মো. দেলোয়ার হোসেন, চন্দনাইশ : প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও চন্দনাইশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপকভাবে আখের চাষ করা হয়েছে। ফলন হয়েছেও বেশ ভালো, দামও প্রচুর। ফলে আখ চাষীরা বেজায় খুশি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আখের রস মানবদেহের শরীরে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সহায়ক হিসেবে কাজ করে থাকে। তাছাড়া রক্তকণিকা স্বচ্ছ করে। তাই মানুষ আখের রস মিষ্টি পানীয় ও শরীরে উপকার হিসেবে পান করে থাকে। চন্দনাইশে উৎপাদিত আখ চট্টগ্রামের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়। উপজেলার শঙ্খ তীরবর্তী বৈলতলী, জাফরাবাদ, চাগাচর, সাতবাড়ীয়া, হাছনদন্ডী, বরমা, লালুটিয়া ও পাহাড়ি এলাকা দোহাজারী, হাশিমপুর, কাঞ্চননগর সহ বিভিন্ন এলাকায় আখের চাষ হয়ে থাকে। বিশেষ করে শঙ্খনদীর পাড় ঘেঁষে বিশাল এলাকায় আখের চাষ ভালো হয়। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থানায় বন্যা না হওয়ায় এসব এলাকায় প্রচুর আখের চাষ হয়েছে, ফলনও ভালো হয়েছে বলে জানালেন কৃষকেরা। দাম ভালো থাকায় কৃষকের মুখে হাসির আভা।
আখ চাষী মোবারক জানালেন, মাত্র ছয়মাস আগে এক কানি জমিতে ৪০ হাজার টাকা খরচ করে আখ চাষ করেছে। এখন খরচ বাদ দিয়ে তার এখন দ্বিগুণ টাকায় চাচ্ছে ক্রেতারা।
হাছনদন্ডীর কৃষক আবুল কালাম বললেন, ২৫ হাজার টাকা খরচ করে সে যে আখ চাষ করেছে, তা এখন ৯০ হাজার টাকায় চাচ্ছে। একই এলাকার জাফর ৭৫ হাজার টাকা করে আখ চাষ করেছে, তা এখন ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে। চলতি মৌসুমে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ভালো ফলন হয়েছে, দামও ভালো পেয়েছে। তাই তারা এখন বেশ খুশি। তাদের মতে আখ চাষে খুব সময় বেশি লাগে না। এছাড়া তেমন কোন সারেরও প্রয়োজন হয় না। আগাছা পরিস্কার করে বিভিন্ন প্রজাতির পোকা থেকে বাঁচিয়ে রাখতে হয় আখকে। রাত্রীবেলায় শিয়াল সহ বিভিন্ন পশু আখের রসের জন্য হামলা চালায়। এ জন্য রাত্রীবেলা পাহারা বসাতে হয়।
আখ চাষী জমির আহমদ জানালেন, চন্দনাইশের আখের চাহিদা সারা দেশে। কারণ এ এলাকার মাটি আখ চাষের উপযোগী। তাছাড়া এ এলাকার আখের রস খুবই সুস্বাদু। আখ থেকে গুড় তৈরি করা যায় বলে আখের চাহিদা রয়েছে প্রচুর। সাধারণ মানুষ জন্ডিস রোগের পথ্য হিসেবে আখের রস পান করে থাকেন।
তারা আরো বলেন, কোন রকম প্রশিক্ষণ ও সাহায্য-সহযোগিতা ছাড়াই তাদের পূর্ব পুরুষের ন্যায় তারা আখ চাষ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ ও কম সুদে ঋণ পেলে আখ চাষে আরও এগিয়ে আসবে চাষীরা। এ ব্যাপারে তারা যথাযথ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। এ ব্যাপারে কৃষি কর্মকর্তা লোকমান হোসেন মজুমদার বলেছেন, আবহাওয়া অনকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে, দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। তাই কৃষকেরা খুবই খুশি। চলতি মৌসুমে আখ চাষের জন্য ১শ ৮৫ হেক্টর জমিতে আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত থাকলেও তা অতিক্রম করে ১৯০ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।