আন্তর্জাতিক ডেস্ক : শুক্রবার ফের রাস্তায় হাজিদের ঢল। রক্তের দাগ পর্যন্ত নেই মিনায়। জমরাত আঙ্গিনা ঘিরে আবারও মশগুল হজভূমি মক্কা। তবু পিছু ছাড়ছে না বৃহস্পতিবারের রেশ। হজভূমিতে পদদলিত হয়ে ৭১৭ জনের মৃত্যুর ঘটনায় তাই ফের কাঠগড়ায় সৌদি প্রশাসন। মক্কার হজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত অব্যবস্থার অভিযোগ উঠেছিল গত কালই। আজ সৌদি প্রশাসনকে নিশানায় রেখে তোপ দাগলেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেই।
বাংলাদেশ সরাসরি এ নিয়ে মুখ না খুললেও দেশটিতে কর্মরত রাষ্ট্রদূত সূত্র জানিয়েছে, মিনার ঘটনায় হতাহতদের মধ্যে বাংলাদেশি রয়েছেন।
মিনার এ ঘটনায় সবাই সৌদি আরবের অব্যবস্থাপনার দিকে আঙ্গুল তুললেও সৌদি প্রশাসন অবশ্য আজ দিনের শুরুতেই এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে ফের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে হজযাত্রীদেরই। দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী খালিদ আল-ফালিহ বলেছেন, ‘‘আমরা যেভাবে নির্দেশ দিয়েছিলাম, হাজিরা তা মেনে চললে এমন ঘটনা কিছুতেই ঘটত না।’’ বস্তুত এই মন্তব্যের রেশ টেনেই রাজা সালমানকে পাল্টা চাপে ফেলতে আজ ময়দানে নেমেছে ইরান ও ইন্দোনেশিয়া।
ভয়াবহ এই বিপর্যয়ের দায় সৌদি সরকার কোনও ভাবেই এড়াতে পারে না বলে মন্তব্য করেন ইরানের ধর্মীয় নেতা খামেনেই।
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডোর দাবি— ‘‘হজে প্রত্যেক বারই লাখো লাখো হাজি আসেন। তাই অতিরিক্ত ভিড়ের যুক্তিটা এখানে কোনও ভাবেই খাটে না। বরং ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে প্রশাসনকেই দায় নিতে হবে।’’
হজ কমিটি ঢেলে সাজার কথা আশ্বাস দিয়েছেন রাজা সালমানও। হজ উপলক্ষে প্রশাসনের পুরো ব্যবস্থাপনাই ফের খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন। তবু সৌদির বিরুদ্ধে ইরান মুখ খোলায় এই দুই দেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ঘিরেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন কূটনীতিক মহলের একাংশ।
আজ শনিবার ভারতের একটি সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, পারস্পরিক এই দোষারোপ কিংবা আন্তর্জাতিক কূটনীতি নিয়ে অবশ্য হজযাত্রীরা বিশেষ মাথা ঘামাচ্ছেন না। বৃহস্পতিবারের এ স্মৃতি এখনও মন থেকে মুছতে পারেননি বেশির ভাগই। অনেকে হজের মাঝপথেই দেশে ফিরতে চাইছেন। তবু তাদেরই একাংশ আজ মুখ খুললেন সংবাদমাধ্যমের সামনে।
অল্প সময়ে প্রথা (শয়তানের উদ্দেশে ঢিল ছোড়া) শেষ করার তাড়া, ক্লান্তিকর গরম এবং উল্টো দিক থেকে হঠাৎ আসা জনস্রোতের কারণেই যে এই বিপত্তি— মানছেন সবাই।
তা হলে, সৌদি প্রশাসন কেন হজযাত্রীদের দুষছে! এর ব্যাখ্যাও মিলল সরকারি তরফেই। অভ্যন্তরীণ এক মন্ত্রীর দাবি, ‘‘প্রত্যেক বারই হজে নতুন নতুন হাজিরা আসেন। তারা অনেক সময়ই কর্তৃপক্ষের নির্দেশ বুঝতে পারেন না। বরং উল্টোটাই করে বসেন। অযথা আতঙ্ক ছড়ান।’’
এ বারও হয়তো তা-ই ঘটেছিল। কিন্তু এত মানুষের মৃত্যুর পরেও কি হুঁশ ফিরবে না প্রশাসনের। ফের প্রশ্নের মুখে মক্কা।
স্থানীয় কিছু সংবাদমাধ্যমের দাবি, গত কাল ৩৫০ জন নিরাপত্তা কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে বাবার সঙ্গে দেখা করতে আসেন রাজকুমার মহম্মহ বিন সলমন আল-সাউদ।
অভিযোগ, তাঁর কনভয়ের জন্যই জমরাত ব্রিজে ঢোকার মুখে এক দিকের রাস্তা বন্ধ রাখে প্রশাসন। সেই কারণেই হঠাৎ হুড়োহুড়ি পড়ে যায় ২২৩ এবং ২০৪ নম্বর রাস্তার মোড়ে। যার পরিণাম, শয়তানকে পাথর ছুড়তে আসার পথে পদপিষ্ট হয়ে কয়েকশো হজযাত্রীর মৃত্যু।
একই অভিযোগ ব্রিটেনের একটি হজ পর্যটন সংস্থার মালিক মহম্মদ জাফারিরও। তাঁর কথায়, ‘‘যে কোনও দুর্ঘটনাকেই ‘আল্লার ইচ্ছে’ বলে চালানোটা সৌদির চালাকি ছাড়া কিছু নয়। আল্লার ইচ্ছে নয়, মানুষের অকর্মণ্যতা আর উদাসীনতার কারণেই এত বড় বিপর্যয়।’’