রাঙামাটিতে পার্বত্য ভূমি কমিশনের বৈঠক, শান্তিপূর্ণ হরতাল

0

মোঃ সাইফুল উদ্দীন, রাঙামাটি প্রতিনিধি : স্থানীয় ছয়টি বাঙালি সংগঠনের ডাকা হরতালের মধ্যেই রাঙামাটিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের বৈঠক। বৈঠকটি রোবববার সকাল সাড়ে দশটায় রাঙামাটির উন্নয়ন বোর্ড সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও হরতালের কারণে স্থান পরিবর্তন করে তা রাঙামাটি সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় ।

সরকারের ভূমি কমিশন (সংশোধন) আইন-২০১৬’এর অধ্যাদেশ জারির পর এটা কমিশনের প্রথম বৈঠক। অপরপক্ষে বৈঠকটির প্রতিবাদে তিনটি পার্বত্য জেলায় (রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করে স্থানীয় বাঙালিদের ছয়টি সংগঠন পার্বত্য নাগরিক পরিষদ, পার্বত্য গণপরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম সম-অধিকার আন্দোলন, পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ,পার্বত্য গণশ্রমিক পরিষদ ও পার্বত্য বাঙালি ছাত্র ঐক্যপরিষদ। এছাড়া ‘পার্বত্য ভূমিরক্ষা আন্দোলন’ নামে নতুন আত্মপ্রকাশ করা আরেকটি সংগঠন এ হরতালের সঙ্গে একাত্বতা ঘোষনা করে ।
প্রসঙ্গ গত ১ আগষ্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নিয়মিত সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনের সংশোধনী অনুমোদন দেয়ার পর ৮ আগষ্ট সংশোধিত আইনের অধ্যাদেশ জারি করে সরকার।
অধ্যাদেশ জারির পর রাঙামাটিতে অনুষ্ঠিত পার্বত্য ভূমি কমিশনের প্রথম বৈঠকটি কমিশন চেয়ারম্যান সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মোঃ আনোয়ারুল আল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী ,পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা), চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার(রাজস্ব) মোমিনুর রশিদ আমিন, পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা, তিন জেলার জেলা প্রশাসক, তিন পার্বত্য জেলার সার্কেল চীফ, তিন পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, তিন পার্বত্য জেলার হেডম্যান কাব্বারীগণ। এছাড়াও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। তবে বৈঠক চলাকালে স্থানীয় প্রিন্ট ও ইলেকট্টনিক্্র মিডিয়ার কাউকে ভিতরে প্রবেশ করতে দেখা যায়নি। এছাড়া ভূমি কমিশনের মূল বৈঠকে কমিশনের সদস্য ছাড়া সম্মেলন কক্ষে আর কেউ ছিলো না। এদিকে কমিশনের বৈঠককে ঘিরে রাঙামাটি শহরে বাঙালিদের ডাকে চলছে সকাল সন্ধ্যা হরতাল। বাঙালিরা অভিযোগ করে বলেন, কমিশনের একতরফা বৈঠকে পার্বত্য এলাকা হতে কোন বাঙালি প্রতিনিধি রাখা হয়নি। তাই এই অবৈধ ভূমিকমিশনের সকল কার্যক্রমের প্রতিবাদ জানান বাঙালি সংগঠনগুলো।
বৈঠক শুরুর আগে প্রধানমন্ত্রীর আর্ন্তজাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী পার্বত্য ভূমি কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এরপর অনুষ্ঠিত বৈঠকে সংশোধিত আইন অনুযায়ী দ্রুত পার্বত্য ভূমি কমিশনের কাজ কিভাবে শুরু করা যেতে পারে সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
বৈঠক শেষে ভূমি কমিশনের চেয়ারম্যান সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. আনোয়ারুল আল হক সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, কমিশন কি ভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করবে সেই ব্যাপারে সদস্যদের নিয়ে আলোচনা করা হয়। তিনি আরো বলেন, এই আইন হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে কোন বাঙালিকে ভূমির অধিকার হারাতে হবে না।
পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন কার্যকর হলে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারি বাঙালীরা ভূমি থেকে উচ্ছেদ হবেন, এমন শংকাকে ‘অমূলক ধারণা ও অমূলক শংকা’ বলে মন্তব্য করেছেন কমিশনের চেয়াম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আনোয়ার আল হক। তিনি আরো বলেন ভূমি কমিশন শুধুমাত্র বিরোধপূর্ণ ভূমি নিয়েই কাজ করবে।
সাংবাদিকের আরেক প্রশ্নের জবাবে কমিশনের সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান সন্তু লারমা বলেন,আমি আশাবাদী এই কমিশন সঠিক ভাবে কাজ করবে। তিনি আরো বলেন,এই কমিশন সরকারের সাথে আলাপ আলোচনা করে কাজ করে তা বাস্তবায়ন করলেই বুঝবো কমিশন কাজ করছে।
তিন পার্বত্য জেলায় শান্তিপূর্ণ হরতাল: এদিকে পার্বত্য ভূমি কমিশন বাতিল দাবিসহ কমিশনের ওই বৈঠকের প্রতিবাদে রোববার রাঙামাটিসহ তিনটি পার্বত্য জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করে স্থানীয় বাঙালিদের ছয়টি সংগঠন। হরতাল টানটান উত্তেজনার মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। হরতালের সমর্থনে সকাল থেকে রাঙামাটি শহরের রিজার্ভবাজার, উন্নয়ন বোর্ড এলাকা, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, তবলছড়ি, কাঠালতলী, বনরূপা, ডিসি অফিস, কলেজগেট, ভেদভেদীসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে হরতালকারীদের পিকেটিংয়ে অংশ নিতে দেখা গেছে।
হরতালের কারণে রাঙামাটি শহরসহ অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লায় সড়ক ও নৌপথে কোনো প্রকার যানবাহন চলাচল করেনি। দোকানপাটসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকে। সরকারি বিভিন্ন অফিস, আদালত, প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও লোকজনের উপস্থিতি কম। আইনশৃংখলা রক্ষায় শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে মোতায়েন ছিল পুলিশ ও বিজিবিসহ নিরাপত্তাবাহিনীর অতিরিক্ত টহল দল। হরতালে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে হরতালের পাশাপাশি বৈঠক স্থলটি ঘেরাও করে রাখার কর্মসূচি দেয়া হলেও প্রশাসনের বাধার মুখে পরে এ কর্মসূচি হতে সরে যান বিক্ষোভকারীরা।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.