প্রবাসীদের নিরাপত্তায় আইন করা উচিত – সিরাজুল হক

0

সিটিনিউজবিডিঃ চট্টগ্রামের রাউজানের কৃতি সন্তান, বিশিষ্ট সমাজ সেবক, দানবীর, শিক্ষানুরাগী সিরাজুল হক। ওমানে বসবাস করছেন স্বপরিবারে কয়েক যুগ ধরে। ওমানের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সিরাজুল হক ওমানে প্রতিষ্টিত একজন ব্যবসায়ী। রাউজানে নিজগ্রামে হারিছখান পাড়ায় গড়ে তুলেছেন পিতার নামে হাজী আবদুল আজিজ মুন্সি প্রাইমারী স্কুল, মাদ্রাসা, কবরস্থান ও শহীদ মিনার।

sirajul haque

সিরাজুল হক
সাধারন সম্পাদক
স্যোশাল ক্লাব, সালতানাত অব ওমান।

ওমানে বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে বৃহৎ একটি সংগঠন স্যোশাল ক্লাব। এই ক্লাব ওমান সরকার কর্তৃক অনুমোদিত। ওমান সরকার বর্তমানে স্যোশাল ক্লাবকে নিজস্ব জমিও প্রদান করেছে। এটা বাংলাদেশিদের জন্য এক সুখবর। বাংলাদেশী প্রবাসীদের সুখে দু:খে এই সংগঠন কাজ করছে নিরলসভাবে। সিটিনিউজবিডি’কে একান্ত সাক্ষাতকারে বলেনঃ

সিরাজুল হকঃ স্যোশাল ক্লাব ওমানে প্রতিষ্টিত হয়েছে ১৯৯৫ সালে। দীর্ঘদিন এই ক্লাব আওয়ামীলীগ বিরোধী চক্রের কব্জায় ছিল। বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি এর নেতৃত্ব দিচ্ছে। বাংলাদেশের জাতীয় দিবসগুলো এই সংগঠন বেশ ঝাঁকজমক ভাবে পালন করে আসছে। স্যোশাল ক্লাব এর সাধারন সম্পাদক সিরাজুল হক বলেন, স্যোশাল ক্লাব মুলত ওমান সরকারের পররাষ্ট্র ও সমাজকল্যান মন্ত্রনালয়ের অধীনে একটি বৈধ সংগঠন। ওমানে বাংলাদেশের মত অন্যান্য দেশেরও একটি করে ক্লাব অনুমতি দিয়ে থাকে। এটার উদ্দেশ্য হলো নিজ নিজ দেশের জাতীয় অনুষ্টানগুলো যথাযথ ভাবে পালন করা এবং আমাদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, সাহিত্য, ঐতিহ্য ওই দেশের সাথে আদান প্রদান বা শেয়ার করা।

এ ছাড়া বাংলাদেশী যে সব লক্ষ লক্ষ প্রবাসী আছে তাদের সুখ-দু:খ, সুবিধা-অসুবিধা চিহ্নিত করে সমাধানে সহযোগিতা প্রদান করা। তবে বিষয়টা সম্পুর্নভাবে দূতাবাসের উপর বর্তায়। সে ক্ষেত্রে আমাদের দুতাবাস যখনই সহযোগিতা চাইবে আমরা সহযোগিতা করে আসছি। স্যোশাল ক্লাব ও দুতাবাস একজনের পরিপুরক আরেকজন। ১৯৯৫ সালে স্যোশাল ক্লাবের জন্ম থেকে ১২ বছর আওয়ামীলীগ বিরোধীদের হাতের মুঠোয় ছিল। ১২ বছরের পর ২০০৮ সালে আমরা এসে এই ক্লাবের অচলাবস্থার অবসান ঘটাতে সক্ষম হয়েছি। এবারও আমরা নির্বাচনের মাধ্যমে দায়িত্বপ্রাপ্ত হলাম। এর আগে ওদের গন্ডির ভিতর ছিল। আমরা তিনজন ওমান বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রতিষ্টাতা এম.এন আমীন, রেজাউল করিম এবং আমাকে বঙ্গবন্ধু পরিষদ করার অপরাধে টারমিনেট করা হয়েছিল। কারন স্যোশাল ক্লাবের গঠনতন্ত্রে উল্লেখ আছে, স্যোশাল ক্লাব ছাড়া বাংলাদেশিরা কোন সংগঠন করতে পারবে না। করলে এটা আইনত অপরাধ এবং দন্ডনীয়। আপনি নিজেও জানেন, মধ্যপ্রাচ্যে এটা নিয়ম। সেখানে রাজনীতি নিষিদ্ধ। এরপরও রাজনীতি করে অনেকে। এর জন্য আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতারা অনেকটাই দায়ী। স্যোশাল ক্লাবে সবাই আসতে চায়।

কারন স্যোশাল ক্লাবের সভাপতি ও সম্পাদকের বিশেষ কার্ড দেওয়া হয় এবং অবাধে যেখানে-সেখানে যাতায়াত করা যায়। ওমানে লিডিং প্লাটফরমে ৫০ জন থাকলে ক্লাবের কমিটিতে ১২জন নির্বাচিত হয়ে আসতে পারে। দেখা যায়, পরবর্তীতে অবশিষ্ট ৩৮ জন এই ১২ জনের বিরোধিতা করেন। ক্লাবের কমিটিকে সহযোগিতা করতে আসেন না। আমরা এবার নির্বাচিত হয়ে আসার পরও এ অবস্থা ছিল। এই নির্বাচনের পুর্বে নির্বাচনে না যাওয়ার জন্য অনেক বাধা বিপত্তি এসেছিল। যারা বিরোধিতা করেছেন তারা স্যোশাল ক্লাবের গঠনতন্ত্র সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না। এ কমিটিতে ১২ জনের মধ্যে ৬ জন আওয়ামী লীগার। বর্তমান কমিটি আসার পর প্রথমবারের মত রক্তদান কর্মসুচী পালন করেছি। বিগত ১৮ বছরে স্যোশাল ক্লাবের ইতিহাসে রক্তদান কর্মসুচী হয়নি। ওমান বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাবেক উপদেষ্ঠা ও বিশিষ্ট সংগঠক সিরাজুল হক বলেন, মহিলা সংগঠন গঠন এবং বাংলাদেশি কমিউনিটিতে আতঃমানবতার সেবায় স্যোশাল ক্লাবকে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়েছি।

হাসপাতাল থেকে শুরু করে আমরা যে সব ব্যক্তি তাদের ন্যায্য টাকা পাচ্ছেন না, মারধরের শিকার হয়ে কোন মহিলা যখন আমাদের সাহায্য কামনা করেন, আমরা সমাধানের চেষ্টা করেছি। এ ব্যাপারে আমাদের সভাপতি শফিকুল ইসলাম ভূইয়া বেশ প্রশংসিত হয়েছেন কারন তিনি ভাল আরবী বলতে পারেন এবং তিনি এসব নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়ান। আমাদের সুলতান চিকিৎসার জন্য জার্মানী ছিলেন। তিনি যখন আসছেন তখন আজকের মাস্কাট গভ: হাউজের ডাকা হল এবং অন্যান্য দেশের স্যোশাল ক্লাবের কর্মকর্তাদেরও ডাকা হল। মাষ্কাটের গভর্নর বললেন, আপনাদের আমন্ত্রন জানিয়েছি যে, আমাদের সুলতান আসছেন। সমুদ্রপাড়ের রোড ব্লক করে দেব। সেখানে আপনারা আপনাদের দেশের স্টল করে আনন্দ করবেন। স্টলে যদি কোন কিছু বিক্রি না হয় তাহলে তার টাকা আমরা দিয়ে দেব। তারপরও স্কু ও দুতাবাস থেকে কোন সাহস পায়নি। আমরা বাংলাদেশের প্রায় ২ হাজার লোক সমাগম ও সবচেয়ে আনন্দ উল্লাস হয়েছে আমাদের স্টলে।

আমাদের সৌভাগ্য ছয়জন মন্ত্রী আমাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এরপরও অনেক কর্মসুচী ও বাংলাদেশের গান দিয়ে বড় করে আমরা অনুষ্টান করেছি। এটা আমাদের সৌভাগ্য ও আনন্দিত। আমাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওমান সরকার আমাদের ক্লাবের জন্য নিজস্ব জায়গা বরাদ্দ করছে। এর জন্য আমি ওমান সরকারকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। সিরাজুল হক বলেন, ’ দুর্ভাগ্য হলেও সত্যি যে, দুতাবাসে একটি কাউন্টার ছিল যা বর্তমান রাষ্ট্রদুত বন্ধ করে দিয়েছেন। এই কাউন্টার থেকে আয়ের একটি অংশ ক্লাবের কাজে ব্যবহার হত।

সংগঠন করি মানুষের স্বার্থে। আমার কোন চাওয়া পাওয়া নেই। প্রবাসীদের কল্যানে কাজ করতে ক্লাবে এসেছি। প্রবাসীদের স্বার্থে যে কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে স্যোশাল ক্লাব এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৪ কোটি টাকা দামের জায়গা সরকার আমাদের দিয়েছে। এখন আমরা বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে স্টাকচার করার পথে এগিয়ে যাব। ওমানে ভারতীয় স্যোশাল ক্লাব জায়গা কিনে ক্লাব করেছে কিন্তু আমাদেরকে ওমান সরকার জায়গা বরাদ্ধ দিয়েছে। এই ক্লাব নিজস্ব জমিতে প্রতিষ্টিত হলে স্যোশাল ক্লাব আরও সমৃদ্ধি ও মজবুত হবে ইনশাআল্লাহ। সিরাজ বলেন, ’ওমানে বাঙ্গালীদের ভিসা প্রতি দশজনের মধ্যে একজনের আছে। আপনি যদি ১০ জন লোকের জন্য আবেদন করেন বা ছাড়পত্র পান তবে সেখান থেকে ১ জনকে দিতে পারেন। এটার কারন দুতাবাসের ব্যর্থতা।

তাদের আন্তরিকতার বড় অভাব রয়েছে। কারন ভারত থেকে লোক আসছে। সেখানে শ্রমিক সংকট আছে। শ্রমবাজারে শ্রমিকের অনেক ডিমান্ড আছে। কিন্তু দুতাবাস সেভাবে উদ্যোগ না নিলে ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের তদবির ও ছুটোছুটি না করলে কিভাবে হবে বলেন? রাষ্ট্রদুতকে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা দুতাবাসকে যে কোন সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। স্যোশাল ক্লাবের এ্যাকটিভ সদস্য বর্তমানে ২২৫ জন। আমার কর্মদক্ষতা সদস্যগন বিচার করবেন। আমাকে অনেকে বলেন, নাচগানের ব্যবস্থা আগে ছিল এখন করছেন না কেন? আমার কথা হলো, নাচগান না করে সে টাকায় যদি আমার দেশের মানুষের ও প্রবাসী দু:খি মানুষের বিপদে-আপদে সাহায্যের খাত প্রসারিত করতে পারি তাহলে সেটিই হবে উত্তম।

প্রবাস থেকে যখন দেশে ২/৩ মাস পর পর আসা হয়। কোন সময়ে একা বা কোন সময়ে স্বপরিবারে। চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের আনুষ্টানিকর্তা শেষ করে বের হয়ে যখন গাড়িতে উঠি তখন যাত্রীদের বহি:গমন নিরাপদ ও সুষ্টভাবে করতে কর্তব্যরত আনসার সদস্যরা খাকি পোষাক ও কাঁধে সরকারী অস্ত্র ঝুলিয়ে বকশিষের জন্য বাধ্য করে প্রবাসীদের। নিজেও লর্জ্জিত হই। যে আনসার বাহিনী আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে সাহসী ভুমিকা রেখেছে সেই আনসার সদস্যদের এভাবে প্রকাশ্যে হাতপাতার দৃশ্য খুবই বেমানান ও লজ্বাকর অবস্থা।

বিমানবন্দরে লাগেজ গায়েব, লাগেজ কাটা, বিলম্বে লাগেজ আসা নিত্যদিনের চিত্র। আমার দাবী, প্রবাসীদের নিরাপত্তা, বিমানবন্দর থেকে বাড়ি পর্যন্ত ও তার দেশে অবস্থানের সময় নিরাপত্তা বিধানে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরী। ইমিগ্রেশন করার সময় অনলাইনে ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রবাসীদের সংশ্লিষ্ট থানাকে যাওয়া আসা জানানো সহ নিরাপত্তা বিধানে সিষ্টেম চালু করা অত্যন্ত জরুরী। প্রবাসীদের অর্থে যে দেশের রাজস্ব পরিপুর্ন ও চাঙ্গা থাকে সে প্রবাসীদের স্বার্থে সরকার মনিটরিং এর মাধ্যমে পদক্ষেপ নিতে অসুবিধা কোথায়। প্রবাসীদের কল্যানে প্রবাসী হেলপ ডেস্ক বিমানবন্দরে স্থাপন করা ঢাকায় হলেও চট্টগ্রামে তাদের গাড়ি দেখা যায় মানুষ দেখা যায় না। অর্থনীতির মেরুদন্ড চাঙ্গা রাখতে লক্ষ লক্ষ প্রবাসী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে আছে তাদের দেশে গমন ও বহি:গমন পথকে সুগম করলে দেশও উপকৃত হবে। প্রবাসীগনও নিরাপত্তা পাবেন।

স্যোশাল ক্লাবে আমরা এসে এই প্রথম জাতির পিতার নাম উচ্চারন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করছি। দেশের আলেম সমাজকে ওমানে নিয়ে ধর্মীয় কর্মকান্ডকেও সহযোগিতা করছি। স্যোশাল ক্লাবের আগামী নির্বাচনে সব পেশার মানুষ যাতে অংশগ্রহন করতে পারে সে ব্যবস্থা ইনশাআল্লাহ আমরা করে যাব। স্যোশাল ক্লাব যেন সার্বজনিন রুপ গ্রহন করে। সব দলের লোকদের সমন্নয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহনের সুযোগ দিয়ে আমরা চলে যাব।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নবনির্বাচিত মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিনকে আমাদের অভিনন্দন। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি তিনি চট্টগ্রামের উন্নয়নে কাজ করবেন এবং দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ জোয়ারের পানি ঠেকাতে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহন করবেন। চট্টগ্রামকে গ্রীন সিটিতে তিনি পরিনত করবেন। নগরবাসী তার যোগ্য নেতৃত্বকে সম্মান দেখিয়েছে। আমরা প্রবাসীরাও তাকে সকল প্রকার সহযোগীতা করার আশ্বাস প্রদান করছি। নিশ্চয় আল্লাহ তাঁকে কামিয়াব করবেন। স্যোশাল ক্লাবের পক্ষ থেকে দেশবাসী ও সিটিনিউজবিডি’র পাঠক -সুভাকাঙ্খী, সাংবাদিক ও কর্মচারীদের আমার অভিনন্দন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.