একুশের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে জনতার ঢল

0

গোলাম সরওয়ার : মহান ভাষা আন্দোলন সহ মুক্তিসংগ্রামে জীবন দেয়া বীর সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে একুশের প্রথম প্রহরে ঢল নেমেছিল চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ, সবাই শহীদ মিনারের সামনে গিয়ে নত মস্তকে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। কারও হাতে ব্যানার, কারও হাতে প্ল্যাকার্ড, কেউ নিয়েছেন পুষ্পস্তবক, কেউ বুকের কাছে ধরে রাখা একটি মাত্র গোলাপ। আবার কেউ নিয়েছেন স্বাধীন বাংলার লাল সবুজের পতাকা। নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষের স্রোত মিশে গেছে একই মোহনায়। এসময় শ্লোগানে শ্লোগানে মুখর হয়ে উঠে পুরো শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ।

মহান একুশের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর কমপক্ষে এক ঘণ্টা আগে থেকেই লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে নগরীর লাভ লেইন থেকে নন্দনকানন হয়ে টিএন্ডটি অফিসের সামনে দিয়ে সিনেমা প্যলেস পর্যন্ত এলাকা। নন্দনকানন বোস ব্রাদার্সের সামনে দিয়ে রাইফেল ক্লাবের পাশ হয়ে নিউমার্কেট পর্যন্ত এলাকায়ও ছিল মানুষের ঢল।

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও নগর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানোর মূল আয়োজন সঞ্চালনা করেন।

শনিবার রাত ১২ টা ১ মিনিটে উপ-পরিদর্শক মো.কবিরের নেতৃত্বে পুলিশের একটি চৌকস দল শহীদ মিনারে গার্ড অব অনার প্রদান করে।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মহান শহীদ দিবসের আনুষ্ঠানিকতা। মন্ত্রীর পরেই চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন কাউন্সিলরদের নিয়ে শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন।

এরপর সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের নেতৃত্বে নগর আওয়ামী লীগ শহীদ মিনারে ফুল দেয়। মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের গণবিচার আন্দোলনের পক্ষ থেকেও শহীদ মিনারে ফুল দেন।

চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক এম এ সালাম, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান মো.আবদুচ ছালাম, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার রহুল আমিন, সিএমপি কমিশনার মোহা.আব্দুল জলিল মন্ডল এবং অতিরিক্ত কমিশনার একেএম শহীদুর রহমান ও দেবদাস ভট্টাচার্য, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো.শফিকুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ ও চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার একেএম হাফিজ আক্তার ফুল দিয়ে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানান।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগর ইউনিটের নেতারা শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানানোর সময় ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানে পুরো এলাকা মুখরিত হয়ে উঠে।

চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব, চট্টগ্রাম ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। এসময় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবু সুফিয়ান, বিএফইউজে’র সহ-সভাপতি শহীদ উল আলম, সিইউজে’র সভাপতি এজাজ ইউসুফী ও সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস, সিইউজে’র সাবেক স‍াধারণ সম্পাদক রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দিদারুল আলম, যুগ্ম সম্পাদক রাজেশ চক্রবর্তী, অর্থ সম্পাদক উজ্জ্বল কান্তি ধর, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নিপুল দে, সদস্য সোহেল রানাসহ সাংবাদিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

পুস্পস্তবক অর্পণের পুরোটা সময়ই শহীদ মিনারে আসা বিভিন্ন সংগঠনের কর্মী, সাধারণ মানুষ শ্লোগানে শ্লোগানে পুরো এলাকা মুখরিত করে রাখেন। অধিকাংশ মানুষ এসময় বাকি যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চেয়ে শ্লোগান দেন।

এদিকে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে একুশে ফেব্রুয়ারিকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে পুলিশ। শহীদ মিনারের নিরাপত্তায় সোয়াত বাহিনীও দায়িত্ব পালন করে।নগর পুলিশ কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, নিরাপত্তার জন্য চট্টগ্রাম নগরীকে তিনটি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে, শহীদ মিনার, শহীদ মিনারের আশপাশের এলাকা এবং পুরো নগরী।

এর মধ্যে শহীদ মিনার এবং আশপাশের এলাকায় সার্বক্ষণিক পুলিশ ফোর্স মোতায়েনের পাশাপাশি নগরীতে পুলিশের একাধিক টিম টহল ডিউটিতে রাখা হয়েছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.