জামাল জাহেদ, কক্সবাজার : বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড় সমৃদ্ধ দ্বীপ কক্সবাজার শহরের মহেশখালী উপজেলা।বর্তমানে মহেশখালীর ফেরিঘাট হাজার হাজার পর্যটক ও ৪ লাখ মানুষের কাছে বিষপোড়ায় পরিণত হয়েছে। ঘাট পারাপারে জনদুর্ভোগ চরমে পৌছেছে জেটি ঘাটে,স্থানীয় সংসদ সদস্য ও মেয়রের নীরব ভুমিকা প্রশ্নবিদ্ধ,যেনো দেখার কেউ নেই।নদীর নাব্যতা হ্রাস,খাল খননে দীর্ঘসুত্রীতা,ভরাট হয়ে যাওয়া সমুদ্রতটের নৌঘাট,জনগনের ঘাট পারাপারে সীমাহীন বাধা হয়ে দাড়িয়েছে। বারবার শীর্ষ স্থানীয় গনমাধ্যমে ও বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জেলার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে মহেশখালীর সাড়ে ৪লাখ জনগনও পর্যটকদের।এই জন দুর্ভোগ দীর্ঘ এক যুগের ও বেশি বলে জানা যায়।
প্রতিনিয়ত মুমুর্ষ রোগী পারাপারে হয়রানি, রাতে নৌঘাটে সীগন্যাল বাতি না থাকায় অসংখ্য দুর্ঘটনা,পর্যটক হয়রানি,স্পীডবোট ব্যবহারে অনিয়ম,ঘাটে বকাটেদের দৌরাত্ম্য,যাত্রী হয়রানি ও নানা অভিযোগে জর্জরিত মহেশখালী নৌঘাটের বর্তমান অবস্থা।প্রতিনিয়ত জনগন অভিযোগ করে গেলেও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।যাত্রী হয়রানি নির্মুলের কোন ব্যবস্থা নেওয়ার আদৌ কোনো পরিকল্পনাও জনগন দেখছেনা কতৃপক্ষের।
অতীতে জেটিঘাট থেকে ৩০-৪০ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় করলেও বর্তমানে কোটির উপরে,জনগন থেকে কতৃপক্ষ কোটি টাকা আদায় করলেও জনগন পাচ্ছেনা কাংখিত সেবা।অন্যদিকে জেটি সম্প্রসারণ ও খাল খননের ব্যাপারে নেই কোন উদ্যেগ।ফলে দিন দিন শোচনীয় অবস্থা হচ্ছে জনগনের।মহেশখালী উপজেলার হোয়ানকের জনৈক মমতাজ মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান,”আদৌ কোনদিন মহেশখালীর নৌঘাট উন্নতি হবেনা কারন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দলীয় কোন্দল আর ব্যক্তিগত স্বার্থে হচ্ছেনা। যদি জনগনের কথা চিন্তা করে,উদ্যেগ নিতো তবে কাজ হতো।স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নীরব ভুমিকা জনগনের হয়রানির মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে” বলে মনে করেন তিনি।
মহেশখালী জেটি ঘাটের নৌযান নিয়ন্ত্রণে থাকা এক ব্যক্তি জানান, ভাটা শুরু হলেই নেমে আসে দুর্ভোগ। জোয়ারে তেমন না।খাল খনন না থাকায় ভাটায় ডিঙি নৌকা দিয়ে জেটিতে যাত্রী পারাপার চরম দুর্ভোগ হচ্ছে বলে জানান তিনি।করা যায়।ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক বাবু বলেন,নৌঘাটে কোন শৃঙ্খলা না থাকায় বেশির ভাগ সময় দাড়িয়ে থাকতে হয়,কোন নিয়ম আছে বলে তিনি মনে করেন না।
কক্সবাজার প্রশাসনিক তথ্যসূত্রে জানা যায়,১৯৮৮ সালে এরশাদ সরকারের আমলে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার-মহেশখালী নৌরুটে ৫শ’ মিটার দৈর্ঘ্য মহেশখালী জেটি নির্মাণ করা হয়। একই সঙ্গে জেটি সংলগ্ন আধা কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হয়। কিন্তু পলি জমে নদীর নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় সঙ্কুচিত হয়ে যায় নৌঘাট। ফলে যাত্রী চলাচলে সৃষ্টি হয় মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা।কোন অদৃশ্য শক্তির কারনে নৌঘাটের সঃস্কার ও ফেরিঘাট অনুমোদন দেওয়ার পর ও চালু হচ্ছেনা কেন তা জনগনের বোধগম্য নয়। এ অবস্থা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় ২০০০ সালে প্রায় ১ কোটি টাকা ব্যয়ে জেটি ঘাটের ব্রিজ ১শ’ মিটার অংশ সম্প্রসারণ করা হয়। কিন্তু তার পরেও সুফল পাচ্ছেনা জনগন।ভাটার সময় রোগীসহ যাত্রীদের এক কোমর পানিতে নেমে যেতে হয়।জেটি ঘাটে ভিড়তে পারেনা নৌযান।ফলে নারী ও শিশুসহ বৃদ্ধদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়।
মহেশখালীর এডভোকেট নুরুলহুদা জানান, ঘাটের এ অবস্থার কারণে সময় রেখে আসা যাওয়া করতে হয়।জনগন কতো যে কষ্ট পাচ্ছে তা বলার অন্ত নেই।জনগন ও পর্যটকের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে অঅতিসত্বর জেটিঘাটের সম্প্রসারণ করা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।নাহয় সরাসরি ফেরিঘাট চালু করে দেওয়া মহেশখালী টু কক্সবাজার বা খুরুশকুল ব্রীজ।
মহেশখালী-কক্সবাজার নৌ-রুটের নিয়মিত যাত্রী ভুমি অফিসের কর্মকর্তা রিদোয়ান জানান,সরকারের বড় বাজেটের সব প্রকল্প মহেশখালীকে ঘিরে,সুতরাং মহেশখালীর ফেরিঘাট চালু করা অতীব জরুরী মনে করেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল কামাল জানান, জেটি ঘাটে জনদুর্ভোগের বিষয়টি সরকারের উচ্চ মহলে অবহিত করেছেন সম্প্রসারণ করার কোনো প্রকল্প আসলে অবশ্যই করবেন।অন্যদিকে মহেশখালীর পৌর মেয়র আলহাজ্ব মকসুদ মিয়ার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে,ফোন রিসিভ করেনি বিধায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
মহেশখালী কুতুবদিয়ার স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আশেক উল্লাহ রফিক জানান,যাত্রীদের ভোগান্তির বিষয়টি সত্য।তার কারন হলো বাকখালী নদী ভরাটের ফলে দুদিকেই সমস্যা হচ্ছে।ইতিমধ্যে সড়ক ও জনপদ বিভাগ এবং নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ে এবিষয়ে তথ্য পাঠিয়েছি অতি শীগ্রেই মহেশখালী টু চৌফলদন্ডী ফেরিঘাট চালু হবে।অন্যদিকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন জানান, মহেশখালী জেটি ঘাটের ভোগান্তি আমার জানা আছে। জেটি ঘাট সম্প্রসারণ করে মহেশখালী-কক্সবাজার নৌপথ সহজ করার চেষ্টা করব।