‘সেনসেটিভ প্রশ্ন, সঠিক উত্তর আমার কাছে নেই’

0

সিটিনিউজবিডি : সংবাদ সম্মেলন করে সরকারের কঠোর সমালোচনা করলেও সরকারের ব্যর্থতার দায় জাতীয় পার্টি নেবে কি না— এর উত্তর নেই পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কাছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, ‘সরকারের ব্যর্থতার দায়ভার জাপা নিবে কি না, এর সঠিক উত্তর আমার কাছে নেই। সেনসেটিভ প্রশ্ন। সারাদেশে কাউন্সিল করছি। ডিসেম্বরে জাতীয় কাউন্সিল করব। তারপর দেখা যাবে।’

এরশাদের পক্ষে এ সময় পাশে বসা জাপা মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, ‘সরকারের কোনো দুষ্কর্মের দায়ভার জাতীয় পার্টি নেবে না।’
রাজধানীর বনানীর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সোমবার দুপুরে সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রেক্ষাপটে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এমন মন্তব্য করেন।

সরকারের কঠোর সমালোচনা করে এ সময় এরশাদ বলেন, ‘মেডিকেলের নতুন ভর্তি পরীক্ষার দাবিতে শাহবাগে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। সরকার বলছে, প্রশ্ন ফাঁস হয়নি। কিন্তু শিক্ষার্থীরা বলছে ফাঁস হয়েছে। যদি ফাঁস হয়ে থাকে তাহলে আবার পরীক্ষা নেওয়া হোক। নকল করে পাস করা ডাক্তার আমরা চাই না।’
লিখিত বক্তব্যে এরশাদ বলেন, ‘সরকার দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে পারেনি। এরই জ্বলন্ত প্রমাণ হচ্ছে ঈদের পরে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডসমূহ। এমনকি ৩ অক্টোবর রংপুরে দিনদুপুরে এক জাপানিকে হত্যা করা হয়েছে। যা সব গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়েছে। তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, কেবলমাত্র দেশের সাধারণ মানুষ নয়, বিদেশীরাও এ দেশে নিরাপদ নয়! ফলে আন্তর্জাতিক মহলে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। এতে প্রমাণিত হয় যে, দেশে সুশাসনের অভাব ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলছে।’

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, ‘গণতন্ত্রের অন্যতম শর্ত হচ্ছে- মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করা, এটা যে কোনো সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব। বর্তমান সরকার এই সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করতেও ব্যর্থ হয়েছে। অর্থাৎ দেশে কোনো সুশাসন নাই। সুশাসন ছাড়া গণতন্ত্র অর্থহীন।’

তাহলে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ও সরকারে থাকা জাপার মন্ত্রীরা সরকার থেকে পদত্যাগ করবে কি না— জানতে চাইলে এরশাদ বলেন, ‘এটার একটা সমাধান করব। আমিও থাকব না। আমার দলের মন্ত্রীরাও থাকবে না। সময় হলেই আপনারা জানতে পারবেন। জাস্ট একটু ওয়েট করেন। সত্যিকারের বিরোধী দল হতে হলে মন্ত্রী ছাড়তে হবে।’
জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য এম এ হান্নানের মানবতাবিরোধী অপরাধে গ্রেফতারের বিষয়ে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে সরকার মামলা করেনি। একজন মহিলা মামলা করেছে। বিচারাধীন বিষয় নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। অপেক্ষা করব সুবিচারের জন্য।’

সম্প্রতি বিদেশী গণমাধ্যমে বাংলাদেশে আইএসের অস্তিত্বের বিষয়ে জাতীয় পার্টি কি মনে করে— এমন প্রশ্নের উত্তরে এরশাদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, দেশে আইএস নেই। আমরাও মনে করি আইএস নেই। আমরা বাঙালী মুসলমান। এ জাতি জঙ্গিবাদে বিশ্বাস করে না।’

মধ্যবর্তী নির্বাচনের বিষয়ে এরশাদ বলেন, ‘সরকার কখন মধ্যবর্তী নির্বাচন দেয়, যখন সরকার বুঝবে তারা নির্বাচন দিলে জয়ী হয়ে আসতে পারবে তখন তারা নির্বাচন দেবে। আমরা সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।’

এরশাদ আরও বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা এবং তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশের ব্যাপক সফলতা অর্জন করায় প্রধানমন্ত্রী এ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এতে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের মুখ আরও উজ্জ্বল হয়েছে। বাংলাদেশী হিসেবে তার এ পুরস্কার পাওয়ায় আমরা আন্তরিকভাবে খুশি। কিন্তু আজ বাংলাদেশে সন্ত্রাস, রাহাজানি, দলীয়করণ, টেন্ডারবাজি, সুশাসনের অভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই সমস্ত অর্জন ম্লান হয়ে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, প্রতিনিয়ত দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। ঈদুল আজহার আগে গরুর হাটে দলীয় লোকজনের চাঁদাবাজির কারণে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে দুই নিরীহ মানুষের নির্মম হত্যাকাণ্ড, ঈদের কয়েক দিন পরেই গুলশানের কূটনৈতিক পাড়ায় এক ইতালির নাগরিককে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। সরকার আজ পর্যন্ত প্রকৃত হত্যাকারীকে খুঁজে বের করতে পারেনি। এরপর গত শুক্রবার গাইবান্ধায় এক সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মাতাল অবস্থায় একটি শিশুকে গুলি করে আহত করেছে। এ সরকারের আমলে শিশুরা যে নিরাপদ নয় তা আমরা ঈদের আগেও দেখেছি- রাকিব, রবিউল, রাজন হত্যার মধ্য দিয়ে। এমনকি মায়ের পেটে শিশু সুরাইয়া সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের হাত থেকেও রক্ষা পায়নি।’

‘দেশ এক কঠিন সময় অতিক্রম করছে’ দাবি করে এরশাদ বলেন, ‘আমরা দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, সমস্ত অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার, দলীয় ক্যাডারদের নিয়ন্ত্রণ করা এবং প্রশাসনকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করা হোক। প্রশাসনকে দলীয়করণ ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে বর্তমানে এই দুঃসহ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। আমরা জানি, আইনের চোখে সবাই সমান। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, সরকারের ছত্রছায়ায় প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে আইন প্রয়োগ করতে পারছে না। সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস শুরু হয়েছে। মানুষ স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চায়, স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে চায়, মতপ্রকাশ করতে চায়। কিন্তু সরকার মানুষের এই মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকারগুলো রক্ষা করতে নিদারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছে।’

এরশাদ বলেন, ‘সাধারণ মানুষ স্বস্তি চায়, শান্তি চায়, বাঁচতে চায় এবং স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে চায়। তাদের এই জন্মগত অধিকারগুলো নিশ্চিত করুন। অন্যথায় গণতন্ত্র কেবল সংবিধানের পাতায়ই সীমাবদ্ধ থাকবে।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, প্রেসিডিয়াম সদস্য মেরিনা রহমান, এস এম ফয়সল চিশতী, যুগ্ম-মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, নুরুল ইসলাম নুরু, বাহাউদ্দিন আহমেদ বাবুল প্রমুখ।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.