ধ্বংসের পথে সীতাকুণ্ডের বনাঞ্চল, গত পাঁচ বছরে ১৫৭ মামলা

0

কামরুল ইসলাম দুলু (সীতাকুণ্ড):: কাঠ পাচারকারীদের বেপরোয়া কর্মকান্ডে সীতাকুণ্ডের উপকুলীয় বনাঞ্চল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এতে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণহানিসহ ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা বাড়ছে। কতিপয় কাঠ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করেও এই ঝাউবাগান রক্ষা করতে পারছে না উপকুলীয় বন বিভাগ।তবে অভিযোগ উঠেছে, উপকুলীয় বন বিভাগের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে উপকুলীয় বনাঞ্চল ধ্বংস হচ্ছে।

সরেজমিনে পরিদর্শনে সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া, মুরাদপুর, বাড়বকুণ্ড ও সৈয়দপুর ইউয়িনের উপকুলে সরকারি অর্থে সৃজিত ঝাউগাছ কাটার দৃশ্য দেখা গেছে। প্রকাশ্যে এসব গাছ কেটে নিচ্ছে গাছ চোরেরা। সৈয়দপুর ও বারৈয়াঢালা এলাকার বাজারের চায়ের দোকানগুলোতে উপকুলীয় বনাঞ্চলের কাঠ ব্যবহার করতে দেখা গেছে।

বনবিভাগ সুত্রে জানা যায়, সীতাকুণ্ড উপকুলীয় এলাকার লোকজনকে সামুদ্রিক ঝড়-ঝঞ্ঝা ও জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষার জন্য বারআউলিয়া থেকে সৈয়দপুর পযর্ন্ত ১৯৯৩ সালে ব্যাপক বনায়ন করা হয়। ইতিমধ্যে গাছগুলো বড়সড় হয়ে উঠে। তবে বর্তমানে দুই-তৃতীয়াংশ গাছ কেটে সাবাড় করে ফেলা হয়েছে। এলাকাবাসী মনে করেন, এসব গাছ কেটে নেওয়ায় বেড়িবাঁধ যেমন বিপন্ন হবে তেমনি এলাকাবাসীও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে মারাত্বক হুমকি মধ্যে পড়বে।

স্থানীয় অধিবাসীরা জানান, বন বিভাগের কর্মচারীদের কাউকে কাউকে মাঝে মধ্যে এখানে দেখা গেলেও অধিকাংশ সময়ই তাদের দেখা যায়না। ফলে চোরেরা নির্বিঘ্নে গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া অধিকাংশ গাছের গোড়া থেকে মাটি সরে যাওয়ায় এসব গাছ কাটতে চোরদের সুবিধাও বেশি হয়।

দেখা গেছে, বাঁশবাড়িয়া বোয়ালিয়াকুল এলাকায় বন বিভাগ কর্তৃক সৃজিত ঝাউ বাগান বড় হওয়ায় পর্যটকদের জন্যও আর্কষনীয় হয়ে উঠেছিল। এ বিশাল ঝাউ বাগান দেখতে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা প্রায় সময় ভীড় জমাতো। কিন্তু গত দুই বছরে ঝাউ বাগান থেকে গাছ কেটে সাবাড় করে ফেলা হয়েছে। সৈয়দপুর, গুলিয়াখালী, বাঁকখালি, আলেকদিয়া উপকুলীয় এলাকায় বৃক্ষ শূণ্য হয়ে পড়েছে। এলাকাবাসী জানান, নৌকা করে জলদস্যূরা রাতের আঁধারে গাছ কেটে পাশ্ববর্তী সন্দ্বীপসহ অন্যান্যস্থানে নিয়ে যায়।

বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত আলী জাহাঙ্গীর বলেন, উপকুলীয় বন বিভাগ ১৯৯৩-৯৪ ও ২০০২-২০০৩ অর্থবছরে প্রায় ২৫কিলো উপকুলীয় এলাকায় ঝাউবাগান সৃজন করে। কিন্তু সৃজিত ঝাউগাছ বড় হওয়ার পর কিছু অসাধু ব্যাক্তি গাছগুলো কেটে বিভিন্নস্থানে পাচার করতে থাকে। তিনি বলেন, রাতের আঁধারে বঙ্গোপসাগরে জোয়ারের সময় ইঞ্জিন নৌকা নিয়ে এসে চোরেরা গাছ কাটে। ফলে তাদের ধরাও যায় না।

সৈয়দপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম নিজামী জানান, উপকুলীয় এলাকার বন উজারে বন কর্মকর্তারা জড়িত। উপকুলীয় বন বিভাগ সুত্রে জানা যায়, উপকুলীয় বনাঞ্চল রক্ষার্থে গত পাঁচ বছরে মামলা হয়েছে ১৫৭টি। তার মধ্যে পি.ও .আর মামলা হয়েছে ৮২টি, ইউ.ডি.ও.আর মামলা হয়েছে ৬৮টি এবং সি.ও.আর মামলা হয়েছে ২টি। এছাড়া থানায় এজাহার করা হয়েছে ১০টি। মামলাগুলোতে আসামী করা হয়েছে ৩২০ জনকে। তার মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে ২৬ জনকে। এ ব্যাপারে সীতাকুণ্ড উপকুলীয় রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুস সাত্তার বলেন, জনবলের অভাবে বনচোরদের আটক করা যাচ্ছেনা। গাছ কাটা বিষয়ে তিনি জানান, উত্তাল ঢেউয়ে অনেক গাছ পড়ে যায়। স্থানীয়রা এগুলো কেটে নিয়ে যায়।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.