চট্টগ্রামে ডাকাতির কাজে মাসুদ ব্যবহার করতো দস্তগীরের মোটর সাইকেল !

ডাকাতির পর ওসির কাছে আর্থিক অনুদান !

0

নিজস্ব প্রতিনিধি,সিটি নিউজ : চট্টগ্রাম কোতোয়ালীতে ওয়াসা মোড়ে দিনদুপুরে পাঁচ লাখ টাকা ডাকাতির ঘটনায় ব্যবহৃত মোটর সাইকেল দুটির একটির মালিক হচ্ছে আনোয়ারা উপজেলা বঙ্গবন্ধু যুব পরিষদের সভাপতি সাইফুদ্দীন মোহাম্মদ দস্তগীর। এদিকে দিনে দুপুরে পাঁচ লাখ টাকা ডাকাতিতে অংশ নেয়া যুবকদের হন্যে হয়ে খুঁজছিলো নগরীর কোতোয়ালী থানা পুলিশ। অথচ ডাকাতির ঘটনার এক সপ্তাহ পর বন্ধুকে সাথে নিয়ে থানায় গিয়ে ওসির কাছে করোনা রোগীর ওষুধ কিনতে আর্থিক অনুদান দিয়ে আসে ডাকাতিতে সরাসরি অংশ নেয়া দক্ষিণ জেলা তাঁতী লীগের সভাপতি মাসুদুর রহমান মাসুদ।পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার ডাকাত চক্রের মূল হোতা মাসুদের সাথে রয়েছে সাইফুদ্দীন মোহাম্মদ দস্তগীরের ঘনিষ্ঠতা। এতে তদন্তে দস্তগীরের সাথে ডাকাত চক্রের সম্পৃক্ততার বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

এ বিষয়ে আনোয়ারা থানা পুলিশ জানায়, মাসুদ এবং দস্তগীর দু’জনের একজনও ভালো নয়। তাদের দৃশ্যমান কোন ব্যবসা নেই । দু’জনের চলাফেরা ভালো নয়।

হাঁসি নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে ওই তিনজন কোতোয়ালী থানায় সম্প্রতি চালু হওয়া আমার ফার্মেসী নামে সেবা কার্যক্রমের জন্য এই অর্থ অনুদান দিয়েছেন। ওসির হাতে আসামীদের অনুদানের অর্থ তুলে দেওয়ার একটি ছবি বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) চট্টগ্রামের দৈনিক পূর্বকোণে “ডাকাতির পর ওসির কাছে অনুদান !” শিরোনামে সংবাদে প্রকাশিত হয়েছে ।

এ সম্পর্কে বৃহস্পতিবার কোতোয়ালী ওসি মোহাম্মদ মহসিন নিজের ফেসবুক পেইজে লেখেন, সৌদি প্রবাসী এক ব্যক্তি কিছু অনুদান আমাদের জন্য পাঠিয়েছিলেন। সেটা দেয়ার জন্য হাসি নামে একটি সংগঠনের কয়েকজন এসে এসব অনুদান আমাদের হাতে তুলে দেয়। কিন্তু ওই সময় তাদের তিনি চিনতেন না বলে দাবি করেন ওসি।

ফেসবুকের স্ক্রীন শর্ট

এদিকে গত ১৬ জুন কোতোয়ালী থানাধীন ওয়াসামোড়ে ফারুক আহমেদ নামে এক সিএনজি যাত্রীর গতিরোধ করে তার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় দুইটি মোটরসাইকেলে আসা ডাকাত চক্রটি।

বিশ্ব করোনার মহামারিতে দিনে দুপুরে ডাকাতির ঘটনায় অংশ নেয়া যুবকদের হন্যে হয়ে খুঁজছিলো কোতোয়ালী থানা পুলিশ। অথচ ১৬ জুন ডাকাতি করে ২৩ জুন কোতোয়ালি থানায় গিয়ে খোদ ওসির কাছে অনুদান দিয়ে আসেন ডাকাতিতে অংশ নেয়া তাঁতী লীগ নেতা মাসুদুর রহমান ও তার দীর্ঘদিনের বন্ধু দস্তগীর। অনুদান দেয়ার তিন দিনের মাথায় গত ২৬ জুন চট্টগ্রাম মহানগর, আনোয়ারা ও ফটিকছড়িতে অভিযান চালিয়ে ডাকাতিতে অভিযুক্ত থাকার দায়ে (৬) ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে। মাসুদকেও গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী আনোয়ারার বৈরাগ ইউনিয়নের দস্তগীরের বাড়ি থেকে বাজাজ কোম্পানির এভেনজা মোটর সাইকেল উদ্ধার করা হয়। যেটি ডাকাতির ঘটনার সময় মাসুদ ব্যবহার করেছিলো। ডাকাতিতে লুন্ঠিত টাকা থেকে মোটর সাইকেলের ৭০ হাজার টাকা ভাড়া নেয় মাসুদ।

অভিযান চালিয়ে মাসুদসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে

গত মঙ্গলবার (৩০ জুন) আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে ডাকাতিতে অংশ নেয়ার কথা স্বীকার করে মাসুদ বলেন, তার বাড়ি আনোয়ারা উপজেলার হাইলদর ইউনিয়নের সৈয়দ বাড়িতে। দস্তগীরের সাথে তার দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব। পাঁচ লাখ টাকা ডাকাতির ঘটনায় ব্যবহৃত মোটর সাইকেলটি বন্ধু দস্তগীরের। এর আগে অক্সিজেন ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের সামনে, রুবি গেইট, মুরাদপুর এলাকায় সংগঠিত তিনটি ডাকাতির ঘটনায় দস্তগীরের মোটর সাইকেলটি ব্যবহার করেছে। সবকিছু জেনে তার কাছে মোটর সাইকেলটি দিনের পর দিন রেখে দিয়েছে দস্তগীর।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাইফুদ্দিন মোহাম্মদ দস্তগীর আনোয়ারা বৈরাগ ইউনিয়নের মৃত মকবুল আহমদের ছেলে। মাসুদের সাথে তার দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব। প্রায় আড়াই লাখ টাকা দামের এভেনজা মোটর সাইকেলটির মালিক দস্তগীর হলেও ডাকাতির কাজে গাড়িটি ব্যবহার করতো মাসুদ। দস্তগীরের বাড়ি থেকেই মোটর সাইকেলটি উদ্ধার করে পুলিশ। তবে দস্তগীরকে মামলায় আসামি করা হয়নি।

ওসি মহসিন জানান দস্তগীরের বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখেছি। প্রাথমিক তদন্তে ডাকাতির ঘটনায় দস্তগীরের সম্পৃক্ত থাকার তথ্য আমরা পায়নি। তার কথায় মনে হয়েছে যে ‘নির্দোষ’। মাসুদ আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছে, দস্তগীর ঘটনায় জড়িত নয়। তারপরও বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.