আওয়ামী লীগের আমলে বিএনপি-রাজাকারের রাজত্ব

0

জুবায়ের সিদ্দিকী, সিটি নিউজঃ আওয়ামী লীগের টানা প্রায় ১১ বছরের ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা সদরে ‍সুযোগ সন্ধানী ও বিতর্কিত অনেকেই আওয়ামী লীগে এসেছেন। তাদের হাইব্রিড বা অনুপ্রবেশকারী বলা হয়। ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে সরকার গঠনের পর মাঠ পর্যায়ে অন্য দল থেকেও অনেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন।

এরা কোন না কোন উদ্দেশ্য নিয়ে আওয়ামী লীগের পদ দখল করেছেন। অপরাধীরা আত্মরক্ষার্থে, ব্যবসায়ীরা প্রভাব বিস্তার করে ব্যবসায়ী সুবিধার জন্য উচ্চমূল্যে আওয়ামী লীগের পাদ ক্রয় করেছেন। আবার অনেকেই আওয়ামী লীগের মধ্যে নিজেরাই শক্তিশারী গ্রুপ ভারী করার জন্য অন্যদল থেকে লোক এনে আওয়ামী লীগে যোগদান করিয়েছেন। আবার অনেকে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে নিজেরাই গ্রুপিং-কোন্দল সৃষ্টি করে শক্তিশারী বলয় তৈরী করে বিবাদ ও বিভাজন সৃষ্টি করে নিজেদের আধিপত্যকে বহাল রেখেছেন। অনেকে পদ বাণিজ্য করে আর্থিক লাভবান হয়েছেন। এর প্রভাব তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।

এখন অনেক সুবিধাবাদী মানুষ রাজনৈতিক দলগুলোকে স্বার্থ হাসিলের জন্য ফ্ল্যাটফরম হিসেবে ব্যবহার করছেন। যে সব দল ক্ষমতায় থাকে সেসব দলে অনেক মানুষ আছে। তারা মূলত আদর্শভিত্তিক কোন কর্মী বা নেতা না। তারা নিজেদের স্বার্থে দলে আসে। দলের দুর্দিনে আবার এরা সটকে পড়ে। নানাভাবে অনুসন্ধান করে দেখা মেলে, আওয়ামী লীগ আমলে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ অনেক পদে বিএনপি-রাজাকারদের বংশধরেরা দায়িত্বশীল পদে বসে আছেন।

আমার জানামতে, ২০০০ সালের ১৪ আগষ্ট পাকিস্তানের জাতীয় দিবসে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় একাধিক স্থানে পাকিস্তানের পতাকা উত্তোলন করা হয়। সেই উত্তোলনকারীদের বংশধররা বর্তমানে আওয়ামী লীগের আমলেও গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে আছেন। এই চট্টগ্রাম মহানগরীতে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে অনেক নেতা রাজনীতিকে বাণিজ্যকরণ করে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন। দলকে ভারী করে নিজে গডফাদার হয়ে দলীয় সাইনবোর্ডের আড়ালে এরা নানা ব্যবসা বাগিয়ে নিয়ে নিজেদের সম্পদ বৃদ্ধি করছেন।

একজন ব্যবসায়ী, আমলা রাজনীতির খাতায় নাম রেখে, আন্দোলন সংগ্রামে যাদের কোনদিন রাজপথে দেখিনী তারাই এখন সরকারী বড় বড় গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল, রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ, দলের কান্ডারী হয়ে আত্মপ্রকাশসহ. গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হওয়া দল ও জাতির জন্য শুভ কিছু বয়ে আনতে পারেনা।

কিন্তু নেতাকর্মীকে সংগঠিত করে একটি গ্রুপ তৈরী করে জেলা বা উপজেলায় নেতাগিরি করলেই তিনি হয়ে যান বড় নেতা। এখনই সময়, আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশে নেতাদের সারাদেশে অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে সংগঠন থেকে বের করতে হবে। এদের যারা পৃষ্ঠপোষকতা করে তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। তাহলে ভবিষ্যতে হাইব্রিড বা অনুপ্রবেশকারী সৃষ্টি হবেনা।

চট্টগ্রামে অনেক সরকারী গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে এমনকি রাজস্ব আদায়ের মতো স্পর্শকাতর কোন কোন সংস্থায় গিয়ে দেখা গেল, জামাত বিএনপির অনুসারীরাই বগলদাবা দিয়ে নির্বিঘ্নে দুর্নীতির ঢালা সাজিয়ে শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে চাকরিই শুধু নয় দাপটের সাথে রাজত্ব করছেন।

তেল সেক্টর ও ভূমি অফিসে অনেক সিবিএ নেতা ও কর্মকর্তা এখনও জামাত-বিএনপির সক্রিয় রাজনীতির সাথে জড়িত আবার এরাই সরকারী গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে কোটি কোটি টাকা আয় করছে অবৈধভাবে। পুলিশ বিভাগেও বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ ছাত্রদলের ক্যাডার ছিলেন, লিয়াকত শিবিরের ক্যাডার ছিলেন ও এসপি মাসুদ শিবিরের সাথী ছিলেন। এরা কিভাবে এতদিন কর্মস্থলে বহাল ছিল?

অবাক হতে হয়, স্বাধিনতার এতবছর পরও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই কিভাবে জামাত-বিএনপির রাজত্ব বহাল রয়েছে। রাজনীতি থেকে প্রশাসন সর্বত্র এদের দাপট প্রকৃত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ব্যাথিত করছে। বন্দর সংশ্লিষ্ট একটি শ্রমিক সংগঠনের সকলেই প্রায় বিএনপি-জামাত কিন্তু এরাই এখন সর্বেসর্বা। দুঃখ হয়, বেদনাহত হয় হৃদয়, যখন প্রশাসনে লক্ষ্য করি আওয়ামী লীগ আমলে বিএনপি রাজাকারদের রাজত্ব।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.