বড় ধরনের হুমকির মুখে আইএস

0

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :: প্রথমবারের মতো বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়েছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)। যোদ্ধাদের দলত্যাগ, অর্থ সংকট এবং বিমান হামলার কারণে তেল ব্যবসার পথ বন্ধ হতে থাকায় জঙ্গি সংগঠনটি আগের চেয়ে অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে।

ওয়াশিংটন পোস্ট ও এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত বাহিনী ইরাক এবং সিরিয়ায় আইএস নিয়ন্ত্রিত বেশকিছু স্থানের পুনর্নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে। এর ফলে এদের অর্থ উপার্জনের বেশকিছু উৎস বন্ধ হয়ে গেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যেসব গ্রাম ও শহর থেকে আইএস কর আদায় করত, সেগুলো তাদের আরব ও কুর্দি প্রতিপক্ষ দখল করে নিয়েছে। এমনকি আইএসের নিয়ন্ত্রণে থাকা অনেক তেলক্ষেত্রের দখলও হারিয়েছে আইএস। ফলে নতুন করে বিভিন্ন স্থানের দখল নেওয়ার জন্য আবারও সংগ্রাম করতে হচ্ছে সংগঠনটিকে।

এ বিষয়ে ব্রিংহ্যাম ইয়ং ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কুইন মেশাম বলেন, ‘দুই বছর ধরে বিভিন্ন যুদ্ধের পর দখল হওয়া সম্পদ, চাঁদাবাজি এবং জোর করে ছিনিয়ে নেওয়া অর্থ থেকেই তাদের সব উপার্জন আসত। আর এগুলো একবার ব্যবহারেই শেষ হয়ে যায়, সারা জীবন তো আর চলে না। কিন্তু এখন তারা দখল করা বিভিন্ন এলাকার ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে। যার কারণে উপার্জনও কমতে শুরু করেছে।’

ইসলামিক স্টেটের আয় সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো ধারণা পাওয়া যায় না। তবে চোরাচালান, পুরাতাত্ত্বিক সামগ্রী বিক্রিসহ বিভিন্ন উপায়ে এরা উপার্জন করে থাকে। এ ছাড়া একটি পরিসংখ্যান বলছে, শুধুমাত্র তেল বিক্রি করেই আইএস এক মাসে প্রায় চার কোটি ডলার (প্রায় ৩০০ কোটি টাকা) আয় করতে পারে।

সেই সঙ্গে ইরাক ও সিরিয়ায় এদের নিয়ন্ত্রণে থাকা প্রায় ৬০ থেকে ৯০ লাখ মানুষকে শিরশ্চ্ছেদসহ বিভিন্ন হুমকি দিয়ে তাদের কাছ থেকেই বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয় আইএস সদস্যরা।

আরবের একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আইএসের এক কর্মকর্তা বলেছেন, জানুয়ারি মাসে তাঁদের ২০০ কোটি ডলারের বাজেট ঘোষণা করা হয়।

সন্ত্রাসবাদ বিশ্লেষক বেঞ্জামিন বলেন, এটি হয়তো অতিরঞ্জিত একটি বাজেট। তবে এটাও ঠিক যে আইএসের কাছে এমন পরিমাণ অর্থ আছে যা দিয়ে তাদের খরচ চালানোর পরও কিছু উদ্বৃত্ত থাকে।

তবে এই মুহূর্তে তেল পরিশোধনাগার আছে এমন ইরাকের দুই শহর তিকরিত ও বাইজির নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে আইএস। ইরাকের সেনাবাহিনী ও সরকারপন্থী মিলিশিয়ারা মার্কিন জোটের বিমান হামলার সাহায্য নিয়ে শহর দুটির ওপর পুনর্নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এমনকি সিরিয়াতেও কুর্দি এবং আবর জোটের সম্মিলিত শক্তি বেশ কিছু অংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে।

যত বেশি শহরের ওপর থেকে আইএস নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে, তত বেশি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তারা। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এভাবে সীমানা হারিয়ে বিশ্বের অন্য স্থানের দিকে বেশি ধাবিত হচ্ছে আইএস। সম্প্রতি প্যারিসে হামলায় ১৩০ জন নিহত হওয়ার উদাহরণ টেনে বলা হচ্ছে, ধারণা করা হচ্ছে আইএস তাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলের খোঁজে লিবিয়াসহ বিশ্বের অন্য স্থানের দিকে ধাবিত হচ্ছে।

মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক গবেষক কলাম্ব স্ট্রাক বলেন, সব দেখেশুনে মনে হচ্ছে, এবার বাজেট কিছুটা সংকোচন করতে পারে আইএস। যোদ্ধাদের বেতনও কমিয়ে আনা হচ্ছে। আগে যে যোদ্ধারা ৩১ হাজার ডলারের বেশি বেতন পেতেন, তাঁদের এখন দেওয়া হচ্ছে সাড়ে ২৩ হাজার ডলার। সেই সঙ্গে কৃষিপণ্য ও মোবাইল ফোনের মতো সামগ্রীর ওপর আয়কর বাড়ানোরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংগঠনটি। এমনকি নিয়ন্ত্রিত এলাকার মানুষদের তেল পরিশোধন ও বিক্রির ওপরও আয়কর বাড়ানো হয়েছে।

এভাবে যোদ্ধাদের বেতন কমানো এবং কর বাড়ানোর কারণে আইএসের বিরুদ্ধে জনবিদ্বেষ বাড়বে বলে মত বিশ্লেষকদের। এটি প্রশমন করা আইএস যোদ্ধাদের জন্য বেশ কঠিন হবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে মার্কিন জোট ও রাশিয়ার ক্রমাগত বিমান হামলার মুখে নিজস্ব খিলাফত প্রতিষ্ঠার এই যুদ্ধও কঠিন হবে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.