চন্দনাইশে সবজির ফলন ভাল হলেও বাজার মন্দা

0

মো. দেলোয়ার হোসেন, চন্দনাইশঃ শীতকালীন সবজির বাম্পার ফলন হলেও মূল্য পতনের কারণে চন্দনাইশ দোহাজারী শঙ্খ তীরবর্তী কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। শাক-সবজির বাজারে বিরাজ করছে চরম মন্দাবস্থা। ফলে লোকসানের মুখে পড়েছে উপজেলার শঙ্খ তীরবর্তী শত শত প্রান্তিক কৃষক।
চাষিরা জানান, শীত মৌসুমে সবজি বিক্রি করে তারা কিছুটা লাভের মুখ দেখলেও এখন উৎপাদন খরচই তুলতে পারছেন না। পাইকারি বাজারে ফুলকপি, বাঁধাকপি, আলু, বেগুন, শিম, টমেটো, শশা, গাজরসহ অধিকাংশ সবজিই নামমাত্র মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে ক্ষতি পুষাতে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের প্রণোদনা দিতে সরকারকে বিষয়টি জানানো হবে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা।

চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকারেরা উপজেলার শঙ্খ নদীর তীরে উৎপাদিত সবজির অধিকাংশই ক্ষেত বা স্থানীয় হাট-বাজার থেকে কিনে নিয়ে যান। এ জন্য উৎপাদন মৌসুমের শুরুতে কৃষকেরা সবজির ন্যায্যমূল্যও পেয়েছিলেন। কিন্তু কয়েকদফা অকাল বৃষ্টির কারণে সবজি ক্ষেতের ক্ষতিসাধন হয়েছিল। কৃষক সে ক্ষতি পুষিয়ে উঠার আগে হঠাৎ করে সবজির দর পতন হওয়ায় কৃষকেরা তাদের বিনিয়োগকৃত টাকা উঠাতে পারবেনা বলে জানালেন।

করোনাভাইরাস চলাকালে যানবাহন কম চলার কারণে সবজির দাম তখন থেকে কম ছিল। পচে যাওয়ার আশঙ্কায় কৃষকেরা এখন অধিকাংশ সবজিই বেশ কম দামে বিক্রি করছেন। গতকাল ৩০ জানুয়ারি দোহাজারী রেলওয়ে বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকেরা ফুলকপি, বাঁধাকপি, আলু, বেগুন, শিমসহ বিভিন্ন ধরনের বিপুল পরিমাণ সবজি বাজারে নিয়ে এসেছেন।

স্বল্প সংখ্যক পাইকার বাজারে আনা সবজির দাম বলছেন খুবই কম।স্থানীয় কৃষক বাবুল জানালেন, বেগুনের কেজি ৮ থেকে ১০ টাকা, শিম ১৫, ফুলকপি-বাধাঁকপি ৬-৭ টাকা, ধনেপাতা ১০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৬০ টাকা, গাজর ২৫ টাকা, শশা ২০ টাকা, শিম বিচি ৬৫ টাকা, বরবটি ২০ টাকা, টমেটো ১৫ টাকা, আলু ২০ টাকা, মূলা ৬ টাকা, মিষ্টি লাউ ১টি ২০টাকা, লাউ ৮-১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষক জমির জানালেন , বিঘা জমিতে ফুলকপি আবাদ করেছিলেন।

এ জন্য ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। উৎপাদন ভালো হয়েছে কিন্তু বর্তমানে ফুলকপির দাম পাইকারি বাজারে ৭ থেকে ৮ টাকা কেজি হওয়ায় তিনি লোকসানে পরবেন বলে জানান। কৃষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘২৫ শতাংশ জমিতে বাঁধাকপি চাষ করেছেন। বর্তমানে বাধাকপির দাম ৬ টাকা কেজি হওয়ায় শ্রমিক দিয়ে বাধাকপি তুলে বাজারে এনে বিক্রি করলে শ্রমিকের টাকাও উঠছে না। লোকসানে সবজি বিক্রি করে চোখে পথ দেখছেন না। এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামী দিনে সবজির দাম আরও কমে যেতে পারে বলে তাদের ধারনা।

আর তখন বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে। সবজি উৎপাদনে চন্দনাইশের খ্যাতি দেশব্যাপী। কিন্তু হঠাৎ করে সারা দেশে সবজি উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় সবজির বাজারে ধস নেমেছে। একদিকে নির্দিষ্ট সময় পরে সবজি ক্ষেতে রাখা যায় না, অপরদিকে পচনশীল পণ্য বলে কৃষক কম দামে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে লোকসানের মুখে হতাশগ্রস্থ চন্দনাইশের শঙ্খ নদীর তীরবর্তী প্রান্তিক কৃষকেরা।

সবজির দাম অনেকটা কমে গেছে বিষয়টি স্বীকার করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা স্মৃতি রানী সরকার বলেছেন, ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের প্রণোদনা দেয়ার পাশাপাশি বিনামূল্যে বীজ ও সার দিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমান সরকার কৃষিবান্ধব, তাই এই মহাদূর্যোগে অবশ্যই কৃষকদের পাশে দাঁড়াবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সিটি নিউজ/ডিটি

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.