সীতাকুণ্ডে সাগর হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানব বন্ধন

0

কামরুল ইসলাম দুলু, সীতাকুণ্ড : খুলনার রাকিব, সিলেটের রাজন, হত্যার বিচার যে ভাবে বিশেষ ট্রাইবুনালে হয়েছে । তদ্রুপ সাগর হত্যাকারীদের বিচার ও বিশেষ ট্রইবুনালে সম্পূর্ন করার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছে মাদামবিবির হাট শাহজাহান উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা ।

শনিবার সকাল ১১ টায় উপজেলায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মাদমবিবির হাটে ১ ঘন্টা এ মানববন্ধন পালন করে।সিটিনিউজ.০৪

সীতাকুণ্ড উপজেলার মাদাম বিবির হাট শাহজাহান উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর ছাত্র আব্দুল মোতালেব ওরফে সাগর। ভাটিয়ারী এলাকার পূর্ব হাসনাবাদ গ্রামের মোহাম্মদ আকবরের পুত্র । গত ২৫শে নভেম্বর ২০১৩ই তারিখে বার্ষিক পরিক্ষার শেষ পরীক্ষা দিয়ে বাড়ী ফিরে। বিকালে সংঙ্গী সাথীদের সাথে সে রেল ষ্টেশন এলাকায় খেলতে যায়। সন্ধ্যা পর্যন্ত বাসায় ফিরে না আসায় তার বাবা সীতাকুন্ড থানায় ১টি নিখোঁজ ডায়রী করে। ডায়রী নং- ১০৭২ তারিখ ২৫/১১/২০১৩ ইং। রাতে জনৈক অজ্ঞাত ব্যাক্তি মামলার ১নং আসামী হোসাইন মোবাইলে সাগরের মায়ের কাছে বিশ লক্ষ টাকা মুক্তিপন দাবী করে। অন্যথায় সাগরকে মেরে ফেলা হবে বলে জানিয়ে দেয়। এরপর হতে আসামীর মোবাইল বন্ধ করিয়া রাখে। ৩রা ডিসেম্বর পুনরায় মোবইল করে ১ লক্ষ টাকা নিয়ে চট্টগ্রাম শহরে মুরাদপুরে আসার জন্য সাগরের বাবাকে বলে। সাগরের মা-বাবা বিষয়টি পুলিশকে জানাই। পুলিশের পরামর্শ মোতাবেক পুলিশ সহ টাকা নিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে গেলে পুলিশের উপস্থিতিতে অপহরণকরীরা সাগরের মা-বাবা থেকে ১ লক্ষ টাকা কেড়ে নিয়ে পালিয়ে যান। পরবর্তীতে সাগরের আত্মীয়রা জনৈকা রাশেদা নিজের পরিচয় গোপন করে মূল অপহরণকারী হোসাইনের সাথে মোবাইলে প্রেমের অভিনয় করে সম্পর্ক গড়ে তুলে। ১মাস সম্পর্ক থাকাকলীন সময়ে একপর্যায়ে সন্দীপের রাশেদার সহিত সাক্ষাৎ করার জন্য ভাটিয়ারী ছোঁয়াখালী ঘাটে আসে। রাশেদা বোট হতে নামিয়া হোসাইনের সহিত সাক্ষাত করা কালীন সময়ে আগে থেকেই অপেক্ষারত সাগরের আত্মীয় স্বজেনরা মূল অপহরণকারী হোসাইন, পিতা- মৃত মজিদ আহম্মদ, রুমহা বাজার, থানা- উখিয়া, জেলা- কক্সবাজার ও তার সহযোগী হারুন, পিতা- মৃত আবুল কালাম, দুর্গাপুর, থানা- মনোহরগঞ্জ, জেলা- কুমিল্লা হাতে নাতে ধরে পুলিশে সোপর্দ করে।সিটিনিউজ০৫

তারা তাদের একাজে সহযোগী হিসাবে ভাটিয়ারী এলাকার নাছিরের ছেলে রাজু, দুলালের ছেলে নাজমুল জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। পরে পুলিশ রাজুসহ মোট ৫ জনকে গ্রেফতার করে নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭/৮/৩০ ধারায় মামলা নং- ৬(২)১৪ দায়ে করা মামলা জেল হাজতে প্রেরণ করে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই আনিছ আল মাহমুদ আসামীদের রিমান্ডে নিয়েও কোন তথ্য বের করতে সক্ষম হয়নি। এই ব্যাপারে তার পিতা মোঃ আকবর চট্টগ্রাম সিআইডি বিশেষ শাখায় আবেদন করিলে মামলাটি সীতাকুন্ড থানা থেকে সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়। চট্টগ্রামের সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক মিতশ্রী বড়–য়া অপহরনকৃত তিন আসামীকে জেল থেকে তিন দিনের জন্য রিমান্ডে আনেন। মূল আসামী মোঃ নবী ও জেল হাজতে থাকা দুই আসামীকে বাদ দিয়ে আদালতে চার্চ শীর্ট দাখিল করে। সাগর পিতা আলী আকবর উক্ত চার্চ শীর্ট এর ব্যাপারে আদালতে নারাজী দিলে মামলাটি পুনঃরায় সিআইডিতে ফিরে আসে। এতে মামলাটি তদন্ত ভার দেওয়া পুলিশ পরিদর্শক নাজমুল কাদেরকে। তিনি মামলাটি কোন কুল কিনা খুজে পাচ্ছিল না।

এই দিকে চন্দনাইশ থানার খুনির আসামী ঢাকায় আকিব পালিয়ে গিয়ে জীবিকা নির্বাহ করলেও হত্যাকান্ডের দৃশ্য তিনি ভুলতে পারছিল না। গত ২৬ অক্টোবর ২০১৫ইং তারিখে নিজ বাসায় এসে হত্যার ঘটনাটি বকাবকি করিলে তার মা-বাবা আকিব কে চন্দনাইশ থানায় সোপর্দ করেন। পুলিশ তাকে আদালতে প্রেরণ করেন। চট্টগ্রামের বিচারক হাকিম ফারজানা ইয়াছমীনের আদালতে স্বীকার করে জবানবন্দী দেয় ২৯ শে অক্টোবর ২০১৫ইং।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মঞ্জুর আলম বলেন, জবানবন্দীতে আকিব উল্লেখ করেন ১নং আসামী নবী তাকে জানান, ভাটিয়ারী থেকে শীপ কোম্পানীর একটি ছেলেকে অপহরন করলে ২০ লক্ষ টাকার মুক্তিপন আদায় করা যাবে। সে মোতাবেক সাগরকে নবী সহ এজাহাভূক্ত ৫জন আসামী অপহরণ করে নিয়ে যায় চন্দনাইশে আকিবের কাছে। আকিব সাগরকে জিজ্ঞাসা করলে সাগর তার প্রশ্নের জবাবে বলেন যে, তার বাবা একজন দৈনিক খেটে খাওয়া রাজমিস্ত্রী। কোন রকম ভাবে তাদের ঘর সংসার চলায় তার বাবা। এই কথা শুনে আকিব নবীকে বলেন যে, সাগরকে তার বাবার কাছে ফেরত দিয়ে আসতে। উত্তরে নবী বলে যে, সাগরকে ফিরিয়ে দিলে আমাদেরকে পরবর্তী অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। পরে রাতে নবী সহ আকিব সাগরকে নির্মম ভাবে হত্যা করে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.