কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : বাংলাদেশের বিলুপ্ত ১২টি ছিটমহলে শুরু হয়েছে প্রাক ভূমি জরিপ। গত ১৫ অক্টোবর এই জরিপ শুরু হয়। সরেজমিন দখলি স্বত্ত্বের উপর ভিত্তি করে প্রাক জরিপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এরপর সেটেলমেন্ট জরিপের মাধ্যমে চূড়ান্ত হবে ভূমির মালিকানা। তবে ভারতের মূল সিএস নক্শা ও রেকর্ড হাতে না পাওয়ায় জরিপকারী টিম পড়েছে নানা বিড়ম্বনায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১ আগস্ট ছিটমহল বিনিময়ের পর জমি নিয়ে বিরোধের আশঙ্কা দানা বাঁধে বিলুপ্ত ছিটমহলে। ঘটে কয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনা। বসানো হয় পুলিশ ফাঁড়ি। এই প্রেক্ষাপটে ছিটমহলবাসীর ভূমির মালিকানা নিয়ে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা বাড়তে থাকে। তাই ভূমির মালিকানা নিশ্চিত করার জন্য শুরু হয়েছে ভূমির প্রাক জরিপ। আর এতে প্রাধান্য পাচ্ছে দখলি স্বত্ত্ব।
বুধবার সরেজমিন দাসিয়ারছড়ায় গিয়ে দেখা গেছে, কামালপুর বটতলায় চেয়ার টেবিল নিয়ে বসে আছেন জরিপ টিমের দু’জন সদস্য। তাদের ঘিরে আছে গ্রামের মানুষ। খতিয়ান খুলে পর্চা সরবারহ করা হচ্ছে এখান থেকে। টিমের অপর অংশটি মাপজোকের কাজ করছে সরেজমিন। সংশিষ্ট জমির মালিক ছাড়াও অনেকেই সেই মাপজোক দেখছেন। আছেন পুলিশের সদস্যও।
বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দারা জানান, তাদের বেশিরভাগ জমির কোনো দলিল নেই। দীর্ঘদিন রেজিস্ট্রি বন্ধ থাকার কারণে সাদা কাগজের মাধ্যমে জমি কেনাবেচা করতে হয়েছে। তাই জরিপে এসব বিষয় বিবেচনায় আনা দরকার।
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বিলুপ্ত দাসিয়ারছড়া ছিটমহলটি ১ হাজার ৬৪৩ একরের। বৃহৎ এই বিলুপ্ত ছিটমহলটির লোক সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার।
জানান যায়, এই ছিটমহলের বেশিরভাগ জমির মালিকদের কোনো দলিল বা খতিয়ান নেই। কয়েকদফা ডাকাতির ঘটনায় দলিল খোয়া যায় কারো কারো। অনেকে ভারতে গিয়ে জমি বেচাকেনা করলেও দলিল তুলতে পারেননি। আবার গত এক দশক ধরে ভারতে ছিটমহলের জমি রেজিস্ট্রি ছিল বন্ধ। তাই দলিল, পর্চাসহ প্রয়োজনীয় দালিলিক প্রমাণ নেই অনেকের। এখন দখল স্বত্ত্বের উপর জরিপ হলে হয়তো বিরোধ কমবে।
দাসিয়ারছড়ায় মোট ৩ হাজার ২০টি প্লটের মধ্যে প্রথম সাত দিনে সাড়ে চারশ’র মতো প্লটের জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে নক্শায় কালির কারণে ২০-২৫টি প্লট সনাক্ত করা যায়নি। এছাড়া পুরোনো নকশা সংকুচিত হয়ে গেছে। ফলে এরিয়া কমে গেছে। জরিপের জন্য এক মাস সময় যথেষ্ট নয়। আরো সময় বাড়ানো দরকার কটি টিমের আহ্বায়ক কানুনগো আব্দুর রশিদ।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন জানান, মূল ম্যাপটি ভারত থেকে না পাওয়ায় স্থানীয়ভাবে ম্যাপ সংগ্রহ করে দখলি স্বত্ত্ব দেখে প্রাক জরিপ সম্পন্ন হচ্ছে। খসরা ম্যাপও করা হবে। তবে কেউ অভিযোগ করলে পরবর্তীতে সেটেলমেন্ট জরিপে তা নিষ্পত্তি করা হবে। জরিপের যেকোনো ধরনের অনিয়ম বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।