চন্দনাইশ পৌর-নির্বাচনে অর্ধশত প্রার্থী, প্রচারণা শুরু

0

সৈয়দ শিবলী ছাদেক কফিল: চন্দনাইশ পৌরসভা নির্বাচনে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। প্রার্থীরা একপ্রকার প্রচারনা শুরু করেছেন। ২৪ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ৫-৬ ডিসেম্বর যাচাই-বাছাইয়ের পর প্রার্থীদের আগ্রহে জোয়ার এসেছে। বাছাইয়ে মেয়র পদে-৪, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে-৫ ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে-৪১ জনের প্রার্থীতা বৈধ হয়। ১৩ ডিসেম্বর প্রার্থীতা প্রত্যাহারের পর ১৪ ডিসেম্বরর প্রার্থীরা প্রতীক বরাদ্দ পাবেন। তখন থেকে মূলতঃ পুরোদমে প্রচারনা চালাবেন। রাজনৈতিক মেয়র প্রার্থীদের দলীয় প্রতীক থাকায় পোস্টার-লিপলেট ইত্যাদি ছাপানোর কাজ ইতোমধ্যে প্রায় সেরে ফেলেছেন।

যদিও নির্ধারিত সময়ে প্রচার কাজ চালাতে হবে। চন্দনাইশে মেয়র পদে মনোনয়ন সংগ্রহ করেন-৬ তন্মধ্যে জমা দেন-৪ জন। এতে ৪ জনেরই প্রার্থীতা বৈধ হয়। মেয়র প্রার্থীরা হলেন বর্তমান মেয়র আলহাজ্ব মোহাম্মদ আইয়ুব কুতুবী (এলডিপি/ছাতা), আলহাজ্ব মাহবুবুল আলম খোকা (আওয়ামীলীগ/নৌকা), আলহাজ্ব মাওলানা আবদুল হাকিম (ইসলামী ফ্রন্ট/মোমবাতি) ও আলহাজ্ব জসিম উদ্দিন আহমদ (স্বতন্ত্র)। সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৩ ব্লকে ২ জন করে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডে (২নং ব্লকে) নার্গিস আকতার জমা না দেয়ায় মহিলা প্রার্থী রয়েছে ৫ জন। তাঁরা হলেন- ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডে (১নং ব্লকে) খোরশেদা বেগম ও বেবি আকতার। ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডে (৩নং ব্লকে) জাহানারা বেগম ও হাসনা আরা বেগম। ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডে (২নং ব্লকে) বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন জান্নাতুল ফেরদৌস।fa299a2c-6f5d-4a3a-9c21-b46c593eb1ac

৯টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে মোট মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন ৫৭ জন, তন্মধ্যে জমা দেন ৪২ জন। তবে ৯নং ওয়ার্ডে সেকান্দর হোসেন সোহেলের প্রার্থীতা বয়স সংক্রান্ত জটিলতায় বাতিল হয়। ফলে বৈধ প্রার্থী থাকে ৪১ জন। তাঁরা হলেন-১নং ওয়ার্ডে সুলতান মাঈনুদ্দিন মোরশেদ, আবুল কালাম আজাদ, মোরশেদুল আলম, আবদুল করিম, ফৌজুল আজিম ও অজয় দত্ত। ২নং ওয়ার্ডে মোহাম্মদ ইউচুফ ভান্ডারী (বর্তমান কাউন্সিলর), নুরুল ইসলাম চৌধুরী, কে এম হামিদ উদ্দিন হিরু, মো: নুরুল ইসলাম, ফজলুল কবির চৌধুরী, মোহাম্মদ মাসুদ ও আবদুস ছবুর। ৩নং ওয়ার্ডে হেলাল উদ্দিন চৌধুরী (বর্তমান কাউন্সিলর) ও বেলাল উদ্দীন। ৪নং ওয়ার্ডে আবদুল হালিম (বর্তমান কাউন্সিলর), মাসুদুর রহমান, ছৈয়দুর রহমান ও নাছির উদ্দীন। ৫নং ওয়ার্ডে মো: নুরুল কবির (বর্তমান কাউন্সিলর), শাহ আলম, আবদুল আজিজ, আবুল কালাম ও মোহাম্মদ সেলিম। ৬নং ওয়ার্ডে আবদুল হক, আবু জাফর, শাহাদাত হোসেন খোকন ও সরওয়ার ইসলাম। ৭নং ওয়ার্ডে রবিউল হোসেন জসিম (বর্তমান কাউন্সিলর), মোজাম্মেল হক চৌধুরী, বাচা মিয়া, নয়ন চৌধুরী ও দানু মিয়া। ৮নং ওয়ার্ডে আবু তৈয়ব (বর্তমান কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র), সিরাজুল ইসলাম ও আকতার উদ্দিন। ৯নং ওয়ার্ডে খোরশেদ আলম সবুজ (বর্তমান কাউন্সিলর), লোকমান হাকিম, শেখ মুজিবুর রহমান, জাফর আহমদ, জসিম উদ্দিন ও শাখাওয়াত হোসেন। ১৩ ডিসেম্বর প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিনে আরো কিছু প্রার্থী কমতে পারে। ৩ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেন রিটার্নিং অফিসার ও ইউএনও সনজীদা শরমিন।

চন্দনাইশ মৌজাসহ উপজেলার ৩নং হারালা ইউনিয়ন সম্পূর্ণ, ২নং জোয়ারা ইউনিয়নের আংশিক ও গাছবাড়ীয়া মৌজাসহ ৮নং হাশিমপুর ইউনিয়নের অংশ বিশেষ নিয়ে ২৫ আগষ্ট ২০০২ইং তারিখে চন্দনাইশ পৌরসভা গঠিত হয়। “খ” শ্রেণিতে উন্নত হয় ০১/০৮/২০০৫ইং তারিখে। পৌরসভার আয়তন ১৭.০৮ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। ভোটার সংখ্যা ২৬,৭১৩ জন। প্রথম প্রশাসক ছিলেন তৎকালীন ইউএনও মোঃ এ কে এস মাহবুবুর রহমান। প্রথম নির্বাচন হয় ২০০৫ সালে, দ্বিতীয় নির্বাচন হয় ২০১১ সালে এবং এবারের বা তৃতীয় নির্বাচন হবে আগামী ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৫ বুধবার। প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন আলহাজ্ব মোহাম্মদ আইয়ুব কুতুবী, দ্বিতীয়বারও (বর্তমান) তিনি নির্বাচিত হন।

৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ও এলডিপি দুই দলেরই প্রেস্টিজ ইস্যু। এলডিপির প্রেসিডেন্ট ও এ আসনের অপরাজিত জাতীয় সাংসদ আলহাজ্ব ড. কর্ণেল (অব:) অলি আহমদ বীর বিক্রম’র দূর্গ বলে খ্যাত চন্দনাইশ পৌরসভায় এশিয়ার বৃহত্তম তথা সরকারি দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ পুনঃসংগঠিত হচ্ছে। তাঁরা ভোটারদের মনজয়ে বহুবিধ কৌশল অবলম্বন করতে পারেন। আওয়ামীলীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী আলহাজ্ব মাহবুবুল আলম খোকা রাজনৈতিক দুঃসময়ে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তাছাড়া অধ্যক্ষ মাওলানা ইসহাক এর জ্যেষ্ঠ পুত্র হিসেবেও তিনি পারিবারিকভাবে সুপরিচিত। দক্ষ ও মেধাবী বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে তাঁর খ্যাতিও কম নেই। যে কারণে আওয়ামীলীগ এখন ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। জয়ের ব্যাপারে তাঁরা অনেকটা আশাবাদী। এলডিপি মনোনীত প্রার্থী বর্তমান মেয়র আলহাজ্ব মোহাম্মদ আইয়ুব কুতুবী শান্ত ও ঠান্ডা মেজাজের বলে মনে করেন এলাকাবাসী। সহিংসতা রোধ করে সম্প্রীতি রক্ষা করতে চান। তিনি চন্দনাইশ থানা ও পৌরসভার স্থপতি ড. অলি আহমদ বীর বিক্রম’র ভাইপো। এবার নির্বাচিত হলে তিনি মেয়র পদে হ্যাট্রিক করবেন। তৃতীয়স্থানে লড়াই হবে স্বতন্ত্র প্রার্থী আলহাজ্ব জসিম উদ্দীন আহমদ ও ইসলামী ফ্রন্টের আলহাজ্ব মাওলনা আবদুল হাকিমের সাথে। সুন্নি জনতার ঘাটি বলে পরিচিত এ অঞ্চলে আলহাজ্ব মাওলানা আবদুল হাকিমেরও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে যথেষ্ট। ধারণা করা হচ্ছে মেয়রসহ সকল পদে সেয়ানে সেয়ানে লড়াই হবে।

১নং ওয়ার্ডের নাছির উদ্দিন ও ৬নং ওয়ার্ডের রশিদ আহমদ ছাড়া পৌরসভার বর্তমানে দায়িত্বেরত সকল জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সংরক্ষিতসহ সকল কাউন্সিলর পদে বর্তমানদের সাথে মূল ভোটযুদ্ধ হতে পারে বলে জানিয়েছেন অনেকে। রিটার্নিং অফিসার ও ইউএনও সনজীদা শরমিন জানান, নির্বাচন অত্যন্ত সুশৃঙ্খল, শান্তিপূর্ণ ও অবাধ হবে। কোন অনিয়ম চলবে না।
সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও নির্বাচন অফিসার আবদুল লতিফ শেখ বলেন, যথানিয়মে ভোট গ্রহণ করা হবে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোবারক হোসেন বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হবেই। নির্বাচন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ম মোতাবেক প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। প্রার্থীরাই ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করে কেন্দ্রে আনবেন। তবে জোর জবরদস্তি চলবে না। চন্দনাইশ থানার ওসি (তদন্ত) নজরুল ইসলাম বলেন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ সবোর্চ্চ সতর্ক থাকবে। প্রশাসন সকল বিশৃঙ্খলা বন্ধে তৎপর থাকবে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.