চন্দনাইশে চার মাসে ৪৪ ঘটনায় আহত ১২৯

0

নিজস্ব সংবাদদাতা, চন্দনাইশ : চন্দনাইশে হঠাৎ করে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটেছে। প্রতিটি এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে মারামারি ও হানাহানির ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। চারমাসে ৪৪টি ঘটনায় ১শ ২৯ জন আহত হয়। ২ জন ছিনতাইয়ের শিকার, ১টি অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার, ১ কিশোরীর আত্মহত্যা, ৬ ডাকাত আটক। ইতিপূর্বে তিনমাসের মাথায় বদলী হয়েছেন অফিসার ইনচার্জ গাজী সাখাওয়াত হোসেন।

তথ্য সূত্রমতে জানা যায়, গত ৮ জুন থেকে গত ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত চারমাসে ২টি ছিনতাইয়ের ঘটনায় ৪ লক্ষ টাকা ছিনতাই, বিভিন্ন এলাকায় ৪৪টি ঘটনায় ১শ ২৯ জন আহত হয়েছে। এ সকল ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলার পাশাপাশি অজ্ঞাত কারণে মামলা না হওয়ায় ঘটনা দিন দিন বেড়ে চলেছে বলে অভিমত ভুক্তভোগীদের।
জানা যায়, গত ৮ জুন চলাচলের পথের বিরোধকে কেন্দ্র করে ছৈয়দাবাদে উভয়পক্ষের ৮ জন আহত হয়। ২১ জুন বরমাতে আ’লীগ নেতা সোলায়মানকে মারধর করে আহত করে দুস্কৃতিকারীরা। ৩০ জুন দুপুরে বরকল ঘুর্ণিঝড় আশ্রয়ন কেন্দ্র সড়কে দিন দুপুরে ব্যবসায়ী জাফরুল হককে মারধর করে আড়াই লক্ষ টাকা ছিনতাই করে। ৭ জুলাই বৈলতলী জাফরাবাদে ঈদের দিন নামাজ পড়ার তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৭ জন আহত হয়। ১০ জুলাই কানাইমাদারী ইউসুফ মোল্লার বাড়ীতে অতর্কিত হামলায় ২ মহিলাসহ ৪ জন আহত হয়। ২০ জুলাই পৌরসভার নয়াহাট এলাকায় সীমানা বিরোধকে কেন্দ্র করে ২ মহিলাসহ ৭ জন আহত হয়।

২২ জুলাই দোহাজারী আবাহনী ক্লাবে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে দুস্কৃতিকারীরা। ২৩ জুলাই উত্তর হাশিমপুর ছৈয়দাবাদে তুচ্ছ ঘটনায় মারামারিতে ২ জন আহত হয়। একই দিন জাফরাবাদ মাদরাসার অধ্যক্ষ কর্তৃক শিক্ষার্থীকে মারধর করায় এলাকায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ২৪ জুলাই মধ্যম হাশিমপুরে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র ১ মহিলাসহ ৪ জন আহত হয়। ২৫ জুলাই গাছবাড়ীয়া খানহাট এলাকায় ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটির সাথে পদ বঞ্চিতদের সংঘর্ষে ৩ জন আহত হয়। ২৭ জুলাই রাতে দোহাজারী নাথপাড়া এলাকায় ৩ জন মিলে এক কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণ করায় আদালতে মামলা হয়। ৩০ জুলাই হাশিমপুর মসজিদ মার্কেট এলাকায় কলেজ ছাত্র টমাসকে মারধর করা হয়। ৪ আগস্ট পৌরসভা এলাকায় চালক সাঈদুর রহমানকে মারধর করে টাকা ছিনতাই করে।

একই দিন বাগিচাহাট এলাকায় যুবলীগ নেতা সুমন কান্তিকে মারধর করে আহত করে। ৬ আগস্ট ভোরে বরমাতে ৩ চোরকে স্থানীয়রা গণধোলাই দেয়। ১৭ আগস্ট গাছবাড়ীয়া কলেজ গেইট এলাকায় কলেজ ছাত্রলীগ নেতা তুষারকে মারধর করে আহত করে। ১৮ আগস্ট কানাইমাদারীতে মেহেদী অনুষ্ঠানে মারামারিতে ২ জন আহত হয়। ১৯ আগস্ট জোয়ারা এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ৬ ডাকাতকে আটক করেছে পুলিশ। ২০ আগস্ট দোহাজারী কিল্লাপাড়ায় জমি বিরোধকে কেন্দ্র করে মারামারিতে ৩ জন আহত হয়। ২২ আগস্ট বৈলতলীতে জমি বিরোধকে কেন্দ্র করে ২ মহিলাসহ ৪ জন আহত হয়। ২৯ আগস্ট সকালে চন্দনাইশ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ড্রেন থেকে এক অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। ৩১ আগস্ট সাতবাড়ীয়া মোজাহের পাড়ায় জমি বিরোধকে কেন্দ্র করে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ২ সেপ্টেম্বর ছৈয়দাবাদ এলাকায় মসজিদ কমিটির বিরোধকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে ৫ জন আহত হয়।

৩ সেপ্টেম্বর সাতবাড়ীয়ায় পুকুরে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে মা-ছেলেসহ ৩ জন আহত হয়। ৫ সেপ্টেম্বর পৌর এলাকার এক শিক্ষার্থীর ছবি বিকৃতভাবে ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ায় ২ জনকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয়রা। ৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে জামিরজুরী এলাকায় এলোপাতাড়ি মারধর করে টাকা ছিনতাই ও মারামারিতে ১ জন আহত হয়। ৮ সেপ্টেম্বর জামিরজুরীতে জায়গার বিরোধকে কেন্দ্র করে মহিলাসহ ৭ জন আহত হয়। ১০ সেপ্টেম্বর গাছবাড়ীয়া কলেজ গেইট এলাকায় টেক্সী চালকের প্রহারে ১ জন আহত হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর পৌরসভার দক্ষিণ জোয়ারা বড় পাড়াতে সন্ত্রাসী হামলায় ১০টি ঘর ভাংচুর, লুটপাট, সংঘর্ষে মহিলাসহ ৯ জন আহত হয়। ১৮ সেপ্টেম্বর হাছনদন্ডীতে আ’লীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষে ২ জন আহত হয়। একই দিন দোহাজারীতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুইপক্ষ মুখোমুখি সংঘর্ষে ৮ জন আহত হয়। ১৯ সেপ্টেম্বর বরমা বাতাজুরীতে প্রধান শিক্ষক কর্তৃক ৩ শিক্ষার্থীকে প্রহার করায় মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল জব্বারের যোগদানকে কেন্দ্র করে খানহাটে সংঘর্ষে ২ জন আহত হয়।

একই দিন গভীর রাতে দোহাজারী এলাকায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। ২৪ সেপ্টেম্বর বরমাতে এতিমখানার ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনকালে আ’লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে মহিলাসহ ৩ জন আহত হয়। ২৭ সেপ্টেম্বর প্রেমঘটিত কারণে হারলা নয়াহাটে মারামারিতে ২ জন আহত হয়। ২৯ সেপ্টেম্বর চৌধুরী পাড়ায় সালিশী বৈঠকে হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে সংঘর্ষে মহিলা সহ ৭ জন আহত হয়। একই দিন দোহাজারী দিয়াকুলে এক অন্তঃস্বত্বা মহিলাকে মারধর করে আহত করেছে প্রতিবেশী। একই দিন চাগাচরে তুচ্ছ ঘটনায় উভয়পক্ষের ৮ জন আহত হয়। ৩১ সেপ্টেম্বর মুরাদাবাদে সীমানায় ড্রেন নির্মাণকে কেন্দ্র করে ব্যাপক ভাংচুর, লুটপাট, মহিলা ও শিশু সহ ৫ জন আহত হয়। ৪ অক্টোবর কানাইমাদারী এলাকায় পুকুরের টাকা ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে ২ সহোদর আহত হয়। ৯ অক্টোবর জামিরজুরী ফাজিল মাদরাসায় শিক্ষার্থীদের উপর দুস্কৃতিকারীর হামলায় ১ শিক্ষক ও ৫ শিক্ষার্থী আহত হয়। ১১ অক্টোবর ৪১লর্ট এলাহাবাদে ১৬ বছরের কিশোরী গলায় ওড়না পেছিয়ে আত্মহত্যা করে। ১৪ অক্টোবর কাঞ্চননগর রওশনহাট এলাকায় দেড় লক্ষ টাকা ছিনতাই ও দুই সহোদরকে মারধর করে আহত করেছে ছিনতাইকারীরা।

বর্তমান থানা অফিসার ইনচার্জ শেখ নেয়ামত উল্লাহ গত ২৫ মে যোগদান করার তিনদিন পূর্বে ২২ মে গলা কেটে হত্যা করা হয় হাজীর পাড়ার নাছিরকে। সে মামলার মূল আসামীকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি। তাছাড়া তিনি আসার পর থেকে মামলা নিতে অতিরিক্ত টাকা দাবী করার কারণে মামলা করতে পারছেন না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। ফলে চন্দনাইশে মারামারির ঘটনা দিন দিন বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। শুধু তাই নয় ছোট-খাটো বিষয়ে কাউকে পুলিশ গ্রেফতার করলে, ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে বের হতে হয়। তারই প্রমান হিসেবে উপজেলা আ’লীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীরের খালাতো ভাইকে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে ছাড়া হয়েছে। একইভাবে দূর্গাপূজার দিন ৩ জনকে আটক করে ৫১ হাজার টাকার বিনিময়ে ছাড়ার অভিযোগ উঠেছে। ফলে দিন দিন চন্দনাইশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.