাস্টিক শুধু আসবাবপত্র বা পলিথিনের ভিতরে সীমাবদ্ধ নেই। বর্তমানে নামিদামি কসমেটিক কোম্পানির সাবান, ফেইসওয়াশ, টুথপেস্ট, বডি স্প্রে, ডিটারজেন্ট ইত্যাদিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদিতে মাইক্রোবিড নামক ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণার উপস্থিতি দেখা যায়। যা ব্যবহারের পর নদী-নালা, খাল-বিল ও অন্যান্য জলাশয়ে পতিত হচ্ছে এবং মাছের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করছে।

তিনি পলিথিন ও টিস্যু ব্যাগের বিকল্প হিসাবে পাট, কাপড়, কাগজের ব্যাগ ও ঠোঙ্গা ব্যবহার করা, এগুলো সহজলভ্য করার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন। প্রতি বছর ৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন প্লাস্টিক সমুদ্রে জমা হয়। সমুদ্রে প্লাস্টিক অতি ক্ষুদ্র টুকরায় ভেঙে যায়। এসব টুকরা মাছে খেয়ে হজম করতে পারে না। মাছের পেটে জমা হতে থাকে এবং খাদ্য শৃঙ্খলে প্রবেশ করে। এ সকল ক্ষতিকর পলিথিন চন্দনাইশের প্রতিটি বাজার ও দোকানে পণ্যের সাথে ক্রেতাদের দিলেও দেখার যেন কেউ নেই। এব্যাপারে সচেতন মহল যথাযথ কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.