কালো টাকা সাদা করেছেন মাত্র ১৬ জন

0

অর্থবাণিজ্য ডেস্ক : মূলধারার অর্থনীতিতে কালো টাকার বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে প্রতি বছরই সাদা করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। আয়কর অধ্যাদেশে নতুন ধারা সংযোজনের মাধ্যমে দীর্ঘস্থায়ী সুযোগও দেওয়া হয়েছে। তারপরও কালো টাকা বিনিয়োগে আসছে না।

২০১৪-১৫ করবর্ষে যেখানে কালো টাকা সাদা করেছেন ২২২ জন, সেখানে ২০১৫-১৬ করবর্ষে এই সুযোগ নিয়েছেন মাত্র ১৬ জন। অর্থাৎ গত করবর্ষের তুলনায় মাত্র ৭ শতাংশ করদাতা কালো টাকা সাদার সুযোগ নিয়েছেন। অপরদিকে কালো টাকা সাদা করার পরিমাণ ও কর আদায়ের চিত্রও হতাশাব্যঞ্জক।

অর্থনীতিবিদদের মতে, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ছাড়া অন্য সরকারি সংস্থার নজরদারিতে না আসতে চাওয়ার কারণে কালো টাকা সাদা করা ব্যক্তির সংখ্যা কমে গেছে। কারণ নির্ধারিত করের অতিরিক্ত জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করলে এনবিআর প্রশ্ন করে না। কিন্তু সরকারি অন্যান্য সংস্থা অর্থের উৎস সম্পর্কে জানতে চাইতে পারে। এই ঝামেলা এড়াতে অনেকে চাইলেও কালো টাকা সাদা করছেন না। এ ছাড়া রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ না নিয়ে এর পরিবর্তে বিদেশে অর্থপাচারকে নিরাপদ মনে করছেন অনেকে।

তাদের মতে, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ কখনোই সুফল দেয়নি। বরং বার বার সৎ করদাতাদের নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। উৎস বন্ধ করতে না পারলে কালো টাকা অর্জনের সুযোগ থেকেই যাবে। এর সঙ্গে বাড়বে অর্থপাচারের পরিমাণ।
আয়কর অধ্যাদেশ-১৯৮৪ এর ১৯(ই) ধারা অনুযায়ী, নির্ধারিত করের অতিরিক্ত ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করা যাবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য মতে, ২০১৩-১৪ করবর্ষে ১৫৭ জন করদাতা ১৭৬ কোটি ৯০ লাখ কালো টাকা সাদা করেছেন। এর বিপরীতে কর আদায় হয়েছে ২০ কোটি ১২ লাখ টাকা।

২০১৪-১৫ করবর্ষে ২২২ জন করদাতা কালো টাকা সাদা করেছেন। ৬৭৬ কোটি টাকার বিপরীতে এনবিআর কর পেয়েছে ২৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। অপরদিকে ২০১৫-১৬ করবর্ষে ১৬ জন করদাতা ২ কোটি ৯২ লাখ কালো টাকা সাদা করেছেন। এর বিপরীতে এনবিআর কর পেয়েছে ৭৪ লাখ টাকা।
কালো টাকা সাদা করার ব্যক্তির সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ক্ষমতাবানরাই কালো টাকার মালিক। প্রভাব খাটিয়ে তারা নিজেদের অর্থ লুকিয়ে রাখছেন। এই শ্রেণীর লোকজন সুযোগ না নেওয়ায় কালো টাকা সাদা করার করদাতার সংখ্যা কমতে পারে। এ ছাড়া দুদক ও কর কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয় না থাকায় কালো টাকা সাদা করতে চাইছেন না অনেকে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ কোনো সময় সুফল দেয়নি। উৎস বন্ধ করতে না পারলে কালো টাকা অর্জনের সুযোগ থেকেই যাবে। এ সুযোগ অব্যাহত রাখলে বরং সৎ করদাতারা নিরুৎসাহিত হবেন।
কালো টাকা সাদা করার ব্যক্তির সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে কালো টাকা সাদা করার ব্যক্তির সংখ্যা কমে যেতে পারে। অর্থপাচারের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণেও সংখ্যা কমতে পারে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.